কথায় কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁঝ

ভারত রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর তা আর কমার লক্ষণ নেই।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2019, 04:43 PM
Updated : 19 Sept 2019, 04:43 PM

নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই নিত্যপণ্যের দাম কমার আশা মঙ্গলবার দেখিয়েছিলেন বাণিজ্য সচিব; কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাজারে তা প্রভাব দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখনও ৬৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে পেঁয়াজের দাম।

ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য তিন গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার পর সপ্তাহের শুরুর দিকে রান্নার এই উপাদানের দাম বাংলাদেশে প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়।

ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশের উৎপাদনের পর ১০ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে।

ভারতের পদক্ষেপের কারণে বাজার সামলাতে সরকার খোলা বাজারে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। মিয়ানমার ও মিশর থেকেও আমদানির কথা বলা হয়।

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বাজারে তদারকি বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছিল।

কিন্তু বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা।

বৃহস্পতিবার মিরপুরের বড়বাগ কাঁচাবাজারের একাধিক দোকানে গিয়ে দেখা যায়, রকম ভেদে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

এক দোকানের কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের কাছে চার ধরনের পেঁয়াজ রয়েছে। এর মধ্যে পাবনা অঞ্চলের সবচেয়ে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ফরিদপুর অঞ্চলের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় এবং ভারতীয় ও ক্রস পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায়। 

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আলাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পেঁয়াজের দাম কমার কোনো লক্ষণ এখনও দেখছি না। এখনও ফরিদপুরের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকা এবং পাবনা অঞ্চলের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে “

এদিন পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তে দেশি কিংবা ভারতীয় সব ধরনের পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৬৫ টাকা ছিল বলে জানান আল মক্কা জেনারেল স্টোরের ব্যবস্থাপক ইউনুস হাওলাদার।

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে বলেও এক দোকানি জানিয়েছেন।

বড়বাগের সুমন জেনারেল স্টোরের কর্মী আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দাম বাড়ার পর তার দোকানে পেঁয়াজের বিক্রি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

“কিংশুক নামের একটি হোস্টেলে প্রতিদিন দুই কেজি করে পেঁয়াজ কিনত আমার কাছ থেকে। গত তিন দিন ধরে তারা প্রতিদিন এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনছে। অন্যান্য ক্রেতারাও কেনা কমিয়ে দিয়েছে।”

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে নানা পদক্ষেপের কথা জানানো হয়

পেঁয়াজের দর কমাতে এখন কী করছে সরকার- জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিয়ানমার ও মিশরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে।”

কত দিনে তা আসবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করে বলতে চাই না। তবে অচিরেই নতুন বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রভাব বাজারে পড়বে বলে আশা করি।”

বাণিজ্য সচিব এখনও আশাবাদী, কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমে আসবে।

“স্থলবন্দরগুলোতে পেঁয়াজের প্রচুর চালান অপেক্ষমাণ রয়েছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য বাজার থেকেও পেঁয়াজ দেশে ঢুকবে। ফলে পেঁয়াজের দাম নিজ থেকে কমে আসবে।”

গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকা শহরের ৫টি স্থানে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা করে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

আগামী সপ্তাহে ঢাকায় পেঁয়াজ বিক্রির স্থান বৃদ্ধিসহ সারাদেশে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির।

দাম কমেছে ইলিশের

ভরা মওসুমে ইলিশ মাছের চড়া দাম থাকলেও গত দুই দিন ধরে দাম কিছুটা কমে এসেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

বড়বাগ কাঁচাবাজারে একজন বিক্রেতা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে ইলিশের কেজি সাড়ে ১১শ টাকা থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।

“এক কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশগুলোর জোড়া এখন ১৬শ টাকা, প্রতিকেজি ইলিশ এক হাজার টাকা,” বলেন তিনি।

ইলিশের মতো পাবদা, রুই, কাতল, শিং, কই মাছের দাম কিছুটা কমেছে। রুই মাছ ৩৮০ টাকা থেকে কমে ৩২০ টাকায়, পাবদা মাছ ৩২০ টাকায়, কাতল মাছ সাড়ে তিনশ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে ব্রয়লার মুরগির ও কক মুরগির দাম চলতি সপ্তাহে কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৪০ টাকা এবং পাকিস্তানি ককের দাম ২২০ টাকা প্রতিকেজি।

বাজারে শাক-সবজির দামও কিছুটা কমেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

সবজি বিক্রেতা মহসীন আলী বলেন, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কাকরল, পটলসহ আরও কয়েকটি সবজি কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে কমেছে।

কাঁকরোল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন মওসুমের সবজি শিম এলেও বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০ টাকায়।

আগের মতোই রসুন প্রতি কেজি ১৬০ টাকা এবং আদা প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।