কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট?

মুহাঃ তাজুল ইসলাম
Published : 31 Oct 2018, 07:45 AM
Updated : 31 Oct 2018, 07:45 AM

ঘরোয়া লীগে তেমন কোনো পারফরম্যান্স না করেও জাতীয় দলে ঢোকার দারুণ উদাহরণ ছিলেন তুষার ইমরান। সেই সময়ে লংগার ভার্সনে একটা ডাবল সেঞ্চুরি করেই তার ডাক মেলে ওয়ানডে দলে। কিন্তু তারপর অনভিজ্ঞতার কারণে ম্যাচের পর ম্যাচ ফ্লপ হতে থাকেন এই তরুণ ক্রিকেটার। ঘরোয়া লীগে মাঝারি পারফরম্যান্স করা একজন ক্রিকেটার স্বাভাবিকভাবেই  ব্যর্থ হয়েছিলেন জাতীয় দলে। তুষার ইমরানকে যখন জাতীয় দলে নিয়মিত নেওয়া হতো তখন তার গড় রান ছিল মাত্র বিশ-বাইশের মধ্যে। এই গড় দিয়েই তিনি ওয়ানডে দলে খেলে গেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ পড়তে হয়।

বাদ পড়ার পর থেকেই তুষার ইমরানের পারফরম্যান্সে আমূল পরিবর্তন দেখা দিল। এর আগে প্রায় সব ফরম্যাটে ব্যর্থ এই ক্রিকেটারের রানের চাকা ঘুরতে শুরু করলো। এক বছর, দুই বছর বা তিন বছর না, টানা প্রায় এক যুগ ধরে তিনি রান করে চলেছেন অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায়। জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগসহ কোনো ঘরোয়া প্রতিযোগিতাতেই তিনি ধারাবাহিকতা হারাননি।

গত দশ বছর ধরে প্রায় প্রতিটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টে  তিনি সেরাদের তালিকায়। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তার রান এগারো হাজার। তার সময়কার অনেক খেলোয়াড়ই এর অর্ধেক রানও করতে পারেননি।

এই মৌসুমের দিকে তাকালে দেখা যায় শুধু বাংলাদেশ কেন ক্রিকেট বিশ্বের মধ্যে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তার সাতটি সেঞ্চুরি মাত্র বারো ম্যাচে যা এ বছর ক্রিকেট বিশ্বেই কেউ করতে পারেননি। তারপরও তার এই পারফরম্যান্স নির্বাচকদের তৃপ্তি দিতে পারেনি। ঘরোয়া আর জাতীয় দলে বাজে খেলে যখন তিনি ছিলেন দলের মূল ক্রিকেটারদের একজন তখন দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে ঘরোয়া লীগে প্রায় এক যুগ ধরে নিয়মিত সর্বোচ্চ রান করে তিনি এখন বাতিলের খাতায়। যদিও নির্বাচকরা এই প্রশ্ন করতেই পারেন তিনি তার সুযোগ সঠিকভাবে ব্যবহার করেননি বলেই এখন ব্রত হয়েছেন।

একজন আনকোরা অনভিজ্ঞ ক্রিকেটার যিনি বিশ-বাইশ গড়ে ঘরোয়া লীগে রান করেন তাকে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে নামিয়ে দেবার দায় আসলে কাদের? খেলোয়াড়দের নাকি নির্বাচকদের যারা এমন একজন খেলোয়াড়দের ম্যাচের পর ম্যাচ খেলিয়েছেন। আবার অন্যদিক দিয়ে চিন্তা করলে যখন তিনি দশবছর ধরে বছরের পর বছর ভালো করছেন, নিজেকে সংশোধিত করেছেন সেরাদের সেরা হবার জন্য তখন দশ বছর আগের ব্যর্থতার দায়ে দশ বছর পরে দলে তাকে না নেবার দায়ই বা কাদের?  নির্বাচকদেরই নয় কি?

