রোহিঙ্গাদের ত্রাণসামগ্রী দিতে যাচ্ছে বর্ণালী টেক্সটাইল এন্ড প্রিন্টিং

নিতাই বাবু
Published : 26 Sept 2017, 02:54 AM
Updated : 26 Sept 2017, 02:54 AM

রোহিঙ্গাদের জন্য হরেক রকম খাদ্যসামগ্রী প্যাকেটজাত করা হচ্ছে।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের আরাকান প্রদেশের রাখাইন রাজ্য। সেখানে ২০০ বছর ধরে চলে আসছে বৌদ্ধ-রোহিঙ্গা জাতিগত দাঙ্গা-হাঙ্গামা। এই দাঙ্গা-হাঙ্গামায় মায়ানমার সেনাবাহিনীদের লক্ষ্যবস্তু হলো সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। জীবন বাঁচাতে লাখেলাখে রোহিঙ্গা সীমান্ত ডিঙিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের উখিয়ার কুতুপালং নামক স্থানে তাদের এখন আশ্রয়স্থল। সেখানে মায়ানমার থেকে আগেপাছে আসা এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ লোকেরও বেশি আশ্রয় নিয়েছে। যা আমাদের ছোট একটা দেশের জন্য মরার ওপর খরার ঘা। তবু আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এক ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। যা এক মহামায়ার কৃপা বলেই মনে হয়। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে বললেন, "আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। সেখানে আরও ৭ লাখ মানুষকেও খেতে দিতে পারবো।" মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ এক যুগান্তকারী ঘোষণা।

এমন দৃষ্টান্ত বিশ্বে এটাই প্রথম ও বিরল। যেখানে জার্মানির মতো দেশও শরণার্থীদের নিয়ে বিপাকে পরেছিল। একসময় সিরীয়া থেকে যখন হাজার-হাজার শরণার্থী জার্মান গিয়েছিল। তখন তারাও পারেনি শরণার্থীদের সমস্যা সমাধান করতে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখ শরণার্থীর সমস্যা সমাধান করে দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এরপর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নজর পড়তে শুরু করে বিশ্ব মোড়লদের। ঘোষণা আসতে থাকে বহির্বিশ্ব থেকে সাহায্য ও ত্রাণসামগ্রীর। সাথে জড়িত হয়, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীমহল ও বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠন।

এর ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যায়, নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ব্যবসায়িক মহল। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে চৌধুরী বাড়ি থেকেও গিয়েছেন, একদল ব্যবসায়িক। তারা হলেন; চৌধুরী বাড়ি বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়িক মালিক সমিতির সদস্যবৃন্দ। তাদের ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল মশারি ও নগদ টাকা। রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ থেকে মনে আরও যাবে আশাকরি।

এরমধ্যে রোহিঙ্গাদের সাহায্য দিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে গোদনাইলের একটি নীট গার্মেন্টস। এটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইলে অবস্থিত, বর্ণালী টেক্সটাইল এন্ড প্রিন্টিং। মালিক বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক, জনাব হাজী মো: হারুন অর রশিদ। তিনি দিচ্ছেন, প্রায় ২০০০ লোকের জন্য ত্রাণসামগ্রী, টাকার অঙ্ক প্রায় দশলাখ টাকা। এতে থাকছে চিড়া, বিস্কুট, শিশু খাদ্য-সহ আরও অনেককিছু। থাকছে সাবান-সহ পানি পান করার জন্য একটি করে মগ ও আখের গুড়। সবকিছু থাকবে একটা বড় আকারের প্যাকেটের ভেতরে।

ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কক্সবাজারে উদ্দেশ্যে রওনা হবে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইং, রোজ বুধবার। ত্রাণ নিয়ে সেখানে গিয়ে তারা প্যাকেটগুলো হাতে-হাতে না দিয়ে, সরাসরি আর্মিদের কাছে পৌঁছে দিবে। এটা তাদের এখানকার সিদ্ধান্ত। পরবর্তী সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে পাল্টাবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না।


রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা দেখে সেই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা মনে পড়ে। সে সময় পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে প্রাণ বাঁচাতে বহু মানুষ ভারত গিয়েছিল। হয়েছিল শরণার্থী, অবস্থান করেছিল ৯ মাস বা তারও বেশি। এখন আর সেই সময়টা আমাদের নাই, আছে স্মৃতিকথা। এখন আমাদের দেশে রোহিঙ্গারা হলো শরণার্থী। এই জনগোষ্ঠীর ৭/৮ লাখ মানুষ আজ মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। আধুনিক সভ্যজগতের পৃথিবীতে রাষ্ট্র বিহীন কোনও জনগোষ্ঠী আছে বলে আমার জানা ছিল না।

এখন জানলাম, যদি থাকে, তা হলে আছে এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো। আজ পর্যন্ত তাদের দেওয়া হয়নি মাতৃভূমির অধিকার। অসহায়ত্ব, নিরাপত্তাহীন, রোগশোক আর দুঃখদুর্দশাই তাদের নিত্য সঙ্গী। যুগযুগ ধরে আরাকান প্রদেশের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করেও পায়নি নাগরিকত্ব। ইউটিবের ভিডিওতে দেখা যায় তাদের কষ্টের চিত্র। মায়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের দৃশ্য দেখলে গা শিউরে ওঠে। ওইসব অত্যাচার সইতে না পেরেই তারা বেছে নিয়েছে আমাদের দেশটাকে। প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে শরণার্থী, তাকিয়ে আছে আমাদের মুখের দিকে। রাস্তায় বসে অপেক্ষা করে, কে কখন আসবে কিছু খাবার নিয়ে।

তাদের সেবা করাই এখন আমাদের বড় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু এই রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন আমাদের দেশে অতিথির মতো। এই ভবসংসারে মানবসেবা বলতে যদি কোনও কথা থাকে, তা হলে তাদের সেবা করাই হবে মানবসেবা। মানবতার শ্রেষ্ঠ কাজ, মনুষ হয়ে মানুষকে সেবা করা। সেই দেবা পৌঁছে যায় স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার কছে, সার্থক হয় মানব জীবন। তাই বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে, আমাদের উচিৎ সবার আগে তাদের পাশে দাঁড়ানো।

তাই আসুন নারায়ণগঞ্জের বর্ণালী টেক্সটাইল এন্ড প্রিন্টিং-এর মালিকের মতো এগিয়ে যাই। সবাই গিয়ে দাঁড়াই রোহিঙ্গাদের পাশে, সাহায্য করি তাদের। প্রতিষ্ঠা করি মানবতা, দেখিয়ে দেই মায়ানমার-সহ বিশ্বকে। আশা করি সবার সহযোগিতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সংকট নিরসন হবে। বেঁচে থাকুক মানুষ, জয় হোক মানবতার।