তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক প্রচারের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উপর জো দিচ্ছেন বেসিসের নবনির্বাচিত সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।
Published : 02 Apr 2018, 11:49 PM
আগামী তিন বছরের জন্য বাংলাদেশের সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের এই পরিকল্পনা জানান তিনি।
নানা জটিলতা পেরিয়ে গত শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেসিসের কার্যনির্বাহী পরিষদে অধিকাংশ পদে বিজয়ী হয় মেট্রোনেট বাংলাদেশের কর্ণধার আলমাস কবীরের প্যানেল ‘টিম হরাইজন’।
সোমবার পরিষদের বৈঠকে সভাপতি নির্বাচিত হন আলমাস কবীর; গত বছর বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রী হওয়ার পর এই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
এরপর এবার বেসিস নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছিল শঙ্কা। বেসিসের ক’জন পরিচালক ও সদস্যদের ‘নিয়মভঙ্গের’ অভিযোগের মুখে নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের হস্তক্ষেপে এই নির্বাচনে স্থগিতাদেশ ওঠে।
নির্বাচনের বিরোধিতা করা পরিচালকদের সঙ্গে বেসিস পরিচালকদের দ্বন্দ্ব, অ্যাপিটকা অ্যাওয়ার্ড দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগের কথাও এ কদিন আলোচনায় ছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আলমাস কবীর বলেন, “নির্বাচনের ফলাফল যেহেতু হয়ে গেছে, এখন আমরা সবাই এক।”
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত কমিটির অডিট রিপোর্ট এখনও ফাইনাল হয়নি। ফাইনাল রিপোর্ট না পেলে এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।”
আলমাস কবীর নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘টিম হরাইজনের’ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ছিল ‘গ্রোথ ইকোসিস্টেম’র কথা।
সভাপতি হওয়ার পর তিনি বলেন, “গ্রোথ ইকোসিস্টেমের কথা বলছি আমরা। আইটি সেক্টরে এখন যে জনশক্তি রয়েছে, আমরা তাদের জন্য একটি সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে চাই।
“ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে ম্যানেজমেন্ট প্রসেস, মার্কেটিং, এইচআর ডেভেলপমেন্ট, লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্সি আর ফিনান্সিয়াল সাপোর্টসহ আরও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। উইদিন নেক্সট টু কোয়ার্টারের মধ্যে আমরা এটা তৈরি করে ফেলতে চাই।”
এই ‘সাপোর্ট সিস্টেম’ তৈরির মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
“এই সিস্টেম গড়ে তুলতে পারলে আমাদের মেম্বাররা ইমিডিয়েটলি বেনিফিট পাওয়া শুরু করবে, তাদের ব্যবসা প্রসার হবে। ”
বাংলাদেশের ইতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে আলমাস কবীর বলেন, “আমাদের আরও পজিটিভ ওয়েতে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এতদিন আমরা বলে এসেছি, বাংলাদেশে খুব সস্তায় ম্যানপাওয়ার পাবে। এখন আমাদের বলতে হবে, এখানে খুব বেশি দক্ষ জনশক্তি তোমরা পাবে।
“বাংলাদেশে চিফ লেবার পাওয়া যায়’ আরএমজি সেক্টরের মতো এমন প্রচারণা যদি করি আমরা, তবে সেটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় খুব ভালো হবে না।”
বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজার পরিস্থিতি বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তার দায়ও স্বীকার করে নেন বেসিসের নতুন সভাপতি।
“মার্কেট রিসার্সে আমাদের যে ডেটার প্রয়োজন, সে প্রয়োজনীয় রিয়েল ডেটা নেই। মার্কেটে কত লোক কাজ করছেন, লোকাল মার্কেটের সাইজ কত- এগুলো নিয়ে রিয়েল ডেটা কোথাও নেই। আমরা মার্কেট রিসার্চ করে একটা পেপার পাবলিশড করব। তখন আমরা যে ডেটা পাব, সেটার উপর নির্ভর করে আমাদের অ্যাকশন প্ল্যান পরিবর্তন হতে পারে।”
তিনি জানান, বেসিসের এই গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তি খাতের সার্বিক অবস্থার চিত্র উঠে আসবে। বিনিয়োগের পরিমাণ, বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে নানা সম্ভাবনার কথাও থাকবে তাদের এই প্রতিবেদনে।
আলমাস কবীর বলেন, “এ গবেষণায় আমাদের মেইন ফোকাস থাকবে স্কিলড ম্যানপাওয়ারের দিকে। বাজার বিবেচনায় এটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। আইটি সেক্টরে ক’টা দিকে মনযোগ দিয়ে সেদিকে ম্যানপাওয়ার ডেভেলপ করতে পারলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা আরও ভালো পজিশনে যাব।”
বেসিস সদস্যদের জন্য ইন্টারনেটের দাম ৫০ শতাংশ কমানো হলে তাদের রপ্তানিমুখী কার্যক্রম আরও বেগবান হবে দাবি করে সেদিনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে আসা শিক্ষার্থীরা যেন চাকরি বাজারে ঢুকতে বাধার সম্মুখীন না হন, সেজন্য ‘টপ- আপ’ ও ‘আপ স্কেলিং’ কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানান তিনি।
পাশাপাশি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিলেবাসে ‘কর্মমুখী শিক্ষার’ সিলেবাস প্রণয়নেও বেসিস কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানান ১২ বছর এ বিষয়ে শিক্ষকতা করে আসা আলমাস কবীর।