অন্যান্য দেশের টেস্ট ক্রিকেটে বয়স আর অভিজ্ঞতা যেখানে দলে থাকার মূল অস্ত্র সেখানে বোর্ড নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছেন এই বয়সই তার বাদ পড়ার কারণ।

অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের সঙ্গে মাত্র চল্লিশের ঘরে অলআউট হয়েছে। অনভিজ্ঞ তরুণ ক্রিকেটারদের টেস্টে চাপ না সামলানোর এই ঘটনা তো টাটকাই।

দল নির্বাচনে উপেক্ষিত চরম প্রহসনের শিকার আরেক ক্রিকেটারের নাম হলো নাঈম ইসলাম। লিস্ট এ এবং ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে বারো হাজারের উপরে রান করে দুই ফরম্যাটে ৪০ এর উপর গড় ধরে রাখা  একজন ক্রিকেটার তিনি।

তুষার ইমরানের যেখানে সুযোগ ব্যবহার না করার অভিযোগ সেখানে নিজের খেলা সর্বশেষ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো খেলার পরও চিরতরে বাদ দেয়া হয় নাঈম ইসলামকে। টেস্ট ক্রিকেটে ৩২ এরও বেশি  গড় আর ওয়ান ডেতে ২৭ এরও বেশি গড় ধরে রাখা যদি বোর্ডের কাছে খুব বেশি সন্তোষজনক নাও হয় তারপরও আরেকটি সুযোগ তিনি আশা করতেই পারতেন।

লংগার ভার্সন ক্রিকেটে তার মতো ধৈর্য ধরে দীর্ঘক্ষণ ব্যাট করার যোগ্যতার অভাব এখনো জাতীয় দলে ব্যাপক হারে দেখা যায়। বছরের পর বছর সেরাদের তালিকাতে থেকেও নির্বাচকদের সুনজরে নেই তিনি।

জাতীয় লীগ, বিসিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে নিয়মিত সেরাদের মাঝে থাকার পাশাপাশি তার ছিল কার্যকরি অফস্পিনের সক্ষমতা। তারপরও টেস্ট বা ওয়ান ডে দলে থাকা তো দূরের কথা এ বা বিসিবি দলের কোনো ম্যাচেও তাকে রাখা হয়না।

যতটুকু ভালো করলে বাংলাদেশের মতো দলে ডাক পড়বার কথা তারচেয়ে বরং বেশিই করে নাঈম এখন বাতিলের খাতায়।

সর্বশেষ আট-দশ বছরে কখনোই তিনি ফ্লপ ছিলেন না।তার ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে দেখা যায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর নাঈম ইসলামের পারফরম্যান্স আর ব্যাটিং অর্ডার ছিল সবসময়ই কাছাকাছি। মাহমুদুল্লাহকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে তিনি দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন হয়েছেন অথচ নাঈম ইসলামকে কোনো কারণ ছাড়াই ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে সারা জীবনের জন্য।

নির্বাচকদের স্বেচ্ছাচারিতার আরেক নিদর্শন হলেন শফিউল ইসলাম। টেস্ট দলে যার বার বার ডাক পড়েছে এবং প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ ইনিংসে বল করে ম্যাচ প্রতি তিনি একটি করে উইকেটও পাননি। প্রতি উইকেট নিতে তার বল করতে হয়েছে ১০২টি। গড় হিসেবে যা ৫৫.৪১।

বোলিংয়ে এত দুর্বল পারফরম্যান্স করার পরও মাঝে মধ্যেই ডাক পড়ে তার। ডাক পড়ার পর আবার বাদও পড়েন। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তেমন ভালো না করায় আর সুযোগও পাওয়া হয়না।হঠাৎ হঠাৎ দু'এক ইনিংসে উইকেট পেলেই আবার তাকে দলে নিতে নির্বাচকরা উঠে পড়ে লাগেন।

শফিউলের বিষয়টা সামনে আসলে আরেকজন পেসারের নাম আসে; রুবেল হোসেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ সফল এই ক্রিকেটার টেস্টে অবিশ্বাস্য রকমের ব্যর্থ।

