Published : 20 Nov 2017, 11:17 PM
আমরা গ্রামে ছিলাম। গ্রাম বলতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বাড়ি ছিল আমাদের। বাবার ছোটখাটো ব্যবসা ছিল। বাবা মাঝে মধ্যে যেতেন খাগড়াছড়ির কিছু এলাকাতে। বাঁশের গাড়ি আসত। তারপর অর্ডার এলে বেড়া তৈরি করে দেয়া। এভাবেই চলছিল সব। মাঝখানের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় পারিবারিক বিরোধের কারণে নানা ঝামেলায় জড়িয়ে যায় পরিবার। না আমাদের আর গ্রামে থাকা হলো না!
সবাই চলে এলাম শহরে। আমার ছোট বয়সে বাবা ট্যাক্সি চালাতেন। সেগুলোকে তখন বেবি ট্যাক্সিই বলতাম। তার অনেক পরে এলো সিএনজি। পরে এক্সিডেন্ট করে বাবা গাড়ি না চালিয়ে গ্রামে চলে যান। এবার অনেক বছর পর শহরে এসে বাব আগের পেশাতেই ফিরলেন। বাবার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। ওদিকে নেই লাইসেন্স। প্রতিদিন রাতে বের হন ফিরেন সকালে। কিন্তু দেখা যায় বেশিরভাগ সময় মালিকের টাকাও জোগাড় হয়নি। কখনো ভাঙ্গা রাস্তার গর্তে পরে গাড়ি আটকে গেলে সেদিন আর গাড়িই চালানো হলো না। সেটা গ্যারেজে নিতেই দিন শেষ। এই যে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের ধর্মঘটের ঘোষণার পর ফেসবুকে সহ বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক মন্তব্য দেখছি। এই যেমন এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,
'আমেরিকায় যেখানে উবারের এয়ার সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে সেখানে আমাদের বাংলাদেশের নবাব সিএনজি ড্রাইভাররা উবার বন্ধ করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেয়! উন্নত দেশগুলোর সাথে উন্নয়নশীল দেশের এটাই পার্থক্য'।
আমার বাবাও একজন নবাব। কিন্তু মাস শেষে দেখা যাচ্ছে ্ঘর ভাড়া দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু পত্রিকায় আসা মন্তব্যে সাধারণ মানুষ কী বলছেন? তাদের অভিযোগ সিএনজি, অটোরিকশাচালকেরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন। তারা মিটারে না গেলেও পুলিশে ধরলে বলতে বলেন মিটারে যাচ্ছি। এছাড়াও বাড়তি ভাড়া আদায়সহ যেতে না চাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তবে মূল অভিযোগ একটাই বেশি ভাড়া আদায় করার। এ অভিযোগগুলো তাদের জায়গা থেকে একদম ন্যায্য।
আসুন, আমার বাবা নবাবের ব্যাপারটা দেখি। উনি মাঝরাতে গাড়ি পেলেও মালিককে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। তারপর বাকীটা আমাদের জন্যে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সকাল পর্যন্ত চালিয়ে মালিককে ওই টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ভাড়তি টাকা পেতে চান তাহলে তিনি কোনভাবেই মিটার ব্যবহার করতে পারবে না। মোদ্দাকথা মালিকের ধার্য করা টাকা আদায়ের তাড়নায় বাড়তি ভাড়া নিতেই হবে। তাহলে দিনের বেলাতে যারা চালাচ্ছেন তাদের মালিককে আরো বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সিএনজি চালকেরা বেশি টাকা ভাড়া নিয়ে যদি অন্যায় করেন তাহলে এই ছোট বাহনের জন্যে দিনে এক হাজার টাকা মালিকের নেয়া কি যৌক্তিক? মালিক যদি এক হাজার টাকা ভাড়া ছাড়া সিএনজি দিতে রাজি না হয় তাহরে চালক কী করবে? সিএনজি মিটারে চালিয়ে কি কখনো সম্ভব মালিকের ভাড়া দিয়ে নিজের সংসারের জন্যে টাকা আয় করা?
এর উপর এই সিএনজিওয়ালাদের ট্রিপ কমে গেছে অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা চালুর ফলে। ফলে মালিকের টাকার বাইরে যে টাকা থাকত তা দিন দিন কমে আসছে। যাত্রীদের সমালোচনার পাশাপাশি এই ধর্মঘটের ঘোষণার পর বিডিনিউজকে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, "তারা যদি মিটারে যায়, যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে যায় তাহলে যাত্রীরা অটোরিকশায় ঠিকই চড়বে। কিন্তু তারা তো গলাকাটা কাজ করে। এত এত জেল জরিমানা করার পরেও তাদের ঠিক করা যায়নি"। [সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম, ২০ নভেম্বর ২০১৭]
এই ঠিক না হওয়ার ব্যাপারটা কি শুধু চালকদের বেশি ভাড়া আদায় করে কোটি টাকা মাসিক আয়ের জন্যে নাকি তারা সেটা করতে বাধ্য? কজন সিএনজি চালকের জীবন সমালাচকরা ভেতরে গিয়ে দেখেছে?