দেশি ফলের দরও বেশি কেন জানতে চাইলে এক বিক্রেতার পাল্টা প্রশ্ন, “কোন জিনিসটার দাম কম?“
Published : 22 Oct 2024, 09:00 AM
বিদেশি ফলের দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবার বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ১২০ টাকার মত; কিছু ফলের দর চড়েছে আরও বেশি।
আমদানি করা বিভিন্ন ফলের দর বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশি ফলের বাজারেও। প্রয়োজনের তাগিদে ফল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষজন।
ডলারের উচ্চ দর, অতিরিক্ত শুল্ক ও সরবরাহ সংকটের মত কারণের কথাই বলছেন বিক্রেতা ও আমদানিকারকরা। এ কারণেই পাইকারি ও খুচরা ফলের বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিরতা বেশি।
এর জবাবে ক্রেতাদের যুক্তি, ডলারের বিনিময় হার নতুন করে বাড়েনি। এটি দর বাড়ার যথাযথ কারণ নয়। তাদের ধারণ নিত্যপণ্যের দর বাড়ায় ফল ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়েছে।
বনানী কাঁচাবাজারে কথা হয় নূরে আলমের সঙ্গে। পেশায় দিনমজুর পঞ্চাশোর্ধ আলমের স্ত্রী আয়েশা খাতুন জ্বরে আক্রান্ত দুইদিন। স্ত্রীর জন্য কিছু ফল কিনতে চাইলেও উচ্চমূল্যের কারণে পেরে উঠছেন না।
কয়েকটি দোকান ঘুরে বিদেশি আপেল-মাল্টা-আঙুরের দর দেখা শেষে বাজেটে আর কূলাতে পারলেন না। ভ্যান থেকে এক কেজি দেশি মাল্টা ১০০ টাকায় কিনে বাসার পথ ধরেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নূরে আলম বলেন, “ফল এহন বড় লোকের লিগা, আমগো না। আমরা মইরা যাওনের আগেও ফল কিনতে পারুম না।”
বাজারে আমদানি করা ফলের দাম শুরুই হচ্ছে এখন ৩০০ টাকার ওপরে। আঙুর, কমলা, মাল্টা কিংবা আনারের মত বেশির ভাগ বিদেশি ফলের দামই এখন ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার ঘরে।
কেজিপ্রতি কমলা ও আপেল ৩৫০ থেকে ৩৮০, মাল্টা ৩০০, আঙ্গুর ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আনার ৬৫০ থেকে ৭০০, নাশপাতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে ভ্যানে করে বিদেশি ফল বিক্রি করছিলেন মো. সেলিম। তিনি বলেন, “বাইরের সব ফলই ৩০০ এর উপরে। দাম সব জায়গায় সবাই বাড়াইছে। আমরা বাদামতলী থেকে আনি। সেখান থেকে বলল মালের না কি ক্রাইসিস যাচ্ছে কয়েকদিন।“
এ বাজারের মদিনা ফ্রুট গ্যালারির বিক্রেতা মো. সুমন বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই ফলের বাজার চড়া, অন্তত দেড় সপ্তাহ হবে। এর ভেতরে একবার কমছিল। কিন্তু একদিন ধরে (রোববার থেকে) আবার দাম বাড়ছে।
দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে কত টাকা বেড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব ধরনের ফলেই ৫০ থেকে ১০০, ১২০ টাকার মত বেড়েছে।
রাজধানীতে ফলের বড় আড়ত বাদামতলীর জায়েদ এন্টারপ্রাইজের মো. মিলন বলেন, কয়েকদিন আমদানি কম থাকায় সরবরাহ কম। তবে সামনে আমদানি বাড়লে তখন কিছুটা কমতে পারে। ডলারের বাড়তি দর ও অতিরিক্ত শুল্কের কারণে দর কম রাখার সুযোগ নেই।
কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান ফল বিতানের সোহেল রানাও একই তথ্য দিলেন। বলেন, পণ্যের সরবরাহ কম। বন্দরে নতুন পণ্য না এলে সামনে দামে এর প্রভাব পড়বে।
এ দোকান থেকে ৫ কেজি দক্ষিণ আফ্রিকার কমলা ৩৮০ করে প্রতি কেজি কিনলেন মো. নাইম ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমি অফিসের জন্য নিচ্ছি এগুলো। দামটা এতো বেশি যে স্বন্দেহের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
ওই দোকানের আরেক কর্মী ফারুক হোসেন বলেন, দেড় সপ্তাহ ধরে ফলের বাজার একটু গরম। তবে মাঝখানে দাম হালকা কমছিল। আবার রোববার থেকে
বাদামতলী আড়তেই দাম বেশি। প্রতি কার্টনেই সব ফলের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকার পর্যন্ত।
বিদেশি ফলের সঙ্গে আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে ও দেশি ড্রাগনের ফলের বাজারও চড়া। ড্রাগনের দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, পেয়ারা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, মাল্টা (দেশি) ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে এবং কলা (ডজন) ১০০ থেকে ১২০ টাকা, জাম্বুরা ১০০ থেকে ১১০ টাকা ও আনারস আকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দেশি ফলের দরও বেশি কেন জানতে চাইলে বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, কোন জিনিসটার দাম কম? অন্য দেশ থেকে আনা ফলের দামেও তো আগুন। খালি দেশি ফল ফ্রি খাইতে চান? সবকিছুর দাম বেশি,তাই দেশি ফলের দামও বেশি।
“আমি যে বেশি দামে বেচি ঘটনা এটা না। আমি কিনছিই বেশি দামে।”