সম্প্রতি বিসিবির গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলছিলেন যে রুবেল টেস্ট খেলতে চায়না। অথচ তার একথাটা বলা বরং আরো বেশি স্বাভাবিক ছিল যে রুবেলের টেস্টে খেলার মতো পারফরমেন্স নেই।

কিছু খেলোয়াড়দের ব্যাপারে বোর্ডের দুর্বলতা এমন যে, কোনো রকমের  ছুতো দেখিয়ে যেভাবেই হোক তাদের খেলাতে হবে।

রুবেল হোসেন ওয়ান ডেতে যতই সফল হন না কেন টেস্ট ক্রিকেটে স্ট্রাইক বোলার হিসেবে বাজে বোলিংয়ে তিনি এখন বিশ্বরেকর্ডের পথে। টেস্ট ক্রিকেটে ৪৩ ইনিংসে বল করে যা করেছেন সেটাই তার  পারফরম্যান্সের দৌড় বুঝে নেওয়া যায়। টেস্টে উইকেট পেতে তার যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছে। প্রতিটি উইকেট পেতে  অপেক্ষা করতে হয়েছে ১২৩টি বল আর উইকেট প্রতি তিনি রান দিয়েছেন ৮০.৩৩ যা কমপক্ষে ত্রিশ ইনিংস বল করা পৃথিবীর স্ট্রাইক বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

টেস্টে নিয়মিত বোলার তো দূরের কথা অধিকংশ পার্ট টাইম বোলারদেরও এর চেয়ে অনেক ভালো গড় দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে এত সমালোচনা হতো না যদি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে  তিনি কিছু করে দেখাতে পারতেন।

আন্তর্জাতিক ওয়ান ডের মতো কঠিন জায়গায় যেখানে তার বোলিং গড় ৩২.৫১ সেখানে প্রথম শ্ৰেণির মাঝারি মানের ক্রিকেটে এটি ডাবল (ষাট এর কাছাকাছি)। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে এমন ব্যর্থতার পরও  নির্বাচকরা তাকে টেস্টে একের পর এক ম্যাচ খেলিয়ে গেছেন (ওয়ানডের কথা এখানে বলা হয়নি)।

বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ টেস্ট সিরিজেও তাকে আবারও নেওয়া এবং বরাবরের মতো ব্যর্থতাই প্রমাণ করে নির্বাচকরা তাকে নিয়ে হাল ছাড়ছেন না। হয়তো তার বোলিং গড়ের সেঞ্চুরি হলেই তাকে টেস্ট দলে না নেবার ব্যাপারে নির্বাচকেরা ভাবতে শুরু করবেন।

বিসিবির ভূতুড়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ার আরেকটি উদাহরণ শাহাদত হোসেন।  প্রশ্ন থেকে যায় গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়া শাহাদাতকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে, যেখানে অনেক খেলোয়াড়ই আছেন ব্ল্যাক লিস্টেড তালিকায়।

ঢাকঢোল পিটিয়ে দলে নেবার নজির আছে কামরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও। ঘরোয়া লীগে যার গড় যেখানে ৪২ এর কিছু বেশি মাত্র। আন্তৰ্জাতিক পর্যায়ে তার কাছ থেকে কতটুকু প্রতিফলন পাওয়া যাবে সে সংশয় ছিলই। কামরুলও ব্যতিক্রম কিছু করেননি। প্রথম শ্রেণির মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বরাবরের মতো তাকে উইকেট পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।

একটা টেস্ট দলের নির্বাচকদের এমন সাধারণ বিষয়গুলি কীভাবে চোখ এড়িয়ে যায় তা একটি রহস্য বটে। অথচ দলে নেবার সময় তার ব্যাপারে ব্যাপক প্রশংসা উড়িয়েছেন এই নির্বাচকেরাই।

