“যে কাস্টমারগুলো ছিল একসাথে অনেক কেনাকাটা করত, গিফটের বিষয় ছিল, এবছর ওই টাইপের কাস্টমার একটু মিস করছি আমরা।”
Published : 31 Mar 2025, 12:49 AM
ঢাকার সবচেয়ে বড় শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কের দোকানগুলো ঈদের আগের দিনও দেখা গেল অনেকটা ফাঁকা।
বাচ্চাদের পোশাক আর গয়নার দোকানগুলোতে বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। কাপড়ের বিতানগুলোতেও ক্রেতা নেই।
রোববার ইফতারের আগে নবরূপা শো রুমে কথা হল ইনচার্জ মোহাম্মদ সোহেলের সঙ্গে। তিনি বললেন, গতবছরের তুলনায় এবার তাদের বিক্রি নেমেছে এক তৃতীয়াংশে।
“এইখানেই আমার এগারো বছরের অভিজ্ঞতা। দেখা যায় যে রাজনৈতিক পরিবর্তন একটা আছে। যে কাস্টমারগুলো ছিল একসাথে অনেক কেনাকাটা করত, গিফটের বিষয় ছিল, এবছর ওই টাইপের কাস্টমার একটু মিস করছি আমরা।”
মার্কেট ও শপিং মলগুলো চাঁদরাতে জমজমাট বিক্রির আশায় থাকে। কিন্তু মোহাম্মদ সোহেল এবার খুব বেশি আশা দেখছেন না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “শেষের দিকে প্রতিবছর যেরকম চাপ থাকার কথা, এবছর একটু ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। ২৬ মার্চের পর থেকে এই চাপটা আর নাই।
“বিগত বছরগুলোতে যেরকম ছিল লাস্ট তিন-চার দিন, এবছর এরকম পাচ্ছি না। আজকে চাঁদ রাত, সেক্ষেত্রে আমরা আশা করতেছি যে আরেকটু থাকবে। আবার অনেকে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে সেক্ষেত্রে নাও হতে পারে।”
ঈদ উপলক্ষে নয় দিনের ছুটিকে রোজার শেষ দিকে ক্রেতা কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বিক্রেতারা। তবে তাদের ভাষায়, এমন ‘খরা’ পুরো রোজার মাসেই গেছে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি বদলেছে। মানুষের হাতে টাকা কমে গেছে, তাই তারা কেনাও কমিয়ে দিয়েছেন। এর বাইরে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে রাস্তার কাজও ক্রেতা কমার অন্যতম কারণ বলে তারা মনে করছেন।
গয়নার দোকানগুলোতে বিক্রয়কর্মীরা নিজেদের মধ্যে খোশগল্প করছিলেন। এর মধ্যে যতটুকু ভিড় ছিল, তা আমিন জুয়েলার্সে।
দোকানের ব্যবস্থাপক বঙ্কিমচন্দ্র সরকার বললেন, “ঈদ উপলক্ষে যেমন আশা করা হয়, সেরকম হয় নাই। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে একটা ব্যাপার, বেচাকেনায় হ্যাম্পার। আর গোল্ডের দামও অনেক বেশি।”
রোজার শুরুর দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে রাস্তা কাটা থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন যদিও এটা রিকভারি হয়ে গেছে, প্রথম দিকে যেটা ছিল তার প্রভাব পড়েছে। শেষের দিকে এসে ইউজুয়াল যে সেলটা হয়, তার অবস্থা বর্তমানে নেই। কারণ হল, এবার ছুটিটা লং-টার্ম হয়েছে। ২৭ রমজান থেকে সরকারি ছুটি, সেজন্য এক অর্থে ফাঁকা।
“আর ম্যাক্সিমাম লোক যারা আমাদের কাস্টমার, তারা দেশের বাইরে চলে যায়। এবছর তো আরও লম্বা ছুটি। এ কারণে সেলে একটা প্রভাব পড়েছে। এরপর গোল্ডের রেট একটা ফ্যাক্ট আছেই।”
