দেশে বিদেশি মুদ্রার প্রধান উৎস রপ্তানি আয় পরপর দুই মাস কমে গেল; গত অক্টোবরে রপ্তানি কমেছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
আগের দিন রেমিটেন্স কমার খবরের মধ্যে বুধবার রপ্তানি কমে যাওয়ার তথ্য জানাল ইপিবি।
আগের মাস সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমার ধারা বজায় রেখে গত মাসে মোট ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় তা প্রায় ৩৭ কোটি ডলার বা প্রায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। গত বছর অক্টোবরে ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
গত অক্টোবরে ৫০০ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে রপ্তানি আয়।
বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের সবশেষ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
একক মাসে কমলেও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ভর করে জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে রপ্তানিতে এখনও ৭ দশমিক ০১ শতাশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে মোট ১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা প্রায় ১১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বেশি; মোট রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৪২ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরে সরকার ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আর গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছিল।
এদিকে দেশের প্রধান পণ্য রপ্তানিকারক পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা অক্টোবরে তৈরি পোশাক পণ্যে বড় ধরনের পতনের আশঙ্কা করলেও তা হয়নি, উল্টো বেড়েছে।
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এক বিশ্লেষণে জানায়, অক্টোবরে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে ৩৬৭ কোটি ডলার হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে মোট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৯৫ কোটি ডলার; আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
অপরদিকে গত অক্টোবরে পোশাকের নিটওয়্যার ও ওভেন খাতে রপ্তানিতে যথাক্রমে ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আর চার মাসের হিসাবে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৭৭২ ডলার এবং ওভেনে ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়ে ৬২২ কোটি ডলার হয়েছে।
বিজিএমইএর সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে প্রবৃদ্ধি থাকলেও চলতি মাস নভেম্বর থেকে মোট রপ্তানি নেতিবাচক অবস্থায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই ইউরোপের বাজারে অর্ডার কমে গেছে। এমনকি বর্তমানে অনেক কারখানায় অর্ডার নেই। প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
“তারওপর এখন দেশে শুরু হয়েছে জ্বালানি সংকট। বিশেষ করে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানাগুলো অনেক সময় ক্যাপটিভ পাওয়ার দিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করছে। এতে ব্যয় বাড়ছে। আবার অনেক কারখানা ঠিকমত বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে সময়মত উৎপাদন সম্পন্ন করতে পারছে না। ক্রেতাকে সময়মতো অর্ডার বুঝিয়ে দিতে পারছে না।“
এতে ক্রেতাদের কেউ কেউ সক্ষমতা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
“চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন থেকে চলে যাওয়া অনেক কোম্পানিকে দেশে নিয়ে আসার সুযোগ আমরা হাতছাড়া করছি। জ্বালানি সক্ষমতা না থাকায় বিদেশি উদ্যোক্তারা আমাদের ওপর ভরসা না রাখতে পারায় তারা ভিয়েতনাম কিংবা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।
এসময় তিনি জ্বালানি সক্ষমতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
আরও পড়ুন: