নতুন ই-কমার্স কোম্পানির ‘প্রচার’ নিয়ে সতর্ক করলেন প্রতিমন্ত্রী

বেশ কয়েকটি ই-কমার্স কোম্পানির ‘প্রতারণা’ নিয়ে আলোচনার মধ্যে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের ‘প্রচারে’ অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী এবং শুভেচ্ছা দূতদের সতর্ক থাকতে বললেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2021, 12:51 PM
Updated : 29 Sept 2021, 12:51 PM

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংগঠনটির মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন।

এক প্রশ্নের সূত্র ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনি যেটা বলেছেন যে, যে কোনো বিজনেস বা স্টার্টআপকে প্রমোট করার আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা মন্ত্রী বা কোনো একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, তাদের সাবধান হওয়ার দরকার আছে কি-না?

“নিশ্চিতভাবে সাবধান হওয়ার দরকার আছে। আমাদের সাবধান হওয়ার দরকার আছে।”

ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানির ‘সুনাম’ করার ক্ষেত্রে সতর্ক না হওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে রয়েছেন কয়েকজন এমপি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।

উচ্চমাত্রায় ‘ছাড়’ এবং ‘অফারের’ মাধ্যমে দায় বাড়ানোর কারণে ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যখন তদন্ত চলছিল, তখনও সেই ‘ই-কমার্স’ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ‘উচ্ছ্বাস’ প্রকাশ করায় অনেকেই সমালোচনা করেছেন।

‘আলিবাবা’, ‘ই-বে’ এবং ‘অ্যামাজনের’ মতো প্রতিষ্ঠানও শুরুর দিকে ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করলেও পরে সেটা সমন্বয় করেছিল বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী পলক ।

তিনি বলেন, “অবিশ্বাস্য রকম মুনাফা দেওয়ার যে আশ্বাস, যেখানে বড় ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল, তারা টাইমিংটা ঠিকমত করতে পারেনি।

“আর যাদের উদ্দেশ্য গোড়াতে গলদ ছিল- আমরা টাকা পাব, এটা নিয়ে পালায়ে যাব, এটাও কিন্তু আছে।”

যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে নতুন বিষয়কে উৎসাহিত করার কথা তুলে ধরে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যখনই কোনো নতুন বিষয় হয়, আমরা চেষ্টা করি বাংলাদেশকে একটা ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ ইকোনমিতে নিয়ে যেতে।

“যদি আপনি ডিজিটাল ইকোনমিকে প্রমোট করতে চান, সিলিকন ভ্যালিতো আমাদের সামনে বড় উদাহরণ। তারা ৬০ বছরে এই অবস্থানে গিয়েছে।”

তবে এ খাতে কিছু ‘নীতিমালা’ এবং ‘আইনের’ প্রয়োজন জানিয়ে পলক বলেন, “সরকারের যেটা দায়িত্ব, সেটা হচ্ছে যে রেগুলেটাররা আছেন, তাদের আসলে কিছু নীতি, কিছু কৌশল ও কিছু আইন প্রয়োগ করার দরকার আছে। আমরা আইসিটি বিভাগ থেকে চেষ্টা করি, প্রথমে কোনো স্টার্টআপ এলে কৌশলপত্র নির্ধারণ করার।”

এক্ষেত্রে কয়েক বছর আগে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নিয়ে নীতিমালা ও কৌশলপত্র তৈরি করার উদাহরণ টানেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা কাউকে আসতে বাধা দিই নাই। কৌশলপত্র তৈরি করেছি, নীতিমালা করেছি, সেটা বিআরটিএর মাধ্যমে মন্ত্রিসভায় গিয়ে একটা জায়গায় গিয়েছে, এখন সংশোধন হচ্ছে, পরিমার্জন হচ্ছে।”

২০১৮ সালে ই-কমার্স নিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নীতিমালা করা হলেও সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে থাকার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “আমরা ২০১৮ সালে একটা পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নীতিমালা করে মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করি। যখন মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দেয় যে, এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের, যেহেতু রুলস অব বিজনেস। সুতরাং আমাদের কাছে কিন্তু রাখেনি। তখন এটা কিন্তু মন্ত্রিসভা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়ে দেয়।”

“এটাকে হালনাগাদ করা, রেগুলেটর স্থাপন করা, আমরা কিন্তু ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় দিয়ে দিয়েছি। ২০২০ সালে এসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এটা সংশোধন করেছে।”

ই-কমার্সে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ‘এসক্রো সার্ভিস’ বাধ্যতামূলক করার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

‘এসক্রো সার্ভিসে’ দুই পক্ষের লেনদেনের সময় তৃতীয় পক্ষের কাছে অর্থ বা সম্পদ জমা রাখতে হয়। পণ্য বা সেবা বুঝে পাওয়ার পরই কেবল তার মূল্য পান বিক্রেতা।

এই সার্ভিসের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রিতে সাফল্য পাওয়া গেছে মন্তব্য করে পলক বলেন, “প্রথমত বিষয় হচ্ছে এসক্রো সার্ভিসটাকে বাধ্যতামূলক করা দরকার। এক্ষেত্রে গাইডলাইন করে দেওয়া, একটা পণ্য মার্কেট প্রাইসের কত শতাংশের নিচে অফার করা যাবে না।

“লাভ কম হতে পারে… যেমন আপনি ফিজিক্যাল শপে যেটা বিক্রি করতেছেন ১০ টাকায়, আপনি ডিজিটাল শপে যেহেতু ওয়্যারহাউজ থেকে যাচ্ছে, আপনার খরচটা কম, সেখানে আপনি ৯ টাকায় বিক্রি করতে পারেন।

“আপনি যদি অনুপাত ঠিক করে দেন যে, বাজারমূল্য থেকে নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজের নিচে দিতে পারবে না। এই রকম কয়েকটা নীতি ঠিক করে দেওয়া।”

পলক বলেন, ই-কমার্সে আর্থিক প্রতারণার চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করার সমাধানও প্রযুক্তি দিয়ে করতে হবে। সেজন্য সরকার ‘ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করছে।

২০২১ সালের মধ্যে এটা চালু করার আশা প্রকাশ করে বলেন, “ইতোমধ্যে ১৩টা ব্যাংক ও একটা এমএফএস বিকাশ জয়েন করেছে, টেস্টিং চলছে। তখন প্রত্যেকটা ট্রানজেকশন কিন্তু অনলাইনে হবে, তখন কিন্তু হিসাব থাকবে, কে কোথায় কত টাকা, ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে লেনদেন করছে।”

ই-কমার্সের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা সমাধান চাই, দায়িত্ব এড়াতে চাই না। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে চাই, ডিআরইউ এক্ষেত্রে একটা গোলটেবিলের আয়োজন করতে পারে।”

অনুষ্ঠানে ডিআরইউ সদস্যদের জন্যে মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী পলকসহ উপস্থিত অতিথিরা।

এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যদের বার্ষিক ও কল্যাণ তহবিলের চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। অ্যাপে পাওয়া যাবে সংগঠনের সকল সদস্যদের মোবাইল নম্বর। পাওয়া যাবে আরও বেশ কিছু সেবা।

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠেনর সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।

আরও পড়ুন