সরকারের সায় পেল ‘রাইড-শেয়ারিং’ নীতিমালা

উবার, পাঠাওয়ের মত স্মার্টফোন অ্যাপনির্ভর ট্যাক্সি সেবার ক্ষেত্রে বিআরটিএ থেকে সেবাদানকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও মোটরযানের তালিকাভুক্তির সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2018, 09:12 AM
Updated : 15 Jan 2018, 12:06 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা’ অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “রাইডিং-শেয়ারিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উবার বা বিভিন্ন এজেন্সি কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেটাকে আইনি কাঠামোতে আনতে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।”

আট অনুচ্ছেদের এই নীতিমালার আওতায় রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সরকারের তালিকাভুক্ত হবে এবং কোন কোন শর্তে তালিকাভুক্ত করা হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন শিফউল।

>> রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য বিআরটিএ থেকে রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ এবং মোটরযান মালিককে রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিতে হবে।

>> রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টিআইএন থাকতে হবে, পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হলে পাবলিক বা প্রাইভেট কোম্পানির সব ধরনের শর্ত মেনে চলতে হবে।

>> যাত্রী চাহিদা, সড়কের নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি, রাইড-শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, সেবাদাতা মোটরযানের সংখ্যার ভিত্তিতে রাইড-শেয়ারিং সেবা এলাকা নির্ধারণ করবে বিআরটিএ। রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় অফিস থাকতে হবে।

>> রাইড-শেয়ারিং সেবায় যুক্ত হতে বিআরটিএ নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী মোটরযান নিয়োজিত করতে হবে। ঢাকা পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত এলাকার জন্য কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য কমপক্ষে ৫০টি এবং দেশের অন্যান্য শহর ও মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে ২০টি বাহন থাকতে হবে একটি কোম্পানির।

>> ব্যক্তিগত মোটরযান যেমন- মোটর সাইকেল, মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্সর রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় তালিকার্ভুক্ত হতে পারে।

>> রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, ইন্সুরেন্স এবং তালিকাভুক্তির সনদ হালনাগাদ থাকতে হবে।

>> রাইড-শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্তির সনদ পাওয়ার পর রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযানের মালিক ও চালকের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে হবে যেখানে সব পক্ষের অধিকার এবং দায়দায়িত্বের বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। মোটরযান মালিক বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এক মাস আগে লিখিত নোটিস দিয়ে চুক্তির সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারবে।

>> নির্ধারিত স্ট্যান্ড এবং অনুমোদিত পার্কিং স্থান ছাড়া কোনো রাইড-শেয়ারিং মোটরযান যাত্রী তোলার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে পারবে না।

>> এই নীতিমালার অধীনে একজন মোটরযান মালিক একটি মোটরযান রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালনার অনুমতি পাবেন।

>> ব্যক্তিগত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর এক বছর পার না হলে রাইড-শেয়ারিং সেবায় নিয়োজিত করা যাবে না।

>> বিআরটিএ এর ওয়েব পোর্টালে রাইড-শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতাধীন সব মোটরযানের তালিকা একটি শ্রেণিতে রাখতে হবে, যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগও সেখানে থাকবে।

সনদ পাওয়ার পদ্ধতি

বিআরটিএ থেকে তালিকাভুক্তির সনদ ছাড়া কোনো রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনা করা যাবে না জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির জন্য বিআরটিএ-তে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে তালিকাভুক্তির ফি হিসেবে এক লাখ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স, ই-টিআইএন সনদ, ভ্যাট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। এই ফি’র পরিমাণ সরকার সময়ে সময়ে পরিবর্তন করতে পারবে।

শফিউল জানান, তালিকভুক্তির আবেদন পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তা যাচাই-বাছাই করে এক বছর মেয়াদে রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করে সনদ দেবে। ওই সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে নবায়নের আবেদন করতে হবে, প্রতি বছরের জন্য নবায়ন ফি ১০ হাজার টাকা।

তালিকাভুক্তির সনদ হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে এক হাজার টাকা দিয়ে প্রতিলিপি সংগ্রহ করা যাবে। রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বা অন্য কোনো পরিবর্তনের কারণে সনদে কোনো সংশোধনী করতে হলে এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে।

রাইড শেয়ারিং মোটরযান তালিকাভুক্তির সনদ একবারে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য দেওয়া হবে। মেয়াদ শেষে তা নবায়ন করা যাবে। নবায়ন ফি মোটার সাইকেলের জন্য ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য মোটরযানের জন্য এক হাজার টাকা।

এ ধরনের সেবায় ভাড়া ঠিক হবে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন অনুযায়ী। তবে মোটরসাইকেলের ভাড়া কীভাবে নির্ধারিত হবে তা জানাতে পারেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এই নীতিমালা না মানলে ভোক্তারা অনলাইনে অভিযোগ করতে পারবেন জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তালিকাভুক্তির সনদ বাতিল, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করাসহ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাইসাইকেল এই নীতিমালায় আওতায় আসবে না, তবে অটোরিকশা রাইড-শেয়ারিংয়ের জন্য তালিকভুক্ত হতে পারবে।

রাইড-শেয়ারিংয়ের জন্য তালিকাভুক্তির সনদ দিয়ে সরকার আয় করবে জানিয়ে শফিউল বলেন, রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর থেকে সরকার আলাদাভাবে কোনো অর্থ নেবে না।

২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকায় ব্যক্তিগত যানবাহন দিয়ে যাত্রীসেবা দেওয়া শুরু করে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উবার। তার আগে একইভাবে মোটর সাইকেলে যাত্রীসেবা দেওয়া শুরু করে স্যাম। পরে আসে পাঠাও। এসব সেবা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বিআরটিএ প্রথমে স্যামকে তাদের কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দেয়। পরে উবারকেও একই ধরনের চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের আইনে তাদের ওই কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এরপর ২৯ নভেম্বর উবার ও স্যাম-এর প্রতিনিধিরা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন।

মোবাইল অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খসড়া তৈরি শুরু করে বিআরটিএ।

বিআরটিএ-এর এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি এই খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। গত ২১ জুন এটি বিআরটিএ থেকে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সোমবার তা সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেল।