মার্চেও বিদ্যুতের খুচরা দাম ৫% বাড়ল

এ বছর ১২ জানুয়ারি থেকে তিন দফা বাড়ানো হল বিদ্যুতের দাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 02:20 PM
Updated : 28 Feb 2023, 02:20 PM

নিয়মিত মূল্য সমন্বয়ের অংশ হিসেবে আরেক দফা বাড়ল বিদ্যুতের দাম; খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে মার্চ মাসের জন্য বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

এর ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে দাঁড়াবে ৮ টাকা ২৪ পয়সা, যা ফেব্রুয়ারিতে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা ছিল। আর জানুয়ারিতে ছিল ৭ টাকা ৪৮ পয়সা।

বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদ্যুতের খুচরা মূল্য গড়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের জন্য তা বিভিন্ন হারে কার্যকর হবে।”

মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে নতুন এই মূল্যহার কার্যকর হবে বলে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

খুচরায় বাড়লেও পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি মার্চ মাসে। ফেব্রুয়ারিতে ভারিত গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়।

এর আগে, গত ৩১ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ৮ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। তার আগে ১২ জানুয়ারি ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম গড়ে প্রতি ইউনিটে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

জানুয়ারির শেষে দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “প্রত্যেক মাসেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। আগামী মাসে বিদ্যুতের দাম আরেকবার সমন্বয় করতে হবে। আমাদের আর ভর্তুকি দেওয়ার সুযোগ নেই। এখন এভাবে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।”

দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমরা আগেই বলেছি, ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দাম বাড়াতে হবে। আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজনে মাসে মাসে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও কমবে।”

এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ১২ টাকা খরচ হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে যদি সবাই ক্রয়মূল্য যা হবে, সেটা দিতে রাজি থাকে। তাহলে দেওয়া যাবে। তাছাড়া আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়।”

যতটা বাড়ল দাম

প্রজ্ঞাপনে বিদ্যুৎ সরবরাহের নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চ চাপ অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রাহক শ্রেণির বিদ্যুতের মূল্য (এনার্জি রেট বা চার্জ) নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে গ্রাহককে শ্রেণি অনুযায়ী প্রতিটি সংযোগের বিপরীতে ডিমান্ড রেট এবং মোট বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়।

জানুয়ারিতে খুচরা পর্যায়ে ডিমান্ড চার্জও ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির পর মার্চেও সেই হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে চাপ অনুযায়ী আবাসিক, সেচ বা কৃষিকাজে ব্যবহার করা পাম্প, ক্ষুদ্র শিল্প, নির্মাণ, শিক্ষা, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন, বাণিজ্যিক ও অফিস, শিল্প গ্রাহক শ্রেণিতে নতুন হার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ৪ টাকা ৩৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৮ টাকা ৫২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বর্ধিত দর অনুযায়ী একজন গ্রাহক ফেব্রুয়ারিতে লাইফলাইনে (৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহার) বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ইউনিট প্রতি (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) দেবেন সর্বনিম্ন ৪ টাকা ৩৫ পয়সা, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৪ টাকা ১৪ পয়সা।

আর প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৮ টাকা ৫২ পয়সা দিতে হবে অস্থায়ী বাণিজ্যিক বা অফিসে বিদ্যুৎ খরচের জন্য, যা জানুয়ারিতে ছিল ১৭ টাকা ৬৪ পয়সা।

নিম্ন চাপের আবাসিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি সাধারণ ৭৫ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার হলে প্রতি ইউনিটের দর হবে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা (আগে ৪ টাকা ৬২ পয়সা); ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট হলে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৬৩ পয়সা (আগে ছিল ৬ টাকা ৩১ পয়সা); ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট হলে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৯৫ পয়সা (আগে ছিল ৬ টাকা ৬২ পয়সা)।

এর বাইরে আবাসিকে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট হলে প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৩৪ পয়সা (আগে ছিল ৬ টাকা ৯৯ পয়সা); ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট ১১ টাকা ৫১ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ৯৬ পয়সা) এবং ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা (আগে ছিল ১২ টাকা ৬৩ পয়সা) করা হয়েছে।

নতুন মূল্যহারে সেচ বা কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত পাম্পের বিদ্যুতের জন্য দিতে হবে ৪ টাকা ৮২ পয়সা। এক্ষেত্রে আগের দর ৪ টাকা ৫৯ থেকে বাড়ানো হয়েছে ২৩ পয়সা।

ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্যাট রেট করা হয়েছে ৯ টাকা ৮৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৪১ পয়সা); অফ পিকে ৮ টাকা ৮৮ পয়সা ( আগে ছিল ৮ টাকা ৪৬ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ৮৫ পয়সা (আগে ১১ টাকা ২৯ পয়সা ছিল)।

বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৯৩ পয়সা (আগে ছিল ১১ টাকা ৩৬ পয়সা); অফপিক ১০ টাকা ৭৩ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ২২ পয়সা) এবং পিক ১৪ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা)।

এছাড়া মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চ চাপে এসব শ্রেণির গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের জন্য আরও বেশি টাকা গুনতে হবে।

অপরদিকে উচ্চ চাপে শিল্পের জন্য ফ্ল্যাট রেট ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৭৮ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৩১ পয়সা), অফ পিকে ৮ টাকা ৮১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৩৯ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ১২ টাকা ২২ পয়সা (আগে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা ছিল)।