চীনা খামারিদের অনুকরণে গোলাপ কুঁড়িতে ‘রোজক্যাপ’ বা আচ্ছাদন পরিয়ে দারুণ সাফল্য পাচ্ছেন যশোরের গদখালির ফুলচাষিরা।
Published : 16 Nov 2014, 11:36 AM
যে গোলাপের দাম আগে ছিল মাত্র দুই টাকা, এখন তা তারা বিক্রি করতে পারছেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়।
চাষিরা বলছেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও এই ফুল রপ্তানি সম্ভব।
যশোরের গদখালি ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোজক্যাপ স্থিতিস্থাপকতা গুণ সম্পন্ন প্লাস্টিকের এক ধরনের ক্যাপ। গাছে গোলাপের কুঁড়ি হলে পোকামাকড়ের উপদ্রব আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ক্যাপটি কুঁড়িতে পরিয়ে দেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে তা উন্নতমানের পূর্ণাঙ্গ গোলাপ হিসাবে প্রস্ফুটিত হয়।
এই ক্যাপ বাবদ মাত্র ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা খরচ পড়ে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এই আব্দুর রহিম। ২০১২ সালে চীনে গিয়ে সন্ধান পান এই আচ্ছাদনের, যার আদ্যোপান্ত জেনে নিজের দেশে তা ব্যবহারের বিষয়ে উদ্যোগী হন।
আব্দুর রহিম জানান, কুঁড়িতে ক্যাপ ব্যবহারের বিষয়টি ফুলচাষিদের জানা ছিল না। তিনি প্রথমে নমুনা হিসেবে চীন থেকে কিছু ক্যাপ নিয়ে আসেন। পরে তা ব্যবহার করে শতভাগ সুফল পান ঝিকরগাছার গদখালি ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদস্যরা।
২৮ বছর ধরে ফুল চাষ করছেন ‘সরদার নার্সারির’ মালিক রুস্তম আলি।
ফুলের ক্যাপের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই ক্যাপ ব্যবহার করে ভালোই লাভ হচ্ছে। আগে যে ফুল ফুটতো সেগুলো প্রতিটি বিক্রি হতো দুই টাকায়। এখন একই ফুল এত উন্নতমানের হচ্ছে যে দাম ১৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
তিনি বলেন, “এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানে আগের চেয়ে বেশি ফুল হয়েছে। ফুল বেচে চার-পাঁচ লাখ টাকা ঘরে আনতে পারব বলে আশা করছি। রোজক্যাপ আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে।”
ঝিকরগাছার হাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান কবির বলেন, প্রথম অবস্থায় ক্যাপের আমদানি না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছিল না। বর্তমানে আমদানি হওয়াতে ক্যাপ এখন সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে সমুদ্রপথে রোজক্যাপ আমদানির অনুমোদন দিলে ফুলচাষিরা অনেক কম মূল্যে এটি কিনতে পারবেন।
গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিউলাস ও জারবেরা ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দোহার, কাতার, বাহারাইন, সৌদি আরব এবং থাইল্যান্ড, মালায়েশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
সরকারি সহযোগিতা পেলে বিশ্বের ফুলের বাজার বাংলাদেশের দখলে আনা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের সূচনা হয় ১৯৮৩ সালে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের ফুল বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশের ১০০ কোটি ডলারের ফুলের বাজার প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বদ্ধি পাচ্ছে।