অর্ধকোটি টাকার বেশি মূল ঋণ রয়েছে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোম্পানি এ সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 28 Oct 2022, 12:05 AM
ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে এককালীন আড়াই শতাংশ অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে বস্ত্রখাত বহির্ভূত রুগ্নশিল্পকে ঋণচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে দেওয়া সুবিধাকে স্বাগত জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন মনে করছেন, এর ফলে রুগ্নশিল্প খাতের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অর্থনীতির স্বার্থে শিল্পবান্ধব এ সিদ্ধান্তের’ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সচিবকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে শর্ত সাপেক্ষে পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন রুগ্ন শিল্পের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূল ঋণের অনিষ্পন্ন ঋণ হিসাবগুলো অবসায়নের সুযোগ দেয়।
এজন্য একটি ‘এক্সিট পলিসি’ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ন্যূনতম আড়াই শতাংশ এককালীন অর্থ পরিশোধ এবং বাকি অর্থ সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে কিস্তি ভিত্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত বস্ত্রশিল্প বহির্ভূত অন্যান্য রুগ্ন শিল্পের কোম্পানিগুলোর জন্য এ সুবিধা দেওয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এফবিসিসিআই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়,
“উদ্যোক্তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে রুগ্নশিল্পে পরিণত হওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে নীতিগত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে পুনর্বাসন ও জাতীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এফবিসিসিআই দীর্ঘদিন ধরেই এই নীতি সহায়তার দাবি জানিয়ে এসেছে।
“এরই প্রেক্ষিতে তালিকাভূক্ত নন-টেক্সটাইল খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে এক্সিট সুবিধা দিল বাংলাদেশ।”
কী আছে এক্সিট পলিসিতে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত ও সুপারিশকৃত উদ্যোক্তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে রুগ্ন, নন-টেক্সটাইল খাতের (গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাত ব্যতীত) শিল্প প্রতিষ্ঠান (শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিরাষ্ট্রীয়করণ ও আইন-১ শাখা কর্তৃক ১৩/০১/২০১১, ১৬/০৪/২০১২ ও ০১/১১/২০১২ তারিখে ইস্যুকৃত স্মারকের সাথে সংযুক্ত তালিকা মোতাবেক) এর মধ্যে ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকার অধিক মূল ঋণ বিশিষ্ট অনিষ্পন্ন ঋণ হিসাবসমূহ অবসায়নের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত এক্সিট পলিসি অনুসরণীয় হবে:
(ক) ব্যাংক কর্তৃক এক্সিট সুবিধা প্রদানের তারিখ হতে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বছর সময়ের মধ্যে কিস্তি ভিত্তিতে ঋণ হিসাব সমন্বিত হবে। তবে, স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে কোন ঋণ সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে উক্ত ৩ (তিন) বছরের মধ্যে এককালীন ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে পারবে। উভয় ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ সমন্বিত না হলে এ সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে;
(খ) আলোচ্য এক্সিট সুবিধার আওতায় কিস্তি ভিত্তিক এককালীন যে কোন ধরনের পরিশোধসূচি প্রদান করা হোক না কেন, সম্পূর্ণ ঋণ সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবকে শ্রেণিকৃত হিসেবে প্রদর্শন করতে হবে।
(গ) বিদ্যমান মূল ঋণের বিপরীতে ন্যূনতম ২.৫% এর সমপরিমাণ অর্থ ডাউন পেমেন্ট বাবদ নগদে আদারের পর এ সার্কুলারের আওতায় এক্সিট সুবিধা প্রদান করা যাবে। ডাউন পেমেন্ট বাবদ আদায়কৃত অর্থ সুদ মওকুফোত্তর দায়ের সাথে সমন্বয় করতে হবে।
(ঘ) বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৬, তারিখ: ২১/০৪/২০২২ ও বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-১৮, তারিখ: ২৪/০৫/২০২২ এ বর্ণিত নির্দেশনা পরিপালন সাপেক্ষে আলোচ্য রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুকূলে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে অর্থায়নকারী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ স্বীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।
(ঙ) সুদ মওকুফ (যদি থাকে) পরবর্তী ঋণ স্থিতির উপর ব্যাংক সর্বোচ্চ কস্ট অব ফান্ড হারে সুদারোপ করতে পারবে।
(চ) এ নীতিমালা জারির তারিখ হতে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে ডাউন পেমেন্ট বাবদ ন্যূনতম ২.৫% অর্থ নগদে প্রদান করে গ্রাহক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বরাবর আবেদন করবে। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলে এতদসংক্রান্ত আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না
(ছ) আলোচ্য নীতিমালার আওতায় ঋণগ্রহীতার আবেদন প্রাপ্তির তারিখ হতে ৪৫(পঁয়তাল্লিশ) দিনের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহকের আবেদনে বর্ণিত / যাচিত বিষয় নিষ্পত্তি করতে হবে।
(জ) ব্যাংক, গ্রাহক ও ক্রেতা আগ্রহী হলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আলোচ্য ঋণের বিপরীতে বন্ধকী প্রদানকৃত সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ঋণ সমন্বয় করা যাবে।
(ঝ) ব্যাংক কর্তৃক এ সুবিধা প্রদানের তারিখ হতে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।