রোজার শেষ সময়ে এসে রাজধানীর জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আসা-যাওয়া বাড়লেও বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না বলে একরকম হতাশাই প্রকাশ করলেন ব্র্যান্ড কিংবা নন-ব্র্যান্ড উভয় ধরনের বিক্রেতারা।
রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে সাধারণ ও ব্র্যান্ডের জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ রয়েছে।
তারা বলছেন, এবার ক্রেতাদের কেনাকাটার ধরন পাল্টেছে। ‘বড় ক্রেতার’ দেখা তেমন পাচ্ছেন না।
বিক্রির এই প্রবণতায় সবচেয়ে বেশি হতাশ ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রেতারা।
তাদের দাবি, করোনাভাইরাসের আগের সময়গুলোতে রোজার শেষ দিকে উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ শো-রুমগুলোতে বেশি আসতেন। এবার এমন ক্রেতা ‘একেবারেই না আসায়’ দামি জুতার বিক্রি কম। বেশি যাচ্ছে মাঝারি ও কম মূল্যের জুতা।
শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড অ্যাপেক্সের যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন জানান, এবার ঢাকার বাইরের ক্রেতা পাননি তারা।
“আগে সারাদেশ থেকে আমাদের শো-রুমে জুতা কিনতে আসত। সিলেট, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, দোহার থেকে কাস্টমার আসত। কিন্তু এবারে আসে নাই।”
ছেলেদের ৩ হাজার টাকার মধ্যে এবং মেয়েদের ২ হাজার টাকার মধ্যের জুতাগুলো বেশি চলছে বলে জানান তিনি।
“করোনাভাইরাসের কারণে মার্কেটে মানুষ খুবই কম আসছেন। আমরা এলিট শ্রেণির যে কাস্টমারগুলো আগে পেতাম, তারা আসছেন না এখন। তাদের কেউ কেউ অর্ধ লক্ষ থেকে এক লাখ টাকার জুতো কিনতেন। যারা আসছেন, তাদের ক্রয়ক্ষমতা খুবই কম।
“সেজন্য হাই রেঞ্জের প্রডাক্টগুলো তেমন চলছে না। ফলে টার্নওভার খুবই কম।”
“আসলে আগের সময়টা তো এখন না। মহামারীর এই সময়ে কাস্টমাররা মুভ করছেন কম। তারা দল বেধে আসত, জুতা কিনত। কিন্তু এখন সেটা দেখছি না। কাস্টমার আসছে মোটামুটি। তবে অন্যান্য ঈদের মত না।
“আগে কাস্টমাররা টাকার চিন্তা করত না, নিয়ে নিত। কিন্তু এখন সেটা নিচ্ছে না। তারা রেঞ্জের কথা বলেই দিচ্ছে। আগে বাচ্চা যেটা পছন্দ করত, সেটাই কিনে দিত বাবা-মায়েরা। আর এখন তারা নিজেরাই পছন্দ করে কিনে দিচ্ছে।”
ছেলেদের স্যান্ডেলগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সাধারণ জুতার দোকানগুলোর চেয়ে ব্র্যান্ডের জুতার শো-রুমগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা গেছে।
এখানকার বে এমপোরিয়ামের ব্যবস্থাপক আবু বাশার কাইয়ুম বলেন, “শুক্র-শনিবার খুব ভিড় ছিল। সে তুলনায় আজ ক্রেতা কিছুটা কম। তবে প্যান্ডামিক সিচুয়েশন অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি।”
তবে ২০১৯ সালের ঈদের হিসেবে তাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী প্লাজায় সাধারণ ও ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা যায়।
তবে ভিড়ের তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানান এই মার্কেটের বাটা শো-রুমের বিক্রয়কর্মী হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “কাস্টমার ভালই আসছেন। কিন্তু অনেকে দাম দেখে চলে যাচ্ছেন। বিক্রি যা হচ্ছে, সেগুলো কম রেঞ্জের। দুই-তিনটা জুতা কিনছেন এমন কাস্টমার একেবারেই কম। বাচ্চাদের জুতাই বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
শাহ আলী প্লাজার গাজী সু এর বিক্রেতা আশরাফুল আলম বলেন, “এক বছর ধরে তো বিক্রি নেই। এরপরও যে অবস্থা, তাতে যে বিক্রি হচ্ছে আমরা খুশি।”
এই বিপণিবিতানে জুতা কিনতে আসা সৈয়দ নাজমুল সন্তানদের পাশাপাশি নিজের জন্যও জুতা কিনেছেন।
তিনি বলেন, “আসলে বাচ্চাদের জন্য জুতা কিনতে আসা। আর আমি মূলত ঈদের জন্য কিনতে আসিনি। রেগুলার ইউজের জুতা দরকার, তাই কিনলাম।”
ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় ছিল মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের জুতার দোকানগুলোতেও। এসব দোকানে শিশুদের জুতাই বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার জুতাগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এখানকার মমতাজ মেনশনের মীর ফুটওয়্যারের স্বত্তাধিকারী মীর সেলিম উল্লাহ।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে ভালোই কাস্টমার আসছেন। বিক্রিও হচ্ছে। কিন্তু কাস্টমাররা অনেক কম দামে জুতা কিনতে চাচ্ছে, সেই দামে বানাইতেও পারি নাই। তারপরও যতটা কম লাভে সম্ভব বিক্রি করে দিচ্ছি। আমাদের তো ব্যবসা করা লাগবে।”
নারী ও শিশুদের জুতা বেশি বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে সেলিম উল্লাহ বলেন, “স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে বিক্রি আরও বেশি হত। কারণ তখন বাইরে যেতে হত, বন্ধুদের সঙ্গে চলারও বিষয় থাকে।”
এই বাজারের ফুটপাতের জুতার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা গেছে।
সাইফুল নামের এক বিক্রেতা জানালেন, ভালো পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়ায় ক্রেতারা তাদের কাছে আসছেন বেশি।
“আমরা একটু কম দামে জুতা বিক্রি করি। সীমিত লাভ করি। কিন্তু আমাদের প্রডাক্টও ভালো। কাস্টমাররা বারবার আমাদের কাছে আসে।”
তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পল্লবীর রংধনু শপিং কমপ্লেক্সে। এই বিপণিবিতানের জুতার দোকানগুলোতে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিলেছে।
সু-পার্কের ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব জানান, ২০ রমজানের পর কিছু ক্রেতা পেলেও অন্যান্য ঈদের ১০ ভাগের এক ভাগ বিক্রিও হচ্ছে না।
হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, “এতদিন তো বসে থাকতাম। এখন কিছু ক্রেতা আসছে। কিন্তু বিক্রির যে অবস্থা, এই মার্কেটের অনেকেই ঈদের পর দোকান ছেড়ে দেবে।“
এই বিপণিবিতানে কেনাকাটা করতে আসা নাজিয়া ওমর বলেন, “আসলে ছোট বাচ্চার জন্য জুতা কিনতে এসেছি। যেহেতু বাইরে তেমন যেতে হয় না, তাই আমার জন্য এবার আর কিনব না।”
আরও পড়ুন