কার কলড্রপ কত, হিসাব দিল বিটিআরসি

মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর এক বছরের কলড্রপের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে বিটিআরসি, তাতে শীর্ষে রয়েছে গ্রাহক সংখার দিক থেকে এগিয়ে থাকা গ্রামীণফোন।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2018, 03:41 PM
Updated : 22 Oct 2018, 03:41 PM

গ্রাহকের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে সোমবার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলড্রপের পরিসংখ্যান দেয়।

এই সময়ে গ্রামীণফোনের কলড্রপের সংখ্যা ১০৩ কোটি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির কলড্রপ ৭৬ কোটি, বাংলালিংকের কলড্রপ ৩৬ কোটি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের কলড্রপ ৬ কোটি।

বিটিআরসির হিসাবে, অগাস্ট মাস পর্যন্ত দেশে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৭৯ হাজার। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই গ্রামীণফোনের।

৭ কোটি ৭ লাখ ৯ হাজার গ্রাহক নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। তাদের পরে থাকা রবির গ্রাহক ৪ কোটি ৬১ লাখ ৩২ হাজার, বাংলালিংকের গ্রাহক ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার এবং সবার নিচে থাকা টেলিটকের গ্রাহক ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার।

বিটিআরসি প্রকৃত কলড্রপের অবস্থা এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে।

মোবাইল অপারেটরগুলোর কলড্রপ নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। রোববারও সংসদে এনিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

অপারেটরগুলো বলছে, রেডিও প্রযু্ক্তিনির্ভর মোবাইল সেবায় কল ড্রপ একটি ‘স্বাভাবিক উপসর্গ’। নেটওয়ার্কে কলড্রপের পরিমাণ বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক নির্ধারিত মানদণ্ডের অনেক নিচে রয়েছে।

গ্রামীণফোনের কলড্রপ নিয়ে বিটিআরসির তথ্যে দেখা যায়, এই সময়ে জিপির কলড্রপ ১০৩ কোটি ৪৩ লাখ। একের অধিক কলড্রপ হয়েছে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ এবং কল মিনিট ফেরত দিয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ।

রবির কলড্রপ হয়েছে ৭৬ কোটি ১৮ লাখ, একের অধিক কলড্রপ হয়েছে ২৪ কোটি ৪৭ লাখ এবং কলমিনিট ফেরত দিয়েছে ৬ কোটি ৮২ লাখ।

বাংলালিংকের কলড্রপ হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ, একের বেশি কলড্রপ হয়েছে ১৭ কোটি ১৪ লাখ এবং কল মিনিট ফেরত দিয়েছে ৪ কোটি ৯৪ লাখ।

টেলিটকের কলড্রপ ৬ কোটি হলেও একের অধিক কল ড্রপ হয়নি।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট কলের হিসাব প্রকাশ করেনি বিটিআরসি। 

বিটিআরসি অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে রবি বাদে সব অপারেটরেরই কলড্রপ কমেছে।

২০১৬ সালের জুনে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো মোবাইল সংযোগ থেকে দিনে একের বেশি কলড্রপ হলে এক মিনিট টকটাইম গ্রাহককে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে।

তবে কলড্রপে ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই ক্ষতিপূরণ বা টকটাইম পাচ্ছেন না আর পেলেও তা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিটিআরসি নির্ধারিত মান অনুযায়ী, কলড্রপের হার ২ শতাংশের কম হলে তা হবে মানসম্পন্ন সেবা।

বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কলড্রপ নিয়ে অভিযোগ আসছেই। কলমিনিট ফেরত না দেওয়া ও এসএমএস দিয়ে জানানোও হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।”

কলড্রপের বিষয়ে সোমবার অপারেটরদের চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “অপারেটরদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে, কলড্রপ না কমলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চিঠিতে বলা হয়েছে, কলড্রপের পরিমাণ বিটিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত সীমার (২ শতাংশ) মধ্যে থাকা আবশ্যক। অপারেটররা দাখিলকৃত মাসিক রিপোর্টে তাদের কলড্রপ নির্ধারিত সীমার মধ্যেই আছে দাবি করলেও এ বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে অনেক অভিযোগ আছে।

কলড্রপের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গ্রামীণফোন এক ই-মেইল বার্তায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছে, “রেডিও প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবায় কলড্রপ একটি স্বাভাবিক উপসর্গ। গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কে কলড্রপের পরিমাণ সবমসময়ই বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক নির্ধারিত মানদণ্ডের অনেক নিচে রয়েছে।

“গ্রাহক সংখ্যার বিচারে গ্রামীণফোনের কলড্রপের পরিমাণ অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় অনেক কমই রয়েছে। তবে গ্রাহকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে গ্রামীণফোন গ্রাহকদের কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে।”

রবির হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম এক ই-মেইল বার্তায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টেলিযোগাযোগ একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির সেবা। এ ধরনের সেবায় কলড্রপ খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তবে রবি নেটওয়ার্কে কল ড্রপের পরিমাণ ১ শতাংশের কম, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্ধারিত সীমার মধ্যেই আছে।”

বাংলাদেশে কলড্রপ শুধু মোবাইল ফোন অপারেটরদের ওপর নির্ভর করে না বলে দাবি করেন তিনি।

“এর সঙ্গে তরঙ্গের স্বল্পতা, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের দুর্বলতা,  ইন্টারকানেকশন, গ্রাহকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মানের  মতো অনেকগুলো বিষয় ও পক্ষ জড়িত।”

শাহেদ আলম বলেন, “নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে টাওয়ার তৈরির উপযুক্ত জায়গা পাওয়া এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অপারেটরদের জন্য। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যের কারণে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ তরঙ্গ এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অপারেটরদের তরঙ্গের স্বল্পতা পূরণ করা না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কলড্রপ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা কঠিন।”