গতবছরের তুলনায় এবারের বিক্রি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গতবছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবছর সেল ডাউন। অনেক খারাপ। অলমোস্ট ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।”
কতটুকু বিক্রি কম হয়েছে না বললেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে ‘তুলনামূলক কম বিক্রির’ কথা বললেন টপ টেন আউটলেটের ফ্লোর ইনচার্জ মো. রাজু।
তার ভাষ্য, “মোটামুটি একটা মাস পার করলাম। তো সচারচর প্রত্যেকবছর যেরকম হয়, আশানুরূপের চেয়ে প্রথম দিকে কাস্টমার একটু কম ছিল। তারপর আস্তে আস্তে একটু কাস্টমার বাড়ার কারণে মোটামুটি ভাবছিলাম, ভালো একটা ফ্লো হবে, এখন পর্যন্ত যতটুকু আছে, আজ চাঁদ রাত হিসেবে ওইরকম, আপনিই দেখতে পারছেন, মোটামুটি ফাঁকা।
“যেহেতু ২৯টা রোজা হয়েছে, মানে গতকাল পর্যন্ত অনিশ্চিত ছিলাম, ভাবছিলাম হয়ত ৩০টাই হবে, সেক্ষেত্রে এখন যেহেতু ২৯টা হচ্ছে, লাস্ট ডে হিসেবে একটু ভিড় থাকবে ভেবেছিলাম। উপচে পড়া ভিড় থাকবে মানুষের বা কেনাকাটার আনাগোনাটা বেশি থাকবে–আশা করেছিলাম। সেখান থেকে একটু আসলে কমই হচ্ছে।”
রাজু বলেন, “লম্বা ছুটি এক, দ্বিতীয়ত অনেকেই হয়ত আগেই ছুটি পাইছে, ঢাকার বাইরে চলে গেছে, ঢাকার বাইরে শো-রুমগুলোতে ভালো এফোর্ট পাইতে পারে তারা। যেহেতু সবাই চেষ্টা করছে ফ্যামিলির সাথে সময় শেয়ার করার জন্য।”
তুলনামূলক বিক্রির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “গতবছর এর চেয়ে ভালো ছিল। এবছর খারাপ বলব না, তারপরও তুলনামূলক আশানুরূপ কমই ছিল। ভাবছিলাম, ইন্ডিয়ার ভিসা বন্ধ, কিছু চাপ পড়তে পারে, দেশের কিছু অর্থ সঞ্চয় হইছে না যেতে পারায়।
“কিন্তু তারপরও হয়তবা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দেশের পরিস্থিত, প্রেক্ষাপট, সবধরনের পরিস্থিতি মিলিয়ে মনে হয় একটু কমই ছিল। মানুষজন একটু ভয়ে থাকে বা বের হতেও একটু কষ্ট।”
শেষ রোজার দিনে ইনফিনিটির বিক্রয়কেন্দ্রে ভিড় তেমন না থাকলেও রোজার শুরুর দিকে বিক্রি ভালো ছিল বলে জানালেন অ্যাসিস্টেন্ট প্রডাক্ট ম্যানেজার বিল্লাল হোসাইন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন শেষ সময়ের তুলনায় ক্রেতা কম। ২৭ রোজা থেকেই কমতে শুরু করেছে। তবে ঈদের ছুটির আগে আমাদের অনেক রাশ ছিল।
“এখানে আমাদের যতগুলো আউটলেট আছে রিচম্যানসহ, সবগুলোই এমন। তবে গত রমজানের তুলনায় আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। এবছর ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।”
ঈদের আগ মুহূর্তে মেহেদী কিনতে ভিড় করতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
মেহেন্দি বাই মিমির প্রতিনিধি প্রান্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভিড় এখন। ক্রেতাদের লাইন ধরে কিনতে হচ্ছে, আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। অনেক সময় এটা অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে যায়।”
এবার বিক্রি কেমন জানতে চাইলে তিনি বললেন, “এবারই প্রথম স্টল। আগে অনলাইনে ছিল। সবখান থেকে সাড়া পাওয়ায় এবার যমুনাতে, বসুন্ধরায়, মাস্কট প্লাজায়, কুমিল্লা, নওগাঁতে আমাদের স্টল দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ঈদের জন্য।”