কিছু বিক্রেতা দোকানও খোলেনি, যারা খুলেছেন তাদের কেউ কেউ ঘুমাচ্ছিলেন।
Published : 21 Jun 2024, 11:05 PM
কোরবানি ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রাণ ফেরেনি। বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম, ক্রেতার সংখ্যাও কম।
ঈদের পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও বিজয় সরণির কলমিলতা বাজার ঘুরে কোলাহলমুক্ত পরিবেশই দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে অল্পকিছু ক্রেতার দেখা মিললেও কলমিলতা বাজারে দুপুরের পরে ২০ মিনিটে একজন ক্রেতাও চোখে পড়েনি।
কিছু বিক্রেতা দোকানও খোলেনি, যারা খুলেছেন তাদের কেউ কেউ ঘুমাচ্ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে গ্রামে যাওয়া মানুষ এখনও ফেরেনি। তাই নিত্যপণ্যের বাজারে কেনাকাটায় ভিড় নেই। যারা আসছেন, তারা বেশিরভাগই সবজির খোঁজ করছিলেন।
ক্রেতা কম তাই পণ্যের সরবরাহও কম। বিকেলে কলমিলতা বাজারে কোনো বিক্রেতার কাছে মরিচ পাওয়া যায়নি। কারওয়ান বাজারেও মরিচ বিক্রি তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
বুধবার এই বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা হয়ে গেলেও দুই দিন পর তা ২০০ থেকে ২২০ টাকায় নেমে আসতে দেখা যায়।
ঈদের আগে রান্নার এই উপকরণের দাম ছিল ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা।
কারওয়ানবাজারের বিক্রেতা শেখ কামাল বলেন, “মালের ঘাটতি আছে। আর কাঁচা মালের কোনো ঠিক নাই কবে দাম বাড়ে আর কবে কমে।”
ক্রেতা আতিক ইসলাম বলেন, “ঈদের আগে মরিচ কিনছিলাম ১৭০ টাকা কেজি। এখন সব কিছুর দামই তো বেশি। টমেটো দাম জিজ্ঞেস করলাম, ১২০ টাকা বলে।”
বেড়েছে আলু-পেঁয়াজের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা। বাজারে খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা কমে।
কারওয়ান বাজারে স্বদেশ এন্টারপ্রাইজ থেকে পাইকারিতে এক মণ পেঁয়াজ কিনলেন মধ্যবাড্ডার তাজুল ইসলাম নয়ন। দাম নিল ৩ হাজার ২৮০ টাকা, কেজি পড়েছে ৮২ টাকা।
তিনি বলেন, “যতটুকু বুঝলাম ঈদের সময় থেকেই পেঁয়াজের দাম একটু বাড়ছে।”
খুচরায় আলুর দাম চড়েছে ৬০ টাকায়, কারওয়ান বাজারে পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা দরে।
পাইকারি দোকান বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. আরিফ বলেন, “ঈদের পরে এখনও লেবাররা আসে নাই। এখন গাড়ি ভাড়া বেশি, লেবার চার্জ বেশি, মালের আমদানি কম। তাই একটু দাম বাড়ছে।”
ঈদের ছুটি শেষ হলে দাম কমবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “দাম খুব একটা কমব মনে হয় না। ৫০ এর নিচে আর নামব না।”
বিজয় সরণির কলমিলতা কাঁচা বাজারের বিক্রেতা মুখলেছুর রহমানের দোকানে আলু, পেঁয়াজ থাকলেও শসা নেই।
তিনি বলেন, “শসা আইন্যা লস দিমু? দাম বেশি দেইখা আনিই নাই। ক্রেতা কম, দাম দিয়া মানুষ কিনব কিনা।”
এই বিক্রেতার তথ্য বলছে, পাইকারিতে শসা এখন ৬০০ টাকা এক পাল্লা, তার মানে কেজি ১২০ টাকা কেজি।
সবজির চাহিদা বাড়ছে
বিক্রেতাদের তথ্য বলছে, বাজারে যে ক্রেতারা এসেছেন, তাদের মধ্যে সবজি কেনার ঝোঁক দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদে টানা মাংস খেয়ে রুচি পাল্টাতে মানুষ এখন সবজি কিনছেন বেশি, ফলে বাজার চড়া। প্রায় সব সবজির দামই কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারে করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে, বেগুন ৪০ টাকা, পটল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ও একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
ঈদের আগে থেকে দাম বাড়তে থাকা শসা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। গাজরের দামও ১০০ টাকার আশেপাশে। টমেটো ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদে সালাদের চাহিদার কারণেই মূলত এসবের দাম বেড়েছে।
টমেটো বিক্রেতা ইব্রাহিম হাওলাদার বাবু বলেন, “এখন বাজারে বেশি আছে পঞ্চগড়ের টমেটো। এগুলোর স্বাদ একটু মিষ্টি। সিজনের শেষ সময়, এর লাইগ্যা দামটা বেশি।”
কারওয়ান বাজারে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে লেবু।
বিক্রেতা মো. আবুল কাশেম বলেন, “ঈদের পরে দুইদিন হালিতে পাঁচ-দশ টাকা বাড়ছিল। আবার কমছে। এহন লেবুর সিজন, তাই দাম বাড়ার সুযোগ নাই।”
আরেকজন বিক্রেতা জহিরুল হক বলেন, টাঙ্গাইল, সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে লেবু বেশি আসে। এখন আপাতত দাম বাড়বে না।