গ্রাহকের দেনার হিসাব দেয়নি ইভ্যালি

গ্রাহকদের পাওনা টাকার হিসাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিতে ব্যর্থ হয়েছে অনিয়মের অভিযোগে আলোচনায় থাকা ইকমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি।

নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2021, 02:33 PM
Updated : 26 August 2021, 05:05 PM

গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই সংক্রান্ত হিসাবের তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অফিস সময় শেষ হয়ে গেছে। তারা তো কোনো তথ্য জমা দিল না।“

এ বিষয়ে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন। এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে সম্প্রতি ইভ্যালি থেকে বকেয়া বেতন না পাওয়ার পর কয়েকশ কর্মী চাকরি ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এই বিষয়ে কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি।

গণমাধ্যম বিষয়ে দেখাশোনা করেন এমন একজন কর্মী জানান, কয়েকশ কর্মী ইভ্যালি ছেড়েছেন কিনা এ বিষয়ে তার জানা নেই। তবে মাঝে মধ্যে কেউ চাকরি ছাড়েন। আবার অনেক যোগ দেন, এটা নিয়মিত প্রক্রিয়া।

বিস্তারিত জানতে এমডির সঙ্গেই কথা বলতে হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

মন্ত্রণালয়ের প্রশ্ন

গ্রাহকের কয়েকশ কোটি টাকা অগ্রিম হিসেবে নিয়েও মাসের পর মাস পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগ  প্রমাণিত হওয়ার পর গত ১৮ জুলাই ইভ্যালির কাছে ছয়টি বিষয়ে জানতে নোটিস পাঠিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অগাস্টের প্রথম তারিখের মধ্যেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু উত্তর না পেয়ে ১১ অগাস্ট মন্ত্রণালয়ে সভা করার পর আবার তিন দফায় ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্যগুলো জানতে চেয়ে আরেকটি নোটিস দেওয়া হয়।

সেই নোটিসের আলোকে ১৯ অগাস্টের মধ্যে কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের বিবরণ, ২৬ অগাস্টের মধ্যে গ্রাহকের পাওনা ও গ্রাহক সংখ্যা এবং ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্চেন্টদের সংখ্যা, দেনার পরিমাণ ও গ্রাহক মার্চেন্টের দায়দেনা পরিশোধের পরিমাণ জানতে চাওয়া হয়।

এরপর ১৯ অগাস্ট নিজেদের সম্পদের একটি হিসাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে ইভ্যালির ব্র্যান্ড ভ্যালুসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪২২ কোটি ৬২ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

এর বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা গ্রহণ, সরবরাহকারীদের কাছে দেনা, ব্যবসায়িক ব্যয় সংক্রান্ত দেনাসহ মোট চলতি দায় ৫৪২ কেটি ৯৯ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।

বিগত এক মাসে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৮টি ‍পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও এর টাকার পরিমাণ জানান হয়নি।

এসক্রো সার্ভিস সচল করতে চিঠি

গত জুলাইয়ের শুরুতে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা বিষয়ক নির্দেশিকায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টে অগ্রিম টাকা নেওয়ায় বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এই নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ আসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

অগ্রিম টাকা নিতে চাইলে সেটা গ্রাহকের একাউন্ট থেকে সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে না গিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে জমা থাকার কথা, যা ‘এসক্রো সার্ভিস’ নামে পরিচিত।

অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, “এসক্রো সার্ভিস চালুর বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে আরেক দফায় চিঠি দিয়েছি।“

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসক্রো সার্ভিস চালুর বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির কথা শুনেছি। তবে আরেকটু বিস্তারিত জেনে জানাতে হবে।“

আরও পড়ুন