অ্যাকাউন্ট খোলা সহজ করে মাত্র আড়াই বছরে পাঁচ কোটি মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত করা নগদ এখন দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ‘আর্থিক সেবার আওতায়’ আনার লক্ষ্য ধরে কাজ করছে।
Published : 20 Dec 2021, 07:24 PM
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির এ মিশুক বলছেন, গত আড়াই বছরের সাফল্যই তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছে।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমে নাম লেখানো ‘নগদ’ এখন পাঁচ কোটি নিবন্ধিত গ্রাহকের কোম্পানি।
সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নগদের বর্তমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন শুরু থেকে এ কোম্পানির নেতৃত্ব দিয়ে আসা মিশুক।
তিনি বলেন, গত বছরও (২০২০ সাল) কেউ চিন্তা করেনি, ‘নগদ’ এ পাঁচ কোটি মানুষ লেনদেন করবে।
“এখন চিন্তা করছি, যারা আর্থিক সেবার বাইরে আছে, তাদেরকে এর আওতায় আনতে,” যোগ করেন নগদের এমডি।
তার দাবি, নগদ এর চালু করা ‘ডিজিটাল কেওআইসি’ (আপনার গ্রাহককে জানুন) শুধু দেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) খাতে নয়, আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনের পথও সুগম করেছে।
আর এ বিষয়টিকে নগদের আড়াই বছরের পথচলায় কোম্পানির ‘উল্লেখযোগ্য সাফল্য’ হিসেবে দেখছেন তিনি।
এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি, করোনাভাইরাসের সময় লকডাউনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে দেওয়া উপহারের মধ্যে কিছু পরিবারকে দুই দফায় ভাতা বিতরণ করেছে নগদ।
লকডাউনকালে কৃষক, মোটর শ্রমিক, মৎস্য চাষীদের মাঝেও সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে এই এমএফএস।
আড়াই বছরের কার্যক্রমে শুধু গ্রাহক বাড়াতে নয়, গ্রাহকের খরচ কমিয়ে সেবা সহজ করার জন্য নগদ কীভাবে কাজ করেছে, সে কথাও তুলে ধরেন এমডি মিশুক।
তার ভাষায়, নগদ এর চালু করা ডিজিটাল কেওআইসি, *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রমে ‘বড় পদক্ষেপ’।
মোবাইলে আর্থিক সেবায় প্রযুক্তিগত এমন সব সুবিধা কাজে লাগিয়ে নগদ কীভাবে দ্রুত এ খাতে জায়গা করে নিয়েছে সাক্ষাৎকারে সেই প্রেক্ষাপট ও উদ্ভাবনের বর্ণনা দেন তিনি।
মিশুক বলেন, নগদ এর নতুন প্রযুক্তিগত এক কৌশলেই এক ধাক্কায় দেশের ৯ শতাংশ মানুষ মোবাইলে আর্থিক সেবার আওতায় চলে আসে।
“২০১৯ সালের ২৬ মার্চ আমরা যখন সেবা নিয়ে আসি, তখন মাত্র ৩৩ শতাংশ জনগণ আনুষ্ঠানিক এ চ্যানেলে লেনদেন করতেন। বাকি লেনদেনের পুরোটা হত নগদ টাকায়।”
সে সময় অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা অনেক ‘জটিল’ ছিল মন্তব্য করে নগদ এর এমডি বলেন, তখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে হলে ১০ পাতার ফর্ম পূরণ করতে হত অথবা মোবাইলে আর্থিক সেবা পেতে হলে দুই পাতার ফর্ম পূরণ করতে হত।
“অ্যাকাউন্ট খোলার ভয়ে মানুষ আর্থিক সেবার মধ্যে আসত না। আর তাদের সেই লেনদেনও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির মধ্যে আসত না।“
এ সেবা চালুর পর তা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দাবি করে মিশুক বলেন, “এই একটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তনেই ৩৩ শতাংশ থেকে এক লাফে ৪২ শতাংশ জনগণ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের লেনদেনে চলে আসে।“
এরপর নগদ এর দ্বিতীয় আরেকটি কৌশল নেওয়ার কথা জানান মিশুক, যাতে মাত্র দুই বছরের মাথায় পাঁচ কোটি মানুষকে মোবাইল আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এমএফএস কোম্পানিটি।
“২০১৯ সালের শেষের দিকে আরেকটি বাধা দেখতে পাই। আমরা দেখতে পাই যে, একটা জায়গায় গিয়ে আটকে গেছে (অ্যাকাউন্ট খোলার কার্যক্রম); আর যাচ্ছে না। ছবি তুলেই অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে- তারপরও কেন হচ্ছে না। আমরা গবেষণা করে দেখলাম দেশে ৭০ শতাংশ মানুষের কাছে স্মার্টফোন নেই।
“আমরা চিন্তায় পরে গেলাম যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যার সমাধান কীভাবে করব। তিনি তো ছবি তুলতে পারবেন না। এরপর বিষয়টিকে এত সহজ করে দিলাম।“
“যাদের স্মার্টফোন নেই, তারা একটি নম্বরে ডায়াল করবে। আমরা মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে তাদের তথ্য নিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দেব। সব কাজ করে অ্যাকাউন্ট মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে খুলে দেওয়া শুরু করা হয়।”
এ দুটি পদক্ষেপে এমএফএস খাতে ‘বিপ্লব দেখতে’ পাওয়ার কথা জানিয়ে মিশুক বলেন, “আমরা দেখতে পাই দুই বছরের মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষ নগদ ব্যবহার শুরু করেছে। যারা কখনও চিন্তা করে নাই আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে লেনদেন করবেন, তারা নগদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে চলে এসেছেন।”
আর্থিক অর্ন্তভুক্তিতে এত বড় উল্লম্ফনের পরও দেশের অনেক মানুষ এখনও এর বাইরে রয়ে গেছে। তাদেরও এ সেবার আওতায় আনতে নগদ নতুন সেবা নিয়ে কাজ করবে বলে জানান তানভির এ মিশুক।
এমএফএসে নগদের বর্তমান অবস্থা ‘শক্তিশালী’ হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, নতুন নতুন উদ্ভাবনের কারণেই বাজার অংশীদারিত্বে নগদের প্রসার ঘটছে।
“যখন খরচ অনেক কমিয়ে দিলাম, তখন মানুষ আমাদের দিকে আসা শুরু করে। এখন আমাদের প্রায় ৩০ শতাংশের উপরে মার্কেট শেয়ার আছে।”