৩০০ কোটির বেশি মানুষের ‘বাজার’ হতে পারে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ভারত, চীন, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরের সাথেও আলোচনা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2022, 07:41 AM
Updated : 6 Dec 2022, 07:41 AM

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তিনশ কোটির বেশি মানুষের ‘বাজার’ হতে পারে মন্তব্য করে এ মাটিতে বিনিয়োগের জন্য দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার তিনশ কোটিরও বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই, আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি উত্তর দিকে ১৫০ কোটি আর পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার বিদ্যমান।”

মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ (জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘সর্বোত্তম’ জায়গা হিসেবে তুলে ধরেন। এছাড়া শিল্পাঞ্চলগুলো যেন পরিবেশবান্ধব হয়, সেদিকে সরকার বিশেষভাবে ‘নজর’ রেখেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গাটা হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই আমি আশা করি, বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসবে, আর আমাদের দেশের মানুষও নিজের দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে এভাবে। সেটাই আমরা চাই।

“সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে, যেখানে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের একটা সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে।”

যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকার নজর দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নিজস্ব একটা মার্কেট যেমন তৈরি হচ্ছে, পাশপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগের ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলো, সেখানেও একটা বড় বাজার রয়েছে। তার পাশপাশি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া প্রাচ্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমরা উন্নত করে দিচ্ছি এবং তাদের সঙ্গে আমাদের একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই সে অঞ্চলটার যে বিশাল জনগোষ্ঠী, এরা কিন্তু একটা বিরাট মার্কেট। “

“বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে আমাদের সমুদ্রপথ, আকাশপথ বা রেলপথ সবগুলো ব্যবহার করে এই দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং সেই সাথে সাথে আমাদের পশ্চিমা দেশগুলোতেও যোগাযোগের একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে,” বলেন তিনি।

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত, চীন এবং সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর তাদের সাথে আলোচনা হচ্ছে। কাজেই বিভিন্ন দেশ এবং আরো অনেকগুলো দেশও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা যারাই আসবে, তাদের জন্য একটা অঞ্চল যেভাবে তারা চায়, তাদেরকে দিয়ে দেব...।“

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য চমৎকার একটা পরিবেশ রয়েছে। সেজন্য বিনিয়োগকারীদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি…। এবং যারাই বাংলাদেশে আসছেন, তারা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।”

দেশের আগ্রহী তরুণ ও নারী বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে বিনোয়োগকারীদের ‘সব থেকে বেশি’ সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের সকল ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানের ব্যবস্থা আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা করে দিচ্ছি, বিনিয়োগবান্ধব আইন বা নীতিমালা করা হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অবকাঠামো বিস্তৃতি সাধন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেবা পরিষেবা অনুমোদনের জন্য নন স্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে।”

বাংলাদেশ এবং জাপান সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় এক হাজার একর জমির ওপর এ অর্থনৈতিক অঞ্চল (জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল) গড়ে উঠছে।

সরকারপ্রধান বলেন, সেখানে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা সহজেই পাওয়া যাবে।

তিনি জানান ২০১৪ সালে তার জাপন সফরের সময় দেশটির প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে ‘জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নিয়ে আলোচনা হয়। এবং সেসময় এ বিষয়ে দুই দেশ চুক্তিও সই করে।

জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এভাবে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ জাপান করে দিচ্ছে। এটা আমি বলব যে আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্ব, সেই বন্ধুত্বেরই নিদর্শন যে জাপান সব সময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে, আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট।”

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফলের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।  

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বক্তব্য রাখেন।