জালিয়াতিতে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জড়িত থাকার ‘প্রমাণ’ পাওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হবে।
মঙ্গলবার বিকালে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের তলবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “দুদককে বা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সংসদীয় কমিটি ডাকতে পারে কি না, সেটা নিয়ে কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। কমিটি কার্যপ্রণালীবিধি পর্যালোচনা করে দেখেছে, দুদককে ডাকা যাবে।”
এ বিষয়ে প্রয়োজনে কমিটি স্পিকারের অনুমতি নেবে বলেও জানান সংসদীয় কমিটির সভাপতি।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২০৩ বিধিতে বলা আছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড, কাগজপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তলব করার ক্ষমতা কমিটির থাকবে। কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য বা দলিল-দস্তাবেজ কমিটির কাজে প্রয়োজনীয় কি না, সেই প্রশ্ন উত্থাপিত হলে বিষয়টি স্পিকারের কাছে পাঠাতে হবে এবং স্পিকার যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সরকার দলিল জমা দেওয়ার বিষয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারবে।
গত অগাস্ট মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে দুদকের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটি।
ওই বৈঠকে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “জালিয়াতির কারণে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
কমিটি সদস্য ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “কমিটি মনে করছে দুদকের পদক্ষেপ যথাযথ হয়নি। কারণ ব্যাংকের তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অথচ দুদকের তদন্তে তাদেরকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। একাধিক সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। অবশ্যই এর একটি সুরাহা করা হবে।
কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুদকের দায়িত্ব দুর্নীতিবাজ ধরা। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জলজ্যান্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেটা দুদকের চোখে পড়ে না। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, দুদককে ধরবে কে?
“বেসিক ব্যাংকের টাকা লোপাটের সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ জড়িত, কর্মকর্তারা জড়িত। একজন লোক হিসাব নম্বর খোলার একদিন পর ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে এর সবই প্রমাণিত। অথচ দুদকের তদন্তে কিছুই ধরা পড়ছে না!”
গত ২১ সেপ্টেম্বর বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় রাজধানীর তিনটি থানায় মোট ১৮টি মামলা করে দুদক। গুলশান থানায় ৮টি, মতিঝিল থানায় ৫টি এবং পল্টন থানায় ৫টি মামলা করা হয়।
মামলাগুলোতে ব্যাংকের দিলকুশা, শান্তিনগর ও গুলশান শাখার সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ২৬ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হলেও তাতে সাবেক চেয়ারম্যান কিংবা পরিচালনা পর্ষদের কারও নাম নেই।
এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ ও গবেষণা) শামসুল আরেফিন সম্প্রতি বলেছিলেন, “আমাদের কাছে যে কাগজপত্র ছিল তার ভিত্তিতেই মামলা করা হয়েছে। তদন্ত পর্যায়ে বিষয়টি বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হবে।”
সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
ওই বৈঠকে বেসিক ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ব্যাংক ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, ক্ষেত্র বিশেষ জাল দলিল গ্রহণ করে ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ঋণ দিয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। জমির মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে ‘জামান বেসিক টাওয়ার’ কেনায় ৭৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
চার বছর আগে বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
অনিয়মের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে গত বছরের ২৫ মে অপসারিত হন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম। এর আগে ব্যাংকের আট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।
ওই বছরের জুলাই মাসে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু।