‘অন্ধকার অনেক ব্যয়বহুল’; লোড শেড প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি

লোড শেডিংয়ের মধ্যে এমন মন্তব্য আসে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের এ নেতার কাছ থেকে; বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2023, 07:37 PM
Updated : 3 June 2023, 07:37 PM

লোড শেডিংয়ের মধ্যে জেনারেটরও গেল বন্ধ হয়ে, পুরো মিলনায়তন ডুবে যায় অন্ধকারে; এরমধ্যে প্রশ্নোত্তরও চলে গুটিকয়েক। পরে বাধ্য হয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলন মাঝপথেই শেষ করতে হয় এফবিসিসিআইকে, যেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে আকুলতার কথা আবার তুলে ধরলেন সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

শনিবার বিকালে এ সংবাদ সম্মেলনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘অন্ধকার অনেক ব্যয়বহুল; দাম যতই হোক- বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।

“বিদ্যুৎ না থাকার চেয়ে থাকাটা বেশি জরুরি। বেশি খরচ হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আর্থিক বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’’

শনিবার মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির নিজস্ব ভবনে বিকাল ৩টায় ডাকা সংবাদ সম্মেলন শুরু হয় পৌনে চারটার দিকে। খানিক বাদে ৪টার দিকে চলে যায় বিদ্যুৎ।

এতে পুরো বোর্ড রুম মিলনায়তনে অন্ধকার ছেয়ে যায়। এফবিবিসিসিআইয়ের নিজস্ব জেনারেটর চালিয়ে কয়েক মিনিট পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলে ফের লিখিত বক্তব্য পড়তে শুরু করেন জসিম উদ্দিন।

বক্তব্য শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে থেকে আসা তৃতীয় প্রশ্নে সভাপতির উত্তর শেষ না হতেই জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায়, তখন ঘড়ির কাঁটায় বিকাল সাড়ে ৪টা।

তখন বোর্ডরুম মিলনায়তন ফের অন্ধকার হয়ে যায়। প্রশ্নোত্তর পর্ব থামিয়ে মোবাইলের আলোতে কিছু সময় অপেক্ষা করা হয়।

একপর্যায়ে ঘেমে ওঠা এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামীর সাত্তারকে হাতের কাগজ দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়।

তাতেও কাজ না হওয়ার প্রথমে এফবিসিসিআই ও পরে ডিসিসিআই সভাপতি নিজেদের গায়ের কোট খুলে ফেলেন।

টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার আলো জ্বলে উঠলে জসিম উদ্দিন আরও দুটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “আমাদের জ্বালানি পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কলকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের লক্ষ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

“দেশের কয়লা মাটির নিচে না রেখে উত্তোলন করা দরকার। এখন অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে দুনিয়াতে। ঘরবাড়ির ক্ষতি না করেই মাটির নিচ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি বের হয়েছে উন্মুক্ত পদ্ধতির বাইরে গিয়েও কয়লা তোলা সম্ভব।’’

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিও জানান তিনি।

জসিম উদ্দিন বলেন, “সরকারের রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করতে শিল্প উৎপাদন সচল রাখতে হবে। আর এজন্য সাশ্রয়ী এবং নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের বিকল্প নেই। বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আর্থিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও বেশি কৌশলী হতে হবে।’’

বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেবে সরকার। এর মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে।

এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতির চাওয়া ব্যাংক খাতের পরিবর্তে সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস থেকে সরকার যেন অর্থ সংগ্রহ করে।

বাজেটে টেক্সটাইল, রপ্তানি খাত ও এসএমই খাতের জন্য ‘তেমন কিছু দেখা যায়নি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে ম্যান-মেইড ফাইবার থেকে ভ্যাটসহ সকল ধরনের কর প্রত্যাহার এবং রপ্তানির উৎস কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি।”

জসিম উদ্দিন বলেন, “হিমায়িত মাছসহ বেশকিছু বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন সব পণ্যর উপর শুল্ক কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি পুনবির্বেচনা করার প্রস্তাব আমরা দিব।’’

অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর (এটি) ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা।

সেই প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “এআইটি এবং অগ্রিম কর (এটি) বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। অগ্রিম আয়কর যথাযথ সমন্বয়/রিফান্ড না হওয়ায় পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

“অগ্রিম কর নিলেও তা ফেরত পেতে অনেক সময় ও প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।’’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ সভাপতি আমিন হেলালী, হাবিব উল্লাহ ডন উপস্থিত ছিলেন।