এখন অনাদরে জন্মাতে দেখা গেলেও বিষকাটালী গাছ ও এর ব্যবহার ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এমনটা বলছেন গ্রামের অনেকে।
Published : 23 Sep 2022, 10:08 PM
ময়মনসিংহের গ্রামে গ্রামে ঝোপঝাড়ে বিষকাটালী গাছের দেখা মিললেও আগের মত ওষুধি ব্যবহার আর নেই বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
অঞ্চলভেদে এই বিষকাটালীকে বিসাতু, এগরা, মইছা আগরা নামেও ডাকা হয়। প্রজাতিভেদে দুই ধরনের ফুল দেখতে পাওয়া যায় ; গোলাপি-সাদা আর সাদা।
এককালে গ্রাম-বাংলায় ভেষজ ওষুধ বানাতে এই গুল্ম ব্যবহার করা হত। এখনও বয়স্করা তাই করেন, এমন বলছেন অনেকে।
গাছটির ডাল-পাতা মাছ ধরার টোপ, কেঁচো সংগ্রহে, পোকা-মাকড় থেকে গৃহস্থালি পণ্য সুরক্ষাসহ নানা কাজে লাগে। এখন এসব কাজ বিকল্প হিসেবে কেমিক্যাল দিয়ে বানানো যায়। তাই বিষকাটালী চলে যাচ্ছে জানার অগোচরে।
এলাকার প্রবীণরা বলেন, বাড়ির আঙিনায়, ঝোপ-ঝাঁড়, ক্ষেত খামারে বিনাচাষে জন্মাত বিষকাটালী গাছ।
“এখন খুব একটা দেখা যায় না। আমাদের গ্রামে কিছু বিষকাটালী গাছ আছে, বর্ষা মৌসুমে কুইচা ও মাছ শিকারিরা পাতা এক বালতি জলে ভিজিয়ে কচলিয়ে সে জল দুর্বা ঘাসে ছিটিয়ে ঢেলে দেয়।”
কিছুক্ষণ পর মাটির নিচে থাকা কেঁচো বিষকাটালীর বিষ সহ্য করতে না পেরে মাটির উপরে চলে আসে। মাছ শিকারিরা কেঁচো সংগ্রহ করে কুইচ্ছা মাছ ধরার চাইয়ে দিয়ে রাখে।
বিছানার ছারপোকা তাড়াতে বিছানার নিচে বিষকাটালীর পাতা বিছিয়ে দিলে ছাড়পোকা পালায়। বসত ঘরে ইঁদুরের উপদ্রবে খাটের নিচে এর পাতা রাখলে অসহ্য গন্ধে ইঁদুর পালিয়ে যায়।
আঙ্গুলে ক্যাটফিশ বা শিং মাছের কাটা বিঁধলে শরীরে বিষকাটালীর পাতা বেঁধে রাখলে অল্প সময়ের মধ্যে যন্ত্রনা সারে।
পোকার কবল থেকে ধান, গমসহ ফসল সুরক্ষায় গোলায় রাখা হয় বিষকাটালীর পাতা।
গ্রামবাসী আব্দুল্লা আল মাহদী বলেন, ”ছোটবেলায় দেখেছি দাদা এই পাতা ব্যবহার করতেন, মুরগির ডিম সুরক্ষায়। ডিমের নীচে পাতা রাখতেন।
“শরীরের খোসপাঁচড়া, ফোঁড়ার চিকিৎসায় এর পাতা বেঁটে লাগিয়ে দিলে দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যায়। এছাড়াও এর পাতা ২-৩ দিন পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি সবজি ক্ষেতে প্রয়োগ করলে পোকা-মাকড় দূর হয়। “
ফেইসবুকে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোহাম্মাদ ইসমাইলের রেফারেন্সে দেওয়া একটি পোস্টে বিষকাটালীর গুণাগুণ নিয়ে জানা গেল।
পোস্টে লেখা রয়েছে, ”বিষকাটালীর বিষ ব্যথার মহৌষধ। বীজ ব্যবহার করে টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষা নিরাময় করা যায়, ভিমরুলের কামড়ে বিষের জ্বালা কমাতে বিষকাটালীর রস ব্যবহার করা হয়।”
বিষকাটালী কৃমিনাশক, জীবাণু, ঘা, আলসার ও ব্যথা নাশক। ক্যান্সার ও চামড়ার চিকিৎসায় এর ব্যবহার করা হয়।
তবে বিষাক্ত বলে এই গুল্ম খেয়ে গবাদি পশু মারাও যেতে পারে।
হালিমা আক্তার বলেন, এখন বিনা চাষে, অনাদরে জন্মাতে দেখা গেলেও বিষকাটালী গাছ ও এর ব্যবহার ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।