ক্রেতা টানতে মূল্য ছাড়ের প্রতিযোগিতায় বিক্রেতারা

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে লোকসান ঠেকিয়ে বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন পোশাকের দোকানগুলোতে চলছে মূল্যছাড়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2021, 04:56 PM
Updated : 9 May 2021, 04:56 PM

বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের কেনাকাটাকে সামনে রেখে মূল্যছাড় দেওয়ায় বিক্রি বেড়েছে তাদের। অন্যান্য ঈদের মতো জমজমাট না হলেও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হচ্ছে বিক্রি।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউন চললেও ঈদের আগে স্বাস্থ্যবিধি পালনের শর্তে দোকানপাট খুলতে দিয়েছে সরকার।

এই সুযোগে বিক্রেতারা চাইছেন তার আগে বন্ধ থাকার লোকসান ঘুচিয়ে নিতে, যদিও এই কেনাকাটার ভিড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

রোববার ঢাকার মিরপুরের বিভিন্ন বিপণি বিতানে সকাল থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকলেও বিকালে ভিড় বাড়ে।

বিক্রেতারা বলছেন, শুক্রবার ও শনিবারের তুলনায় ক্রেতা কম থাকলেও বিক্রিতে সন্তুষ্ট তারা। গত এক বছর ধরে চলতে থাকা ক্রেতা খরার ধাক্কা এবার কাটিয়ে ওঠার আশা তাদের।

 বিপণি বিতানগুলোতে শিশুদের পোশাকের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ছেলেদের পাঞ্জাবি এবং মেয়েদের গাউন, সারারা ও গারারার মতো তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি।

 ফ্যাশন হাউজ জেন্টেল পার্ক ক্রেতাদের ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ৫টি পণ্য কিনলে ৩০ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে।

জেন্টেল পার্কের মিরপুর ৬ নম্বরের শাখার ব্যবস্থাপক মামুন সরকার বলেন, “রমজান বা ঈদে মূলত আমাদের এই অফারটা থাকে না। মানুষের আর্থিক দিক বিবেচনা করে এবং একটি পরিবারের সবাই যেন সুলভে পোশাক কিনতে পারে, সেজন্যই আমরা এই ছাড় দিয়েছি।”

বিক্রির চিত্র নিয়ে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে যে পরিস্থিতি ছিল, সে অনুযায়ী ভালোই বিক্রি হয়েছে। গত বছর যে অবস্থা ছিল, সে দিক থেকে অন্তত ঘুরে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা হয়েছে।”

তবে স্বাভাবিক সময়ের ঈদের তুলনায় বিক্রি কম বলেই জানান তিনি।

ফ্যাশন হাউজগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ও বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধেও ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতারা।

মিরপুর ২ নম্বরের রঙজয়ী বুটিক হাউজে পাঞ্জাবির উপর ৫০ শতাংশ এবং আনস্টিচ থ্রি পিসে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় রয়েছে।

 এই বুটিক হাউজের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম শামীম জানান, ঈদ উপলক্ষে ক্রেতা আসতে থাকায় তারা এই ছাড় দিয়েছেন।

 “যেহেতু ঈদে পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি থাকে, তাই ছাড় দেওয়া হয়েছে যেন মানুষ এগুলো কেনে।”

 তবে মহামারীকালে মানুষ অনেক হিসেব করে কেনাকাটা করছে বলে মনে করেন এই বিক্রেতা।

“মানুষ অনেক দরদাম করছে। খুব প্রয়োজন যেটা, সেটাই কিনছে। আমাদের একদরের দোকান। এরপরও মানুষের আর্থিক অবস্থা তো আমরা বুঝি, সেজন্য কিছুটা দাম কমিয়ে বিক্রি করছি।”

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে জানান মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী প্লাজার কারুজগৎ পাঞ্জাবি হাউজের ব্যবস্থাপক মো. মিঠু। তবে আগের তুলনায় কম লাভে পোশাক বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের মধ্যে তো মানুষের বের হওয়ার কথা না, কেনাকাটা করার কথাও না। কিন্তু মানুষ আসছে, তারা কিনছেনও। তবে দরাদরি করে কিনছেন। কাস্টমার পেলে আমরা কম লাভেই পাঞ্জাবি বিক্রি করে দিচ্ছি।”

তবে দোকানে আশা অধিকাংশ ক্রেতাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে জানান তিনি।

 “মাস্ক সাথে থাকলেও খুলে রাখছে। গা ঘেষে দাঁড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা করছে না সাধারণ মানুষ।”

এই বিপণিবিতানের অতিথি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী মোজাম্মেল হোসেন মনে করছেন, যাদের খুব বেশি প্রয়োজন, তারাই বাসার বাইরে বের হচ্ছেন এবং কেনাকাটা করছেন।

“বেশির ভাগ মানুষই মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, শ্বশুর-শ্বাশুড়ির জন্য কিনেছেন। নিজেদের জন্য কিনতে দেখছি কম।”

শিশুদের ফ্রক, মেয়েদের গাউন, সারারা ও গারারা বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মিরপুর ২নম্বরে কেনাকাটা করতে আসা সাদিয়া ইসলাম জানান, তিনি তার মেয়ের জন্য জামা কিনতে এসেছেন।

“এখন আসলে নিজেদের কেনাকাটা করার মতো মানসিকতা নাই। বাচ্চা, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ওনাদের জন্যই টুকটাক কেনাকাটা করেছি।”

মিরপুর ২ নম্বরের আঙিনা মেগা মলে সব পণ্যের উপর রয়েছে ২০ শতাংশ মূল্যা ছাড়।

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এই মূল্যছাড় দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর মালিক আক্তারুজ্জামান তানশেন।

তিনি বলেন, “আমাদের ঈদের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল। যেহেতু করোনাকালীন কঠিন সময় পার করছি, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়েছি যেন কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারি।

“ডিসকাউন্টের কারণে যেন ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে কেনাকাটার প্রতি, সেকারণে ছাড় দিচ্ছি। ঈদ উপলক্ষে আমাদের যে পোশাকগুলো তৈরি করেছি, সেগুলো বিক্রি হলেই আমরা যে বিনিয়োগ করেছি সেটা উঠে আসবে।”

রমজানের স্বাভাবিক বিক্রির তুলনায় এবার এক-তৃতীয়াংশ বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দিন যাচ্ছে, কাস্টমার বাড়ছে। কিন্তু ঈদের হিসাব করলে অনেক কম। তবে করোনাকালীন অবস্থা বিবেচনা করলে ক্রেতা মোটামুটি আসছে এবং বিক্রিও হচ্ছে।”

মিরপুর ১১ নম্বরের নিউ সোসাইটি মার্কেটে পাঞ্জাবি, পায়জামা ও লুঙ্গির দোকান রাসেল আহমেদের। প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

“আমি ভাবছিলাম করোনার কারণে মানুষের হাতে টাকা নাই, মানুষ বের হবে না। কিন্তু সেই অনুযায়ী অনেক কাস্টমার আসছে। আর কাস্টমার পেলে আর ছাড়তেছি না। ৫০/১০০ টাকা লাভে বিক্রি করে দিচ্ছি। আবার কেনা দামেও বিক্রি করে দিচ্ছি।”

এই মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা তৌহিদ আলম তার বাবা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনতে আসেন।

তিনি বলেন, “ঈদ তো আর বার বার আসবে না। ছোটদেরই তো ঈদ। ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনলাম। বাবার জন্যও নিলাম। এবার আর আমি কিনি নাই। দেখা যাবে কেউ না কেউ গিফট করেছে, সেটাই পরব ঈদে।”