এবার জিম্বাবুয়ে সিরিজে চমক ছিল ফজলে মাহমুদের অন্তর্ভূক্তি। ক্রিকেট নির্বাচক হাবিবুল বাশার যাকে বলেছেন ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং মিলিয়ে  'কমপ্লিট প্যাকেজ'।  ৮২টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলে মাত্র ২৭টি উইকেট পাওয়া এই ক্রিকেটারকে সাকিবের বিকল্প হিসেবে বল করানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।

১৪ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে ব্যাট হাতে তার গড় ত্রিশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঘরোয়া ক্রিকেট যারা ফজলে রাব্বির চেয়ে অনেক ভালো করেছেন বছরের পর বছর ধরে, কিন্তু দলে সুযোগ পাননি।

বিসিবি চমক ভালোবাসে। তাই টেস্ট টিমে আরেক চমক হলো আরিফুল। প্রায় একযুগের ওয়ান ডে ক্রিকেটে কখনোই ব্যাট হাতে বলার মতো সাবলীল ছিলেন না  তিনি। মাত্র ২৫ গড় আর ৮০'র  নীচে স্ট্রাইক রেট কখনোই একজন ক্রিকেটারকে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবার নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

তারপরও বিপিএলের কয়েকটি ক্যামিও ইনিংস তাকে সুযোগ করিয়ে দিয়েছে টি২০র পর ওয়ানডে ক্রিকেটেও। আবার নাঈম তুষাররা অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক থাকার পরও যেখানে সুযোগ পায়না সেখানে সারা জীবনে আহামরি কিছু না করেও শুধু বিপিএলে কয়েকটি চার-ছক্কা আর প্রথম শ্রেণিতে একটি ডাবল সেঞ্চুরির বদৌলতে টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন তিনি।

বিসিবি নির্বাচকেরা নাকি টেস্টে সাব্বিরের বিকল্প খুঁজছেন, যে কিনা চার-ছক্কার ফুলঝুরি দেখবেন সাব্বিরের মতো। কিন্তু সাব্বিরের ব্যাটিং টেস্টে কতটা কার্যকরি ছিল আর ভবিষ্যতেই বা এই রকমের ব্যাটিংয়ের কতটুকু প্রয়োজন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

নাজমুল ইসলাম অপু হলো আরিফুলের মতো টি২০'র  আরেক ফসল। বিপিএলে ধারাবাহিক উইকেট না পেয়েও চমৎকার ইকোনোমির বদৌলতে টি২০ দলে ঢুকলেন তিনি। সেখান থেকেই ওয়ানডে এরপর এখন টেস্ট দলে।

তাকে দলে নেবার পর একটা বিষয় ভাবনায় আসতেই পারে ঘরোয়া লীগের কোনো বাঁহাতি বোলারকে জাতীয় দলে খেলা থেকে নির্বাচকরা বাদ রাখবেন কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাঁহাতি প্রায় সব ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স কাছাকাছি মানের। তবু এদের বড় একটা অংশ জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন স্পেশাল কিছু না করে। আবার বাদও পড়েছেন বলার মতো খারাপ না করে।

মোহাম্মদ রফিক পরবর্তী যুগে বাঁহাতি স্পিনারদের দলে খেলার তালিকা অনেক লম্বা হলেও সাকিব আর আব্দুর রাজ্জাক ছাড়া কেউই বেশিদিন জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। বিশ্বরেকর্ড করেও বেশিদিন টিকতে পারলেন না এনামুল জুনিয়র।

এরপর একে একে আসলেন মোশাররফ রুবেল, সোহরাওয়ার্দী শুভ, ইলিয়াস সানি, আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম, সাকলাইন সজীব, সানজামুল ইসলাম আর নাজমুল অপুরা।

খুব একটা খারাপ না করেও সারা জীবনের জন্য ব্যাংক লক করা হলো আব্দুর রাজ্জাককে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০০ উইকেট পাওয়া এই ক্রিকেটারকে দর্শক আর মিডিয়ার সমালোচনার মুখে টেস্টে নেয়া হয়েছিল। দলের হয়ে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেও তিনি এক সিরিজ পর ব্ল্যাক লিস্টেড।

