কিউকম সিইও রিপন মিয়া গ্রেপ্তার

প্রতারণার অভিযোগে গ্রাহকের করা মামলায় ই-কমার্স কোম্পানি কিউকমের সিইও রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জ্যেন্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 07:58 AM
Updated : 4 Oct 2021, 08:00 AM

রোববার রাতে ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মোটরসাইকেল কেনার জন্য টাকা দেওয়ার পরও ঠিক সময়ে তা না পাওয়ায় একজন ক্রেতা রোববার পল্টন থানায় কিউকমের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ওই মামলায় প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে।

দেশে ই কমার্সের ব্যবসা বেশ কয়েক বছর ধরেই বাড়ছিল, এর মধ্যে মহামারী শুরু হলে নতুন নতুন বেশ কিছু কোম্পানি রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে, এর মধ্যে কিউকম একটি।

বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে এসব কোম্পানি লাখ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে এখন।

অনেকে কম দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বিক্রির আশায় এসব কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকার অর্ডার করেছেন। কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, কোম্পানি তাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।

এসব ঘটনায় ইভ্যালি, ই অরেঞ্জসহ বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এসব কোম্পানির উদ্যোক্তদের অনেকেই ইতোমধ্যে হয় দেশ ছেড়েছেন, না হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার বা নজরদারিতে আছেন।

কিউকমের সিইও রিপন মিয়া

হাফিজ আক্তার বলেন, “অনেক ক্রেতা কিউকমে মালামাল অর্ডার করে পণ্য না পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিপন মিয়া বলেছেন, কিউকম লক্ষাধিক পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য কিউকম 'বিজয় আওয়ার', 'স্বাধীনতা আওয়ার' 'বিগ বিলিয়ন' নামে বিভিন্ন অফারে অনেক কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিত। অগ্রিম টাকা নিয়ে ২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাহককে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিত তরা।

১ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মোটরসাইকেল ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দেওয়ার প্রলোভনে ক্রেতারা নগদ টাকা পরিশোধ করে পণ্যের অর্ডার করতেন। কিন্তু সময়মত সরবরাহ না পেয়ে যোগাযোগ করলে কিউকম তাদের লাভ দিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দিত। অনেক ক্রেতা কিউকমের কাছ থেকে সেই চেক পেলেও টাকা আর ফেরত পাননি।

হাফিজ আক্তার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন মাসে 'এসক্রো সিস্টেম' চালু করে। ‘এসক্রো সার্ভিসে’ দুই পক্ষের লেনদেনের সময় তৃতীয় পক্ষের কাছে অর্থ বা সম্পদ জমা রাখতে হয়। পণ্য বা সেবা বুঝে পাওয়ার পরই কেবল তার মূল্য পান বিক্রেতা।

এ ব্যবস্থায় ক্রেতা পণ্যের দাম অগ্রিম দিলে তা চলে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে। কিউকম এর পেমেন্ট গেটওয়ে ছিল ফস্টার। কিউকম ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দিয়ে চালানসহ নথিপত্র ফস্টারের কাছে জমা দিত। ফস্টার তখন ক্রেতাকে ফোন করে নিশ্চিত হত তিনি টাকা বুঝে পেয়েছেন কি না। এরপর কিউকম পণ্যের টাকা বুঝে পেত।

কিন্তু কিউকম গ্রাহকের পণ্য ঠিকমত বুঝিয়ে না দেওয়ায় ফস্টার বাংলাদেশ ব্যাংকের 'প্রুফ অব ডেলিভারি' নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের টাকা আটকে দেয়। ফলে ক্রেতা পণ্য বা টাকা কোনোটাই আর পায়নি।

রিপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার পণ্যের ডেলিভারিতে আটকে থাকার তথ্য মিলেছে বলে জানান হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, দশ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের কথা বলা হলেও তিন-চার মাস পরও পণ্য না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে কিউকমের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন