Published : 16 Jun 2024, 04:17 PM
ভাসমান অবস্থায় কোরবানির পশু বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও ঈদের আগে আগে রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ছাগল, এমনকি গরুও বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।
অনেক ক্রেতা সময়, শ্রম, হাটের হাসিল এবং পশু পরিবহনের ভাড়া বাঁচাতে নিজের এলাকায় ব্যাপারিদের কাছ থেকেই গরু বা ছাগল কেনেন। তাই হাটের পাশাপাশি অলি-গলির ভিতরেও ক্রেতা কম নয়।
কোনো কোনো ব্যাপারি বিভিন্ন অলি-গলিতে ঘুরে ঘুরে পশু বিক্রি করেন। আবার কেউ রাস্তার কোনো এক পাশে অবস্থান নিয়ে ক্রেতার সঙ্গে দরদাম চালান।
শনিবার দুপুরে তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায় দেখা হল ফজলু মিয়ার সঙ্গে। রাস্তার এক পাশে ১০টি ছাগল নিয়ে বসে ছিলেন তিনি।
কথায় কথায় জানালেন, নরসিংদীর রায়পুরা থানার কাচাকান্দি থেকে শুক্রবার এসেছেন ঢাকায়। সঙ্গে করে ছাগল এনেছিলেন ৮০টি। বিভিন্ন অলি-গলিতে ঘুরে শনিবার বিকালের মধ্যেই তার ৭০টি ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে। এখন বাকি ১০টি বিক্রি হলেই নরসিংদী চলে যাবেন।
ফজলু বলেন, “ছাগল রাখার জন্য এইখানেই একটা টিনশেড ঘর ভাড়া নিছি। তিনদিনে ১৫০০ টাকা ভাড়া। বাজারের চেয়ে কমে ছাড়ছি, তাই প্রথমদিনই ৭০টা বিক্রি করতে পারছি। সবই বেচছি এই এলাকায়। এখন ১০টা আছে।”
তেজকুনিপাড়াতেই কেন ছাগল বিক্রি করতে এলেন? ফজলু বললেন, এই এলাকায় তিনি গত ২০ বছর ধরে মুরগি বিক্রি করেন।
“সবাই চিনে আমারে। গত ১২ বছর কোরবানির আগে এই ব্যবসাটা করি। সঙ্গে আরো দুইজন লোক নিছি। একা তো সব পারা যায় না। দুই-তিন দিনে লাভ থাকে দেড় লাখের উপরে। অবশ্য খরচাও আছে। পরিশ্রম করতে হয় বেশ।"
ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে থেকে নরসিংদীর বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে তুলনামূলক কম দামে ছাগল সংগ্রহ করেন ফজলু। এরপর সেগুলো নিয়ে ঢাকায় আসেন।
বিজয় সরণি এলাকায় চারটি ছাগল নিয়ে বসে ছিলেন মমিনুল ইসলাম। শুক্রবার রাতে দিনাজপুর থেকে ২১টি ছাগল নিয়ে এসেছিলেন ঢাকায়। ১৫টি বিক্রি শেষ করেছেন।
তার ভাষ্য, হাটের চেয়ে মহল্লার অলি-গলিতে আগেভাগেই বিক্রি করা যায়, দামও পাওয়া যায় তুলনামূলক বেশি।
“হাটে আমদানি প্রচুর। তাই এলাকায় বেচি। আগে কখনো আসি নাই। আইজই প্রথম। এলাকায় বেচা মন্দ না। বেচা ভালোই হইতাছে। ভিড় নাই, ঝামেলা নাই।”
মমিনুলের কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনলেন আরিফ মিয়া।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, হাটের চেয়ে অলিগলির বিক্রেতারা ছাগলের দাম তুলনামূলক কম হাঁকেন।
“গতকাল আমি গিয়েছিলাম তেজগাঁওয়ের পাশের হাটে আর বসিলার হাটে। সেখানে দাম বেশি দেইখা কিনা হয় নাই। আবার হাসিল দেওয়া লাগে। নিয়ে আসা ঝামেলা।”
অলি-গলিতে শুধু ছাগলই নয়, গরুও পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেগুলো আকারে খুব বড় নয়। ছোটো থেকে মাঝারিই বেশি।
বিজয় সরণি এলাকায় ঘুরে ছয়টি গরু বিক্রি করেছেন নজরুল ইসলাম। এখন আছে দুটো। আশপাশের বাসিন্দারাই তার ছয়টি গরু কিনেছেন। সেগুলো দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজারের ভেতরে ছিল।
নজরুল জানালেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি।
“বাজারে প্রচুর গরু। বড় বড় গরুর সামনে আমার গরুর দিকে মানুষের নজর পড়বে না। তাই এখানে বিক্রি করতেছি। মানুষও হাতের নাগালে পাচ্ছে। দামও খুব বেশি চাচ্ছি না।”
গরু কিনতে অলি-গলিতে ঘুরে দাম জিজ্ঞেস করছিলেন আশরাফুজ্জামান। তিনি কিনবেন এক লাখের ভিতরে। কিন্তু তেজগাঁওয়ে পছন্দমত পাচ্ছেন না।
আশরাফুজ্জামান বললেন, “ফার্মগেট, সাতরাস্তার দিকে গিয়ে দেখি পাই কিনা। একেবারেই না পেলে হাট থেকে কিনব। হাটে তো হাসিলের টাকা অনেক। গাড়িতে করে আনার ঝামেলও আছে। এরচেয়ে এলাকায় যদি পাওয়া যায় টাকাও বাচে, ভোগান্তিও লাঘব হয়।”