ব্যবসায়ীদের তরফে পণ্য শুল্কায়ন বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক অভিযোগের উত্তরে তিনি এমন কথা বলেন।
Published : 04 Mar 2025, 07:46 PM
প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীরা মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করায় কাস্টমস সংক্রান্ত অনেক জটিলতার সমাধান করা যাচ্ছে না বলে তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
ব্যবসায়ীদের তরফে পণ্য শুল্কায়ন বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক অভিযোগের উত্তরে তিনি এমন কথা বলেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এমসিসিআই ও এফআইসিসিআইয়ের সঙ্গে এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
বিদেশ থেকে কম দামে আমদানি করলেও খালাসের সময় ’ইনভয়েস’ (পণ্যসহ আমদানি মূল্যের তালিকা) থাকা দাম বাদ দিয়ে নিজেদের মত করে কাস্টমস কর্মকর্তারা মূল্যায়ন করে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
এর জবাবে সরকার পতনের পর দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থার দায়িত্বে আসা আবদুর রহমান বলেন, “কাস্টমস কর্মকর্তারা যখন হরহামেশাই দেখছে যে ব্যবসায়ীরা মিথ্যা ঘোষণায় মাল আনছে, তখন তার ট্রেনিংই হল সন্দেহ করা।
“তাদের ট্রেনিংই হচ্ছে তোমাকে সন্দেহ করতে হবে যে ঠিক মত ডিক্লারেশন (মূল্য ঘোষণা) দিচ্ছে না। যদি আইডিয়াল সিচুয়েশন থাকত, তাহলে তো যার যার ইনভয়েস অনুযায়ী হত। কিন্তু বাস্তবতা হল এটা না।”
এসময় ব্যবসায়ীদের লেনদেনের সব তথ্য না দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা যতক্ষণ সত্য এবং ন্যায়ের ওপর দাঁড়াইতে না পারব, ততক্ষণ আমাদের এই সমস্যা যাবে না।”
সাম্প্রতিক এক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “যেমন আমি এবার গ্রামে গেলাম, গত উইকেন্ডে। কোথা থেকে কল পাইছে, আমি চিনিও না। সে এসে বলল, আমি প্রথম আনছি মাল। এই হইছে, এইচএসকোড ভুল হইছে। অনেক টাকা ট্যাক্স করতেছে। তো আমি ট্যাক্স দিয়ে দিব। আমাকে যেন জরিমানা না করে।
“জরিমানা তো ২০০ শতাংশ। তাও তার প্রথমবারের মত। দেখলাম এটা তার গুরুতর অপরাধ যে সে যে মাল আনছে আর যে মাল ঘোষণা দিছে, সে বলতেছে সে প্রথম করছে, এই তার প্রথম ইমপোর্ট, প্রথম ইমপোর্টেই যদি, বিসমিল্লাহে যদি এই কাজ করে যে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার মত অবস্থা। প্রবলেমটা হল এই জায়গাতে।”
তার ভাষ্য, “আমাদের ব্যবসায়ীরা, আপনারা সবাই জানেন, দেখা গেল আপনার যা ট্রাঞ্জেকশন হয়, আপনি সব অ্যাকাউন্টসে আনেন না। একটা বড় ফিগার অ্যাকাউন্টসের বাইরে রেখে দেন। এটাও ওরা জানে।
“আবার পুরোটা আনলে যতটা ট্যাক্স আসবে তা বেয়ার করার ক্ষমতা আপনার নাই, তাই ভাবেন একটু সরায়া রাখি। এটাও তারা জানে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা যতক্ষণ সত্য এবং ন্যায়ের ওপর দাঁড়াইতে না পারব, ততক্ষণ আমাদের এই সমস্যা যাবে না।”
নন-কমপ্লায়েন্স এর কস্ট ‘আনবিয়ারেবল’ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কমপ্লায়েন্ট ট্যাক্সপেয়াররা কেন কমপ্লায়েন্ট। কারণ তারা জানে কস্ট অব নন-কমপ্লায়েন্স ইজ আনবিয়ারেবল। একবার যদি সে নন-কমপ্লায়েন্সে পড়ে, এই যেমন এই ইমপোর্টারের কথা বললাম, ও জীবনে ব্যবসা করতে পারবে না। এবং এই মাল আমি নিশ্চিত যে নিলাম হবে। কারণ, যা রেগুলার ডিউটি প্লাস ২০০ শতাংশ জরিমানা, দেন আরও সব কী সব আছে, সবমিলিয়ে যে ট্যাক্স আসবে, কোনদিনই সে মাল নিতে পারবে না।”
নগদ লেনদেনের শর্ত তুলে দেওয়ার প্রস্তাব
দেশে বিগত কয়েক অর্থবছরে করপোরেট করহার কমানো হলেও সেটি পাওয়ার ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের যে শর্ত আছে তা দেশের অনানুষ্ঠানিক খাত বড় হওয়ায় সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করা হয় এফআইসিসিআই ও এমসিসিআইয়ের তরফে।
এফআইসিসিআই বা ফরেন চেম্বারের করবিষয়ক উপদেষ্টা স্নেহাশীষ বড়ুয়া সংগঠনটির তরফে বাজেট প্রস্তাবের উপস্থাপনায় করপোরেট কর কার্যকর হারের ‘অপটিমাইজেশনের জন্য’ নগদ লেনদেনের থ্রেশহোল্ড প্রত্যাহার, উৎসে করের বিধান সংস্কার ও ধাপে ধাপে ন্যূনতম কর বাতিল করার পক্ষে প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, “এই পদক্ষেপগুলো একটি আরো প্রতিযোগিতামূলক কর পরিবেশ তৈরি করবে যা পরে অধিক বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ প্রবাহকে উৎসাহিত করবে।”
এমসিসিআই সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, “বিগত অর্থবছরগুলোতে শর্তসাপেক্ষে করপোরেট করহার ধারাবাহিকভাবে কমানো হলেও, অর্থ আইন অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তাবলীর কারণে কেউই এই সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি ৮০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক, যেখানে ব্যাংকিং নির্ভরতা সম্পূর্ণ নয়। ফলে বড় ও মাঝারি কোম্পানির জন্য এই শর্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন।
“এছাড়া কার্যকরী করহার অতিমাত্রায় উচ্চ, যা উৎসে কর কর্তন ও অননুমোদিত ব্যয়ের ফলে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। করপোরেট করহার বাস্তবিক হারে কমানোর পাশাপাশি, অগ্রিম আয়কর ও টার্নওভার কর নীতির সংস্কার প্রয়োজন, যাতে কর আয়ভিত্তিক হয়, টার্নওভারের উপর নয়।”
এর প্রেক্ষিতে ‘কর প্রশাসনের উন্নয়ন ও স্বয়ংক্রিয় ডিজিটালাইজেশন চালুর মাধ্যমে কর ফাঁকি কমানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাই কোম্পানির করহারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিলের’ প্রস্তাব করেন তিনি।
আলোচনায় এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আখতার, এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিমিন রহমান অংশ নেন।