বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় করার উপর জোর দিয়েছেন অরুণ জেটলি।
Published : 03 Oct 2017, 09:35 PM
তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসার পর প্রথম কর্মসূচিতে প্রতিবেশী দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারতের অর্থমন্ত্রী।
ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতির মিলের বিষয়টি তুলে ধরে জেটলি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের সময় দুদেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক বন্ধন তৈরি হয়েছে সেই বন্ধনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দুই পক্ষেরই।
দুই দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
“দুই দেশের কৃষি, ওষুধ, পর্যটন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা-গবেষণা এমনকি চলচিত্র শিল্পেও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ সব খাতে যৌথ বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে দুদেশের আরও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।”
আলোচনায় বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দুই দেশের বাণিজ্যের পাল্লা ভারতের দিকে ঝুঁকে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ভারতের অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
তোফায়েল জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ছয় বছর আগে এই বাণিজ্য ছিল ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বিপরীতে ভারত থেকে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বলে তোফায়েল জানান।
দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরেই ‘এন্টি ডাম্পিং’ বাধা দূর করাসহ ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ করে দিতে জেটলিকে অনুরোধ করেন তিনি।
ভারতের অর্থমন্ত্রী বলেন, “ছোটো-খাটো যে সমস্যা আছে সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে পারব।”
কম দূরত্ব, সহজ যোগাযোগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে নতুন নতুন খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে ভারতের দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা শিল্পোৎপাদনে গতি আনবে বলেও জেটলি আশাবাদী।
“এই অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি ভারতীয় সীমান্তের খুবই কাছাকাছি অবস্থিত। এটি যৌথ সহযোগিতার বড় একটি উদাহরণ হবে।”
সোনারগাঁও হোটেলে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিঅঅই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফআইসিসিআই সভাপতি পঙ্কজ পাটেল, এফবিসিআইর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য রাখেন।
অরুণ জেটলি গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ টেক্সটাইল শিল্পেও বিশ্বের নজর কেড়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অনেক ভালো করছে।
বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণে দুই দশক আগ থেকেই ভারত সরকার বিশেষ নীতি গ্রহণ করে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। পাশাপাশি ভারতের বেসরকারি খাতও গত দুই দশকে বেশ অগ্রগতি দেখিয়েছে।
“এই সময়ের মধ্যে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি দিয়েছে ভারত সরকার,” বলেন জেটলি।
তিনি বলেন, এখন তার সরকার বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে গ্রামীণ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে। আগামী এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহ নির্মাণ সরকারের অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনায় রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আমন্ত্রণে জেটলি এই সফরে এলেন।
দুপুরের পর একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার কুর্মিটোলায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে নামলে তাকে অভ্যর্থনা জানান মুহিত।
ভারতের অর্থ সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছেন তিনি।
এই সফরে তৃতীয় দফায় বাংলাদেশকে ভারতের ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হবে বলে সোমবার ভারতীয় দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের জন্য সাড়ে চারশো কোটি ডলার ঋণের ঘোষণা দিয়েছিল নয়া দিল্লি।
বুধবার সকাল ১০টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুই অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তৃতীয় দফার এই ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে ‘ডলার লাইন অব ক্রেডিট’ চুক্তি সই হবে। তাহলে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার পাওয়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সুরক্ষার জন্য দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তি নিয়ে ‘যৌথ ব্যাখ্যামূলক নোটও স্বাক্ষরিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ভারতের অর্থমন্ত্রী এদিন সোনারগাঁও হোটেলে সকাল সাড়ে ১১টায় পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ ও ভারতীয় হাই কমিশনের উদ্যোগে ‘ভারত সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ’ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। তার বক্তৃতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সরাসরি দেখানো হবে।
এছাড়া দুই অর্থমন্ত্রী যৌথভাবে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ‘ক্যাশলেস ভিসা সার্ভিস’ পরিচালনার নতুন সেবা এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঢাকা কার্যালয়ের উদ্বোধন করবেন।