সরবরাহ প্রচুর, দাম কমার লক্ষণ নেই চালের

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দাম বেড়েছে চালের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 08:42 PM
Updated : 6 Jan 2023, 08:42 PM

ঢাকার পীরের বাগে একটি মুদি দোকানে চাল কিনতে এলেন স্থানীয় বাসিন্দা আরমান রহমান। পরিকল্পনায় ছিল পুরো এক বস্তাই কিনবেন; তবে মোটা চাল পাইজামের কেজি ৫৫ টাকা দেখে হতাশ চেহারায় নিয়ে গেলেন পাঁচ কেজি।

বৃহস্পতিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নতুন ধানের চাল তো বাজারে এসেছে এক মাস হল; দাম কমার তো কোনো লক্ষণ নেই। সরু চাল ছেড়ে মোটা চাল ধরেছি; খরচ হচ্ছে আগের মতই।”

হতাশ আরমান জানান, আমনের মৌসুমে দাম কমলে তিন সদস্যের পরিবারের জন্য এক বস্তা চাল কিনবেন ভেবেছিলেন। দাম বাজেটের মধ্যে না নামায় এক মাস ধরে ৫ কেজি করে কিনছেন তিনি।

ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাস ধরে মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে অন্তত দুই টাকা করে কমেছে। তবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকায় ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় চালের দাম এখনও বেশ বাড়তি।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সরু চালের দাম ৩ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম আড়াই শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৫ শতাংশ কমেছে। তবুও এক বছর আগের তুলনায় সরু চাল আড়াই শতাংশ, মাঝারি চাল সাড়ে ৫ শতাংশ এবং মোট চাল ৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবে, ঢাকার বাজারগুলোতে এখন সরু চাল প্রতিকেজি ৫৮ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৬২ থেকে ৭৫ টাকা; এক বছর আগে দর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাঝারি চাল এখন প্রতিকেজি ৫২ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং এক বছর আগে ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হত।

আর দামে কিছুটা কম হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ কেনেন মোটা চাল, মান ভেদে যা এখন প্রতিকেজি ৪৬ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে যা ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা এবং এক বছর আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

পীরেরবাগের মুদি দোকানি আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের দাম কমার আশায় আমিও আছি। চালের দাম কমে যেতে পারে এমন আশায় মিরপুর ১ নম্বর বাজার থেকে কম পরিমাণে চাল কিনছি। বিক্রিও হচ্ছে কম।”

দাম কমলে বিক্রির পরিমাণ বাড়বে তখন মাস শেষে মুনাফাও বেশি হবে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

চলতি আমন মৌসুমে প্রতিকেজি ৪২ টাকা দরে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। গত এক মাসেরও বেশি সময়ে মাত্র দেড় লাখ টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে। সরকার আমন ধানের সর্বোচ্চ দর প্রতি মণ ১১২০ টাকা নির্ধারণ করলেও বিভিন্ন জেলায় ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায় নতুন ধান বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। যে কারণে সরকারের সংগ্রহ হচ্ছে কম।

মিরপুর শাহ আলী মার্কেটে চালের পাইকারি দোকান জনতা রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত এক মাস ধরে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। মোটা চাল ও আটাশ চালের দাম কিছুটা কমেছে। ১৫ ডিসেম্বরের পর বস্তায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে কমেছে। তবে মিনিকেট বা সরু চাল এখনও ঊর্ধ্বমুখী। আগামী বোরো মৌসুমের ধান আসার আগে সরু চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন তিনি।

চালের বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ওঠানামার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, বাজারে এখন গুটি স্বর্ণা বস্তা (৫০ কেজি) ২২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা এক মাস আগে ২৩০০ থেকে ২৩৫০ টাকায় ছিল। বিআর ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ২৬০০ টাকা করে, যা এক মাস আগে ২৭০০ টাকা ছিল। তবে পুরনো ২৮ চাল এখনও আগের মতই ২৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

“পাইজাম নতুন চাল বস্তা ২৩০০ থেকে ২৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট বা সরু চালের দাম প্রতিবস্তা ৩৪০০ টাকা- প্রতিকেজি ৬৮ টাকা থেকে ৭২ টাকা। এরফান ও মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের সরু চাল প্রতিকেজি ৭৩ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।”

Also Read: বন্যায় শূন্য ভাড়ার ‘পূর্ণ’ হচ্ছে আমনে

Also Read: ধানের মওসুমে চাল আমদানি করছে সরকার

চালের দাম কমার পাশাপাশি বিক্রিও কমেছে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী।

“বাজারে এখন কোনো বেচাকেনা নেই। যেমন শীত, তেমন আমরাও সারাদিন জবুথবু হয়ে বসে থাকি। মানুষজন চাল কিনছে না। প্রতিবছর ডিসেম্বরের দিকে বিক্রি একটু কমে যায়। কারণ সেই সময় মানুষজন বাচ্চাদের ভর্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এবার ডিসেম্বর শেষে জানুয়ারি মাস এসেছে। তবুও বেচাকেনায় গতি আসেনি।”

পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকায় মায়ের দোয়া রাইস এজেন্সিতে খুচরায় ২/৪ কেজি চাল যেমন কেনা যায়। আবার কিছুটা সাশ্রয়ে বস্তা আকারেও চাল মেলে। এ দোকানের কর্মী মোহাম্মদ ফেরদৌস জানান, তারা রশিদ মিনিকেট, ডলফিন মিনিকেট (সরু চাল) বস্তাপ্রতি ৩৫০০ টাকা, মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের সরু চাল ৩৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অধিকাংশ সরু চাল পাওয়া যায় প্রতিবস্তা ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকায়।

সরু চালের দাম না কমলেও গত এক মাসে মোটা ও মাঝারি চালের দাম কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিআর ২৮ চাল কিছুটা কমেছে। এক মাস আগে ৫০ কেজির বস্তা ২৮০০ টাকা বিক্রি করতাম, কেজি বিক্রি করতাম ৫৬ টাকায়। এখন মাঝারি চালের বস্তা ২৬০০ টাকায় নেমেছে। পাইজাম ২৬৫০ থেকে কমে বস্তা ২৫০০ টাকায় এসেছে। গুটি স্বর্ণার দাম প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা কমে ২৩০০ টাকায় আসছে। খুচরায়ও সেই হিসাবে কমেছে।

Also Read: চাল ও গম আমদানির এলসিতে ন্যূনতম মার্জিন

Also Read: চকচকে চাল পুষ্টিহীন, বর্জন চান খাদ্যমন্ত্রী

“সামনে দাম আরও কমে কি না সেটাই দেখার বিষয়। কারণ বাজারে ক্রেতার চাপ নেই, চালের চাপ আছে। আমরা আশা করছি দাম একটু কমবে,” বলেন ফেরদৌস।

আমন মৌসুমে নতুন সুগন্ধি চাল আসলেও এগুলোর দাম কমেনি বলেও দাবি করেন অনেক বিক্রেতা। বাজারে এখনও প্রতিকেজি ১৪০ টাকা দরে সুগন্ধি চাল বিক্রি হচ্ছে। মূলত গত ছয় মাস ধরেই সুগন্ধি চালের দাম বাড়ছে। এর আগে খুচরায় প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করত।