২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ে ১৬% প্রবৃদ্ধি

“দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগান চলতি অর্থবছরেও আমরা দিতে পারব বলে আশা করছি,” বলেন মইনুল খান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2023, 12:14 PM
Updated : 27 July 2023, 12:14 PM

বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেই বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ রাজস্ব আদায় করার কথা জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত অর্থবছরে শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা আদায় করা গেছে। মূসক খাতে এই আদায় ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। সেবছর আহরণ হয়েছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে এনবিআরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসক খাত থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা ছিল।

তবে অন্য দুই খাত আয়কর ও শুল্ক খাতের কর্মকর্তাদের কাছে চূড়ান্ত আদায়ের বিষয়ে জানতে চেয়ে সাড়া মেলেনি।

জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (মুসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মইনুল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরে সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা সঠিকভাবে অর্জন করতে পারছি বলে আমরা মনে করি। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগান চলতি অর্থবছরেও আমরা দিতে পারব বলে আশা করছি। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তারাও সচেষ্ট আছেন।”

গত অর্থবছরে মূসক খাতে আহরণ হওয়া ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকার মধ্যে কেবল শেষ মাস জুনেই আদায় করেছে ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। তার আগের বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। শেষ মাসের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এনবিআরের ভ্যাট উইংয়ের মাঠ পর্যায়ে ১২টি কমিশনারেট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চট্টগ্রাম, ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। খুলনায় এই হার ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ঢাকা দক্ষিণে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

সর্বোচ্চ ভ্যাট আহরণ করেছে এলটিইউ (লার্জ ট্যাক্স ইউনিট) ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেটে মোট আহরণ হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।

মূসক খাতের এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছর জুড়ে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি পণ্য বিশেষ করে ভোজ্যতেলসহ বেশ কিছু খাদ্য পণ্যে মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আবার অর্থবছর জুড়েই সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশ কিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি। এছাড়াও অনেক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

এসব চ্যালেঞ্জের পরও ভ্যাটে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন তিনি।

যেভাবে এল প্রবৃদ্ধি

মোটাদাগে তিন কারণে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। তার চোখে প্রথম কারণ- এনবিআর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা।

দ্বিতীয়ত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ-উৎপাদনসহ হালনাগাদকরণ জোরদার এবং তৃতীয়ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়েছে সিগারেট থেকে। এই খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

আরও কয়েকটি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার মধ্যে আছে- এমএস রড ৫৮ শতাংশ, কোমল পানীয়তে ৩১ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক ভবন ভাড়ায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া পেট্রোবাংলার গ্যাসে ২২ শতাংশ এবং বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্যে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তদারকি বাড়িয়ে কয়েকটি খাতে ভ্যাট উইং সফলতা পেয়েছে। যার মধ্যে মিষ্টি বিপণন ও বাজারজাত খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ, আবাসিক হোটেলে হয়েছে ৩৯ শতাংশ।

এর বাইরে রেস্তোরাঁয় ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

ইটভাটার ভ্যাট আদায়ে মাঠ কর্মকর্তারা তৎপর ছিলেন। যার ফলে অধিকাংশ ভ্যাট অফিস শতভাগ ভ্যাট আদায় করেছে বলেও জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।