‘‘নিজের জন্যই কিনছি-নিজেকেই দিচ্ছি। ফুলের গন্ধ ভালো লাগে তাই নিলাম, এখন বইমেলায় যাব,’’ শাহবাগে সহাস্যে বললেন এক তরুণী।
Published : 13 Feb 2023, 11:36 PM
রাজধানীর ফুল বাজার হিসেবে পরিচিত শাহবাগের অদূরেই অমর একুশে বইমেলা। এ বাজারের সামনের পথ ধরেই মেলায় যান দর্শনার্থীদের বড় অংশ। যাবার পথে থামছেন অনেকেই; চারিদিকে চোখ বুলিয়ে রঙিন সব থোকা থেকে ফুল বেছে নিচ্ছেন নিজের বা প্রিয়জনের জন্য।
এমনই একজন মিরপুর থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী তানিয়া আক্তার দুই বান্ধবীসহ বইমেলায় যাবার পথে ফুল বাছাইয়ে মশগুল ছিলেন। কার জন্য কিনছেন- এমন প্রশ্নে চোখ তুলে তাকালেন, সহাস্যে বললেন, ‘‘নিজের জন্যই কিনছি-নিজেকেই দিচ্ছি। ফুলের গন্ধ ভালো লাগে তাই নিলাম, এখন বইমেলায় যাব।’’
চার বছরের মেয়ে সুরাইয়া জাহানকে নিয়ে ফুলের এ বাজারে এসেছেন শারমিন আক্তার। মেয়ের পছন্দের লাল রঙের ফুল দিয়ে তৈরি মাথার ব্যান্ড কিনেছেন। সেটি মাথায় দিয়েই পাশে থাকা মামা হৃদয়ের কাছে বায়না ধরলো ছবি তোলার।
ফাগুন ও ভালোবাসা দিবসের উৎসবকে সামনে রেখে এমন ক্রেতা সমাগমের কথা মাথায় রেখেই শাহবাগের ব্যবসায়ীরা সোমবার ফুলের সংগ্রহ বাড়িয়েছেন অন্য দিনের চেয়ে বেশি।
ফুটপাত ও সড়কের পাশে লাল, হলুদ, সাদা রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, ডালিয়া, গাজানিয়া জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকাসহ দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। সতেজ ফুলের ঘ্রাণ দূর থেকেও মিলছে। দিনভরই ক্রেতারা আসছেন। বিশেষ করে বিকালে মেলা শুরুর পর ক্রেতা-দর্শনার্থীর দেখা মিলেছে বেশি বলে জানান দোকানিরা।
মঙ্গলবার পহেলা ফাগুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ধুমিয়ে বিক্রি হবে বলেও প্রত্যাশা তাদের। এ দুটি দিবস পৃথক হলে তাদের বিক্রি আরও বেশি হত, বলছেন অন্য ব্যবসায়ীদের মত রফিকুল ইসলামও।
গতবারের চেয়ে এবার দাম একটু চড়তি হওয়ায় বিক্রির পরিমাণও কম বলে জানালেন তিনি। তবে দাম বাড়তি হলেও যোগান রয়েছে পর্যাপ্ত।
ঢাকার লালবাগ কেল্লা থেকে দোকানের জন্য ফুল কিনতে ঢাকার সবচেয়ে বড় বাজার শাহবাগে এসেছেন কলেজে পড়ুয়া কিশোর সাব্বির হোসেন। বড় ভাইয়ের নিয়মিত ব্যবসা ফ্লেক্সিলোডের দোকানে ১৪ ফেব্রুয়ারি শুধু ফুল বিক্রির পরিকল্পনা তাদের। এমন অনেক মৌসুমী ক্রেতাও পাচ্ছেন দোকানিরা।
বিক্রেতারা জানান, লাল গোলাপ ও গাঁদা ফুল বেশি কিনছেন তরুণ-তরুণীরা।
ভাই ভাই পুষ্প বিতানের বিক্রয়কর্মী জাফর আহমেদ জানান, গোলাপ মান ভেদে প্রতিটি ২০ থেকে ৬০ টাকা, জারবেরা ১০ থেকে ২০ টাকা, গ্লাডিওলাস ২০ থেকে ২৫ টাকা ও রজনীগন্ধা ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আবার সংখ্যা ও বিভিন্ন ফুলের সমন্বয়ে কিনলে বিশেষ দরে বেচছেন তারা। গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়।
পাইকারি বাজারে মান ও রঙ ভেদে রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে একশটি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। গাঁদা ফুলের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাবুল প্রসাদ জানান, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ঘিরে ঢাকায় ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে বলে তারা আশা করছেন। গতবার যা ছিল ৩৫ কোটি টাকার ঘরে। এ তিন দিবস ছাড়া বাংলা নববর্ষে ফুল বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি।
বছরে বর্তমানে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ফুলের বাজারে সারা বছর নানা আয়োজনকে কেন্দ্র করে ফুল বিক্রি হলেও উৎসবের সময়ই বিক্রি বেশি বলে জানান তিনি।