ইচ্ছে মতো ডাক দেয়া আর বাদ পড়ার নজির আরও আছে। জুবায়ের লিখন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ, জাতীয় লীগ, বিসিএল কিংবা বিপিএলে সুযোগ না পেলেও তাকে জাতীয় দলে একের পর এক ম্যাচ খেলানো হয়েছে এবং খুব একটা খারাপ না করার পরও বাদ দেয়া হয়েছে। আবার বাদ দেয়ার পর ফিরে আসার জন্য ঘরোয়া লীগের কোনো দলে পর্যন্ত রাখা হয়নি।

একজন খেলোয়াড়কে ফ্রাঞ্চাইজি দলে রাখা না রাখা তাদের ব্যক্তিগত। কিন্তু বিসিবির অধীনস্ত টুর্নামেন্ট যেমন জাতীয় লীগে তাকে জায়গা দেয়া যেতে পারত। প্রশ্ন চলে আসে এখানেও। যে খেলোয়াড়দের ঘরোয়া লীগের মতো মাঝারি মানের জায়গায় দলে রাখার সাহস রাখা যায়না সেখানে আন্তর্জাতিক দলে কীভাবে খেলানোর সাহস হয়?

তামিম ইকবালকে বাদ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রধান নির্বাচকের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বোর্ড প্রেসিডেন্ট বাধ্য হয়েছিলেন তাকে দলে নিতে। টানা চার ফিফটি করে দলকে এশিয়া কাপের ফাইনালে তুলতে নেতৃত্ব দিয়ে এই অন্যায়ের সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গী হয়েছিলেন তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার ইতিহাসে।

বিসিবির আরেকজন রহস্যময় ক্রিকেটার হলো তানভীর হায়দার, যাকে নিয়ে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ব্যাপক উচ্ছাস করে বলেছিলেন সে হবে জাতীয় দলের স্পেশাল বোলার। অথচ জাতীয় দলের এই স্পেশাল বোলার কিনা ঘরোয়া লিগে পার্ট টাইমার হিসেবে গণ্য আর নিয়মিত বল করার সুযোগ পর্যন্ত পান না। দুই ম্যাচ পর যা হবার তাই হয়েছে, এই স্পেশাল বোলারকে আর কোনোদিন জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়নি।

এভাবেই বছরের পর বছর একেক জন বোলারকে দলে নেয়া হচ্ছে, আবার বাদও দেয়া হচ্ছে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া ও পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে। টিম নির্বাচক নিজেও হয়তো বলতে পারবেন না কতটুকু ভালো করলে তারা খুশি হবেন।

ভালো খেলেও অবহেলায় জাতীয় দল থেকে অবাঞ্চিত হবার যন্ত্রণা প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর চেয়ে কারো বেশি জানার কথা না। তার সময়ে দেশের সেরা পারফর্মার হয়ে, ম্যাচের পর ম্যাচ ভালো খেলে পঞ্চাশের উপর গড় নিয়ে তাকে করে রাখা হয়েছিল সারা জীবনের জন্য অবাঞ্চিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে টেস্ট না খেলা প্রথম শ্রেণির সেরা ক্রিকেটার যে তিনি তা মোটামুটি সবাই স্বীকার করে। আজ থেকে উনিশ বছর আগে তাকে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। সারা দেশের মানুষ আর মিডিয়া এই সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে প্রতিরোধ করেছিল।  ফলশ্রুতিতে নির্বাচকেরা বাধ্য হয়েছিল তাকে ওয়ার্ল্ড কাপ স্কোয়াডে রাখতে। আর মানুষের এই প্রতিরোধই সত্য সঠিক হয়েছিল মিনহাজুলের ওয়ার্ল্ডকাপে ইতিহাস গড়ার মাধ্যমে।

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আপনি অনেক ঝড়ের মুখেও গড়েছিলেন ইতিহাস। আজও অনেকেই ইতিহাস হতে চায়। সেই যোগ্যতাও তারা রাখেন। আপনি ও নির্বাচকরা তাদের সামনে  ঝড় হয়ে দাঁড়াবেন না।