সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বে-টার্মিনাল প্রকল্পসহ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে। তারা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করবে।
Published : 16 May 2024, 09:52 PM
চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ।
আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এডি পোর্টসের বাংলাদেশ এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিনে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বে-টার্মিনাল প্রকল্পসহ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে। তারা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করবে।
টার্মিনালটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ১০ লাখ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার এবং ৭০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে।
সে কারণে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের সঙ্গে এই সমঝোতাকে পরিবহন খরচ ও সময় কমিয়ে আমদানি ও রপ্তানি দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন কর্মকর্তারা।
সমঝোতা স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, “বর্তমানে বিদেশি বন্দর পরিচালনাকারীরা চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করছে। আমি সম্ভাবনা ও স্বপ্ন দেখি, একটি সময় আসবে, যখন চট্টগ্রাম বন্দর পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করবে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বন্দরের সক্ষমতা অর্জন করেছে। মোংলা বন্দরেরও আপগ্রেডেশন হচ্ছে। মোংলা বন্দরও চট্টগ্রাম বন্দরের মত সক্ষমতা অর্জন করবে।
“পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েছে। এটা একটা নতুন অনুভূতি। আগে মাদার ভেসেলে পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হতে হত। বর্তমানে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হচ্ছে। এতে করে নির্ভরশীলতা কমে যাবে।”
তিনি বলেন, “মাতারবাড়ি বন্দর আঞ্চলিক 'হাব' এ পরিণত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। খুব শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। বে টার্মিনাল নির্মিত হলে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ আসা যাওয়া করবে। জোয়ার ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর অন্য ধরনের উচ্চতায় চলে যাবে। বে টারমিনালের সাথে রোড, রেলওয়ে কানেক্টিভিটি থাকবে। পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
“আমাদের জানালা খোলা আছে। দেশের যে কোন বন্দরে বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেব। বে টার্মিনাল বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাই।”
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগরের তীরে ‘বে- টার্মিনাল’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০১৭ সালে কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়।
কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে। গতবছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত মাস্টার প্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করেন।
১,২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল এবং ১,৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে মাস্টার প্ল্যানে। তিনটি টার্মিনালের দৈর্ঘ্য ৪.৯৫ কিলোমিটার।
মাস্টার প্ল্যানে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। চ্যানেলে যথোপযুক্ত নাব্য থাকায় সেখানে ১২ মিটার ড্রাফটের এবং ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, আবহাওয়া এবং সাগরের বড় বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে একটি ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার বা ঢেউনিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বে- টার্মিনাল থেকে বহিঃনোঙ্গরের দূরত্ব এক কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর এবং আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ যৌথভাবে নির্মাণ করবে।
১,২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি কন্টেইনার টার্মিনালে সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং অন্যটিতে দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ডের অর্থায়ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রেক ওয়াটার ও এক্সেস চ্যানেল ড্রেজিংয়ে অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক।
বে টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৬৬.৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫০০.৬৯ একর সরকারি খাস জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। বছরে ৫০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২৬ সালে এই বে টার্মিনালের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যের কথা জানান মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য তথ্য কর্মকর্তা।
অন্যদের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আব্দুল্লা কাসিফ আল মৌদি, আবুধারি পোর্টস গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের রিজিওনাল চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আহমেদ আল মুতায়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
পুরনো খবর:
চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
বে টার্মিনালে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের