পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুরনো বাংলাদেশ অ্যাকার্ডের ধারাবাহিকতায় ‘আন্তর্জাতিক অ্যাকর্ড’ নামে নতুন চুক্তিকে ‘অকার্যকর’ আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ।
Published : 29 Aug 2021, 10:33 PM
তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি বলেছে, আরএমজি সাসটেইনেবলিটি কাউন্সিল বা আরএসসির মাধ্যমে ওই নতুন চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিও বিভ্রান্তিকর।
রোববার এক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের বাইরে হওয়া কোনো চুক্তির কোনো বিধি বা উপবিধি যদি বাংলাদেশের কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তবে সেই চুক্তির কোনো কার্যকারিতা থাকে না এবং এবং সেটা বাস্তবায়নেরও কোনো সুযোগ নেই। নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ আরএসসিরও নেই।
“আরএসসি বোর্ড কেবল অংশীজনদের কাছেই দায়বদ্ধ এবং একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আরএসসিকে কাজ করতে হয়, যা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। ফলে নির্দিষ্ট দুটি গ্রুপ সেখানে আলাদাভাবে প্রভাব খাটাতে পারে না।”
রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে যখন নানামুখি আলোচনা শুরু হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপটে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়।
এরপর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। দেড় হাজারের বেশি কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন, আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বাস্তবায়ন করা হয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা, যেখানে ২০ লাখের মত কর্মী কাজ করে।
আগের সেই অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ অগাস্ট। তার আগেই ২৫ অগাস্ট আন্তর্জাতিক রিটেইল ব্র্যান্ড এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে দুই বছর মেয়াদী একটি নতুন চুক্তির খবর দেয় বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশন।
বলা হয়, নতুন এই চুক্তির নাম হবে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেইফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি’, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
আগের অ্যাকর্ডের অবসনে কারাখানার সুরক্ষার কাজটি চালিয়ে নেওয়ার জন্য মালিক-শ্রমিক, ক্রেতা-ব্র্যান্ড প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আরএমজি সাসটেইনেবলিটি কাউন্সিল বা আরএসসি গঠিত হয় ২০১৮ সালে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল,প্রথম অ্যাকর্ডের বেশিরভাগ শর্ত আরএসসিতে আত্মীকরণ হলেও একটি বাদ পড়ে। ওই শর্তে কারখানার কর্মপরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চুক্তিতে থাকা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরও আইনি বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছিল।
বিজিএমইএ অবশ্য দাবি করছে, ২০১৩ সালের অ্যাকার্ডের সব প্রটোকলই আরএসসিতে আত্মীকরণ হয়েছে।
২৫ অগাস্ট নতুন চুক্তির খবর জানিয়ে বাংলাদেশ অ্যাকর্ড বলেছিল, নতুন অ্যাকর্ডেও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে এবং এ ধরনের চুক্তি তারা অন্য দেশের জন্যও করতে চায়।
ওই চুক্তির খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আগে ‘কোনো যোগাযোগ না করেই’ বিদেশি রিটেইল কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে নতুন ওই চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রোববারের বিবৃতিতে বিজিএমইএর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়,নতুন অ্যাকর্ডের ওই ঘোষণায় অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়বে এবং বিষয়টি একটি ‘দুর্বল অংশীদারিত্বের নজির’ হয়ে থাকবে। তাছাড়া নতুন ওই চুক্তি হলে তাতে বিদ্যমান আরএসসিকেও ‘অবহেলা’ করা হবে।
“নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের পোশাক শিল্প এখন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে চলছে। কারখানাগুলো পরিদর্শন করে নিরপত্তা সনদ দেওয়ার গতি হয়ত প্রত্যাশার তুলনায় কম, তবে আরএসসি সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।”
প্রায় ২০০ রিটোইলার ২০১৩ সালের অ্যাকর্ডে সই করেছিল, যাদের মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম, ইনডিটেক্স, ইউনিক্ল, হুগো, বস আর অ্যাডিডাসের মত বড় কোম্পানিও ছিল। নতুন চুক্তিতে কারা রয়েছে সেই তালিকা ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তবে বিজিএমইএ বলছে, “এটা সব পক্ষের জন্যই স্পষ্ট হওয়া দরকার যে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য অনুমোদন কেবল আরএসসিরই আছে।
“মেয়াদোত্তীর্ণ ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ এবং নতুন ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেইফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি’ সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় এবং আরএসসির সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে কাজ করার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই যতক্ষণ না বাংলাদেশ সরকার তাদের সেই অনুমোদন দিচ্ছে।”