অবৈধ হ্যান্ডসেটে যাবে সতর্কবার্তা, তিন মাস পর ব্যবস্থা

অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বন্ধে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) এর কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2021, 11:16 AM
Updated : 1 July 2021, 11:19 AM

এ প্রক্রিয়ায় ১ জুলাই থেকে যেসব নতুন হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, তার মধ্যে কোনোটি অবৈধ হয়ে থাকলে গ্রাহককে জানিয়ে তিন মাস সময় দেওয়া হবে।

পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাস ওই সেট নেটওয়ার্কে সচল রেখে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিটিআরসি জানিয়েছে।

আর ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রাহকের হাতে থাকা সব চালু হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআরে নিবন্ধিত হয়ে গেছে।

বিটিআরসি বলছে, হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় এখন থেকে কারো মোবাইল ফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে খুব সহজেই তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এনইআইআর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে চালু হয়েছে, তার সবই নিবন্ধনে আনা হচ্ছে। ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ১০০ কোটির বেশি হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর নিবন্ধিত হয়েছে, হাতে আরো ১৫ কোটি আইএমইআই নম্বর রয়েছে নিবন্ধনের জন্য।

“অপারেটরদের ডেটাবেইজে থাকা সব আইএমইআই নম্বর নিবন্ধিত হয়েছে। অনেক হ্যান্ডসেটের দুটি করেও আইএমইআই নম্বর থাকে। এখনো প্রক্রিয়া চলছে। কতগুলো হ্যান্ডসেট নিবন্ধিত হল সেই সংখ্যা কয়েকদিন পর চূড়ান্তভাবে দেওয়া সম্ভব হবে।”

তিনি বলেন, নিবন্ধিত এসব সেট ব্যবহারে পরে আর কোনো সমস্যা হবে না। নতুন সেট নেটওয়ার্কে এলে এবং তার মধ্যে অবৈধ সেট থাকলে তা নিবন্ধন পাবে না।

“আজ থেকে নতুন যেসব মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, সেগুলো নেটওয়ার্কে সচল রেখেই এনইআইআর এর মাধ্যমে বৈধতা যাচাই করা হবে। হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

“আর যেসব হ্যান্ডসেটে বৈধ আইএমইআই নম্বর থাকবে না, সেগুলোর গ্রাহককে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাস ওই সেট নেটওয়ার্কে সচল রেখে পরে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অবৈধ মোবাইল সেট বন্ধ করা এবং বৈধ সেটের নিবন্ধনে ডিসেম্বরে বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি করে দেশীয় কোম্পানি সিনেসিস আইটি। চুক্তি অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যেই তারা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করল।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এটি একটি স্মরণীয় দিন। কোন হ্যান্ডসেট চালু থাকবে আর কোনটা বন্ধ হবে তা তিনমাস পরে জানানো হবে। এনইআইআরের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে। এনইআইআর প্রযুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ দমন আরো সহজ হবে এবং অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধের মাধ্যমে রাজস্ব খাতেও সহায়তা হবে।“

সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “৩০ জুনের মধ্যে দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা সব চালু হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন না হয়ে থাকলে তা অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। গ্রাহকের কাছ থেকে যেন কোনো অভিযোগ না পাই যে তার সেট নিবন্ধন হয়নি। আজ সকাল থেকে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। গ্রাহকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে বিটিআরসিকে সতর্ক থাকতে হবে।”

স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক শহিদুল আলম অনুষ্ঠানে বলেন, আগামী ২ থেকে ৩ দিন পর এ ধরনের কোনো অভিযোগ আর থাকবে না।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “অবৈধ সেট বন্ধের প্রক্রিয়া ১ অক্টোবর থেকে পুরোপুরি শুরু হবে। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকরা যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা হবে।”

বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, “এ প্রক্রিয়ায় হ্যান্ডসেট চুরি বা হারিয়ে গেলে খুব সহজেই তা উদ্ধার করা যাবে। চুরি বা হারিয়ে গেলে হ্যান্ডসেটটি কোথায় আছে বা কে ব্যবহার করছে তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহজেই চিহ্নিত করতে পারবে।”

অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, “টেলিকম খাতের সবাই একসাথে কাজ করে এ প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যত্তম একটি মাইলস্টোনে পৌছালাম। আগামী তিন মাসে এ প্রক্রিয়া একটি সুন্দর জায়গায় পৌঁছাবে বলে আশা করি।”

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন,  মোবাইল অপারেটর, হ্যান্ডসেট আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারক এবং বিটিআরসির ঊধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

হ্যান্ডসেট কেনা বা বিক্রির আগে যা করতে হবে

১ জুলাই থেকে যে কোনো মাধ্যমে (বিক্রয় কেন্দ্র, অনলাইন বিক্রয় কেন্দ্র, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে অবশ্যই হ্যান্ডসেটটির বৈধতা যাচাই করতে হবে।

সেজন্য একটি পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি হ্যান্ডসেটের ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ করতে বলছে বিটিআরসি। মোবাইল হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

# মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD<space>১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি লিখতে হবে। যেমন: KYD 123456789012345।

আইএমইআই নম্বরটি লেখার পর ১৬০০২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজ মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে।

বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন

বিদেশ থেকে বৈধভাবে কিনে আনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট দেশে চালু করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নেটওয়ার্কে সচল হবে। এ ধরনের গ্রাহককে দশ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য/দলিল দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য এসএমএস পাঠানো হবে।

দশ দিনের মধ্যে নিবন্ধন হয়ে গেলে ওই হ্যান্ডসেট ‘বৈধ’ বিবেচিত হবে। আর তা না হলে হ্যান্ডসেটটি অবৈধ বিবেচনা করে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে। তাদের ক্ষেত্রেও পরীক্ষাকালীন ওই তিন মাস হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে চালু রেখে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

# বিদেশ থেকে আনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে গ্রাহককে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

তার পোর্টালের Special Registration সেকশনে গিয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট এর আইএমইআই নম্বরটি দিতে হবে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর ছবি/স্ক্যান কপি (যেমন পাসপোর্টের ভিসা/ইমিগ্রেশনের তথ্য, ক্রয় রশিদ ইত্যাদি) আপলোড করে Submit করতে হবে।

হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে এসএমএস এর মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে যুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় পার হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বিটিআরসি।

মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সাহায্যেও এ সেবা নেওয়া যাবে।

বর্তমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে সর্বোচ্চ দুটি এবং শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি হ্যান্ডসেট সঙ্গে আনতে পারেন।

হাতে থাকা মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই

যে কেউ চাইলে তার হাতে থাকা মোবাইল হ্যান্ডসেটের বর্তমান অবস্থা জেনে নিতে পারেন।

# মোবাইল হ্যান্ডসেটে *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করতে হবে। স্ক্রিনে অপশন এলে Status Check সিলেক্ট করতে হবে।

তখন একটি অটোমেটিক বক্স আসবে, সেখানে মোবাইল হ্যান্ডসেটের ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি লিখে পাঠাতে হবে।

গ্রাহকের মোবাইলে তখন হ্যাঁ/না অপশন সম্বলিত একটি অটোমেটিক বক্স আসবে। তাতে হ্যাঁ Select করে নিশ্চিত করতে হবে।

ফিরতি মেসেজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের/হ্যান্ডসেটের হালনাগাদ অবস্থা জানানো হবে।

এছাড়া  neir.btrc.gov.bd ওয়েব লিংকে গিয়ে বিদ্যমান সিটিজেন পোর্টাল এবং মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারেও এ সেবা মিলবে।

আরও পড়ুন