ভেজাল পানির কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর হবে সরকার: শিল্পমন্ত্রী

মানহীন ও পান উপযোগী নয় এমন বোতলজাত ও বড় জারের খাবার পানি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।   

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2019, 06:42 PM
Updated : 4 Feb 2019, 08:20 PM

সোমবার শিল্পমন্ত্রণালয়ে ‘পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ এর সমন্বয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অনুমোদনহীন ও নিম্নমানের খাবার পানির কারখানার সন্ধান পেতে এই খাতের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান তিনি।

বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, অচিরেই মানহীন বোতলজাত ও বড় জারের পানি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাজারে সুপেয় পানির অসাধু ব্যবসা নির্মূল এবং মানসম্মত পানি বাজারজাত করতে করণীয় বিষয় নিয়েও এই বৈঠকে আলোচনা হয় বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা মন্ত্রীকে জানান, লাইসেন্সবিহীন ও এলাকাভিত্তিক অবৈধ দখলদার পানি বিক্রেতাদের কারণে বাজারে মানসম্মত পানির ব্যবসা চ্যালেঞ্জের মুখে।

কম দামে নিম্নমানের পানিতে বাজার সয়লাব হওয়ার কারণে ভোক্তারা প্রতারিত হবার পাশাপাশি প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভেজাল, নিম্নমান ও লাইসেন্সবিহীন কোম্পানিগুলোর তালিকা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।

পাশাপাশি ভেজাল খাবার পানির বিরুদ্ধে দ্রুত বিশেষ অভিযান চালাতে রাষ্ট্রীয় মাননিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও জানান শিল্পমন্ত্রী হুমায়ূন।

এদিকে ইতোমধ্যে ভেজাল জারের পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের  বিরুদ্ধে মাসব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা অভিযানে নেমেছে মান নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন-বিএসটিআই।  

এসব অভিযানে প্রতিদিন হাজার হাজার অস্বাস্থ্যকর পানির জার ধ্বংস করা হচ্ছে বলে জানান  বিএসটিআইএর সার্টিফিকেশন মার্ক বিভাগের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএসটিআইএর নতুন মহাপরিচালকের নির্দেশে বাজারে অস্বাস্থ্যকর পানির বিরুদ্ধে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় নিয়ে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।”

যতদিন বাজারে ভেজাল পানি পাওয়া যাবে ততদিন এই অভিযান চালানো হবে বলে জানান বিএসটিআইএর এই কর্মকর্তা।  

খাবার পানির অবৈধ ব্যবসার  ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন,  “যে যেখানে পারছে ওয়াসার লাইন থেকে পানি জারে ভরে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে এই ধরনের অসাধু প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন।

“গোপন অভিযানে আমরা এধরনের প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাচ্ছি। আজও ধ্বংস করা হয়েছে ২৬শ পানির জার।”

এর আগের দিনের অভিযানে তিন হাজার ৬০টি জার ধ্বংস করে বিএসটিআই ।

পরিশোধন ছাড়াই ওয়াসার পানি জারে ভরে বিশুদ্ধ পানি হিসেবে বিক্রির অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর মিরপুরের তিনটি কারখানা বন্ধ করে দেয় র‌্যাব ও বিএসটিআইর অনুসন্ধান দল।

সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) বিভাগের পরিচালক এসএম ইসহাক আলি বলেন,  “সিএম বিভাগের দুইজন উপপরিচালক ৮ ফিল্ড অফিসারকে নিয়ে রোববার রাজধানীর মিরপুর-১০, মিরপুর-০১, মিরপুর ৬০ ফিট রোড ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালায়।”

অভিযানে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পরীক্ষা-নিরীক্ষাবিহীন পানির বোতল মাত্র ৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

এসব বিপণনকারী হাসপাতালের কোনো অনুমোদনপত্রও দেখাতে পারেনি বলে জানান ইসহাক।

গত বছরের ২২ মে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘প্রতারণার নাম বোতলজাত পানি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২৭ মে হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শাম্মী আক্তার।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৩ ডিসেম্বর আদালত বাজারে থাকা ‘অবৈধ-অনিরাপদ’ জার ও বোতলের পানির সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেয়। বিএসটিআই ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

এছাড়া প্লাস্টিক বোতল ও জারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে সরকারের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।