স্যানিটারি ন্যাপকিন ‘বান্ধব’ বাজেটের আশায়

নাহিদ দিপা
Published : 17 June 2020, 01:52 PM
Updated : 17 June 2020, 01:52 PM

শুধুই নারীদের কথা বলবার মতো কেউ কি আছে সংসদে? নারী সংসদ সদস্যরাও কি আছে?  সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রীসহ মোট ২২ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য নারী। আরো আছেন ৫০ জন সংরক্ষিত আসনে। সবমিলে ৭২ জন। এই ৭২ জনের কেউ কি প্রয়োজন মনে করেছেন বা করছেন, দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি প্যাড নিয়ে কথা বলার?

ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৪ অনুযায়ী, দেশের ৮৬ শতাংশ মেয়েরা এখনো মাসিকের সময় বেছে নিতে বাধ্য হয় পুরানো কাপড়, ৩৬ শতাংশ মেয়েরা জানেই না  মাসিক হলে কীভাবে সামাল দেওয়া হবে। এছাড়া অসংখ্য পাহাড়ের আর চরাঞ্চলের মেয়েরা খড়-বালি ব্যবহার করে। অনেকে ব্যবহার করে হরমোনাল ইনজেকশন, কেউ কেউ খায় ওষুধ।

একটা নারীর জীবনে গড়ে ছয় বছরের মতো সময় কাটে (প্রতিমাসে ৫দিন) এই মাসিক বা পিরিয়ড সামাল দিতে দিতে। এদিকে  'পিরিয়ড পোভার্টি'  জড়িয়ে রেখেছে এদেশের নারীদের। একই পরিবারের ছেলে সদস্যের বিড়ির পেছনে বা টং দোকানে চা খাওয়ায় মাসে হাজার খানেক টাকা বেরিয়ে যায়; সেটা খুব স্বাভাবিক মনে হয়।  কিন্তু সেই পরিবারের মেয়েটির জন্য, তার শারিরীক নিরাপত্তার জন্য, বিড়ির খরচের অর্ধেক খরচে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার কথা ভাবেনা কেউ, মনে হয় বিলাসিতা। এটাই পিরিয়ড পোভার্টি।

পরিবার আর কীভাবে ভাববে, যেখানে রাষ্ট্রই প্রতিবার বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিনকে 'বিলাসবহুল' পণ্য  মনে করে। এটা নিয়ে কথা হয় না সংসদে। সভা সেমিনার, পত্র-পত্রিকা বা ব্লগের লেখালিখি পর্যন্তই এই সীমা।

বিড়ি তৈরি যদি শিল্প হয়ে উঠতে পারে তাহলে 'প্যাডম্যান' (বলিউড মুভি, ২০১৮) সিনেমা দেখে আমরাও জানি, নিরাপদ স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরিও একটা কুটির শিল্প হয়ে উঠতে পারে। এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর, পুরো ভারতেই একটা বিপ্লব হয়ে গেছে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির সরঞ্জাম তৈরি আর গ্রামে গ্রামে হাতে তৈরি ন্যাপকিন তৈরির। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে। স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে গ্রামের পর গ্রামের মানুষের অর্থনীতি আর জীবনযাত্রা কীভাবে পাল্টে যায় তার বাস্তব ঘটনা রূপালি পর্দায় তুলে আনে পিরিয়ড-দ্য অ্যান্ড অফ সেনটেন্স সিনেমা; নিয়ে আসে অস্কার।

আমরাও কি আশা করতে পারি, আমাদের নারী সংসদ সদস্যরা অন্তত একবার হলেও আওয়াজ তুলবেন যে স্যানিটারি ন্যাপকিনও তৈরি হতে পারে ঘরে ঘরে? যে নারীরা বিড়ি তৈরি করে তারাই তাদের অভিজ্ঞ হাত কাজে লাগাতে পারেন তাদেরই জীবনযাত্রা পাল্টানো স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরিতে?

আমাদের নারী সাংসদরা দাবি তুলতে কি পারেন যে, স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির  কাঁচামাল  আমদানি হবে বিনা আমদানি শুল্কে? আর এসব নিয়ে তারা একসাথে আবেদন করতে পারেন কি রাজস্ব বোর্ড কিংবা প্রধানমন্ত্রী বরাবর?

গত বছর বাজেটের পর স্যানিটারি প্যাডে মূল্য সংযোজন কর আরোপ করায় এর দাম বাড়বে এমন একটি আলোচনা ও এর সমালোচনা শুরু হয়েছিল। তবে পরে এনবিআর থেকে একে 'অপপ্রচার' বলে জানানো হয়। অর্থ্যাৎ ২০১৯-২০২০ সালের বাজেটে স্যানিটারি প্যাডের উপর কোনো ভ্যাট আরোপ করা হয়নি।

তবে আলোচনার বাইরে রয়ে যাচ্ছে যা, তা হচ্ছে স্যানিটারি প্যাডের কাঁচামালের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়ে গেছে।  ২০১৯-২০২০ সালের বাজেটের এনবিআর ট্যারিফ শিডিউল ওয়েব সাইটে রয়েছে; সেখানেই দেখা যাচ্ছে স্যানিটারি প্যাডের উপর আরোপিত আমদানি শুল্কের পরিমাণ।

এনবিআর ট্যারিফ শিডিউল ২০১৯-২০২০, সেকশন ১০, চ্যাপ্টার ৪৮

এনবিআর ট্যারিফ শিডিউল ২০১৯-২০২০, সেকশন ১০, চ্যাপ্টার ৪৮

এনবিআর ট্যারিফ শিডিউল ২০১৯-২০২০, সেকশন ১০, চ্যাপ্টার ৪৮

এনবিআর ট্যারিফ শিডিউল ২০১৯-২০২০, সেকশন ২০, চ্যাপ্টার ৯৬

আফসোসের জায়গাটা হচ্ছে, গত বছরের এনবিআর ট্যারিফ শিডিউল আর ২০২০-২০২১ সালের এনবিআর ট্যারিফ শিডিউলে স্যানিটারি প্যাডের কাঁচামালের জন্য আমদানি শুল্ক বাড়ানো না হলেও, একটুও কমানো হয়নি।

স্যানিটারি ন্যাপকিন জীবন বাঁচাতে পারে অনেক নারীর। স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির কাঁচামাল বিনা শুল্কে আমদানি হলে স্বাবলম্বী হতে পারে দেশের প্রান্তিক জনগণ।

বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ নিয়ে হতাশা কাটেনি। তারপরও প্রত্যাশা বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ও সুযোগ-সুবিধার ছিটেফোঁটা সুফলও কি পাবে মাসিক স্বাস্থ্য?, দেশের নারীদের আর কত বাজেট অপেক্ষা করতে হবে মাসিক স্বাস্থ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায়?