ফেইসবুক ও গুগলের পর এবার বাংলাদেশে সরাসরি ভ্যাট পরিশোধে নিবন্ধন নিয়েছে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট।
Published : 01 Jul 2021, 06:29 PM
নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে পণ্য বিক্রি, বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য খাতের আয় থেকে সরকারকে মূল্য সংযোজন কর- মূসক বা ভ্যাট পরিশোধে এই নিবন্ধন নিয়েছে জনপ্রিয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত ভ্যাট কমিশনার প্রমীলা সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের কমিশনারেটের আওতাধীন সেগুনবাগিচা বিভাগীয় দপ্তরের অধীনে মাইক্রোসফটকে ভ্যাট নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে ১৩ জুন ফেইসবুক এবং ২৫ মে গুগলের প্রতিষ্ঠান ইউটিউব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরে ভ্যাট নিবন্ধন করেছিল।
ফেইসবুক আয়ারল্যান্ডের ঠিকানা ব্যবহার করে তিন প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন নেয়।
আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট সিঙ্গাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে বিআইএন হিসেবে পরিচিত ব্যবসায় নিবন্ধন নম্বর নিয়েছে।
মাইক্রোসফট রিজিওনাল সেলস পিটিই লি. নামে নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অতিরিক্ত ভ্যাট কমিশনার প্রমীলা সরকার আরও বলেন, “নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে পোদ্দার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার পোদ্দার এই নিবন্ধন নিয়েছেন।
“নিবন্ধনে প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুরের ১৮২ সেসিল স্ট্রিট, ১৩- ০১ ফ্রেসার টাওয়ার সিঙ্গাপুর ০৬৯৫৪৭ ঠিকানা ব্যবহার করে।“
“কিন্তু মাইক্রোসফটসহ এরকম আরও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও কর প্রদান ব্যবস্থা সহজ করার জন্য সরাসরি ভ্যাট নিবন্ধন করতে তাগাদা দিয়ে আসছিলাম।“
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমরা কী পরিমাণ টাকা পাচ্ছি, আর কী পরিমাণ দেশের বাইরে যাচ্ছে সে বিষয়ে হিসাব পাচ্ছিলাম না।”
এসময় তিনি বাস্তবায়নাধীন ‘নতুন ভ্যাট আইন ২০১২’ অনুযায়ী বিদেশি যে কোনও কোম্পানির বাংলাদেশে ব্যবসা কার্যক্রম চালাতে সরাসরি ভ্যাট নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে মাইক্রোসফটসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে জানিয়েছি। কোম্পানিগুলোও আমাদের নিবন্ধন নেওয়ার কথা বলে আসছিল।
“এমন পরিস্থিতিতে মাইক্রোসফট দেশে ভ্যাট নিবন্ধন নিল।”
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ অনুযায়ী করযোগ্য আমদানি ও করযোগ্য সরবরাহের উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়।
এনবিআর ২০১৯ সালের ২৬ জুন মূসক আদায়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ফেইসবুক, গুগল ও ইউটিউবের মত ইন্টারনেট সেবা এবং বেতার-টেলিভিশনে সম্প্রচার সেবাদাতা অনাবাসীদেরকে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার জন্য সার্কুলার জারি করেছিল।
এর আগে হাই কোর্টের এক আদেশের পর ওই বছর ২২ জানুয়ারি গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউবের মত মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ থেকে দেওয়া বিজ্ঞাপনের উপর ভ্যাট আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চিঠিও দেয় এনবিআর।
ওই চিঠিতে এসব মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা যে অর্থ পরিশোধ করেন, তা থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে সরকারি কোষাগারে জমা করতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়।
ফেইসবুক-ইউটিউবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিজ্ঞাপনের অর্থের বেশিরভাগই অবৈধ পথে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। ফলে এখাত থেকে দেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই অর্থ সরকারি কোষাগারে আনতে অনেক দিন চেষ্টা চালাচ্ছে এনবিআর।