Published : 15 Sep 2017, 01:56 AM
আমেরিকা এবং ব্রিটেনের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে মিয়ানমারের সহিংসতা বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন। ১০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে লিখেছিলাম, চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার একহাত নেয়ার সুযোগ আছে। আমেরিকা এবার সেই একহাত নেয়ার জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। সঙ্গে আছে চিরসঙ্গী ব্রিটেন। ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যদের ভিন্ন কিছু ভাবার সুযোগ নেই। চীনের চিরশত্রু ভারত এমন সুযোগ কেনই বা হাতছাড়া করবে? আজকে রোহিঙ্গাদের জন্য তারা ৫৩ টন খাদ্য পাঠিয়েছে; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বলেছে, ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে।
যথারীতি বিপাকে পাকিস্তান। চীনের মুখাপেক্ষী পাকিস্তান এখন আর মুসলিম উম্মার জন্য কান্নাকাটি করতে পারছে না। এই অসভ্য দেশটি চরম সুবিধাবাদী। যখন দরকার হয় তখন এরা ইসলাম বেচে দেয়। যেমন বেচেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়; কয়েকটা ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের আইনানুগ বিচারের সময় এরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা হত্যা এবং লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নির্যাতনের সময় এরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না।
সৌদি আরব আরেক সুবিধাবাদী। শুধু সৌদি কেন মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তেমন কিছু করছে না। এরা ইয়েমেনে মুসলমানদের হত্যা করছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের কান্না তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না। এই মাজাভাঙ্গা মুসলিম দেশগুলো দিয়ে মুসলমানদের কোন দিন কোন কাজ হয়নি। এরা ইরাকে, লিবিয়ায়, সিরিয়ায় পশ্চিমাদের হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় মুসলমানদের নয়, ছিল পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষে। রোহিঙ্গা বিষয়ে আরবদের অক্রিয়াশীল দেখে মনে হচ্ছেঃ পরাশক্তিদের শক্তি পরীক্ষার সারথী হতে তাদের রয়েছে যথেষ্ট অনাগ্রহ। শেষ পর্যন্ত কি তারা পশ্চিমাদের সারথী না হয়ে পারবে? এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বহুকাল ধরেই মিয়ানমার চীনের কদর রাজ্য। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শুধু চীন কেন এতকাল ভারত বা পশ্চিমারাও যায়নি। সেখানে সু চি'র নেতৃত্বে গণতন্ত্র এলে তেল, গ্যাস চেটেপুটে খেতে পারবে – এমন ধান্দায় ছিল সকলেই। চীন ঝানু মাল। পশ্চিমাদের পাপেট সু চী ক্ষমতায় এলেও মিয়ানমারের খনিজ সম্পদের উপর, ব্যাবসা বাণিজ্যের উপর ভাগ বসাতে পারেনি সাম্রাজ্যবাদীরা। চীন বর্মী সেনাদের মাধ্যমে সব কিছুর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। ভারত সেখানে গিয়ে কিছু রাস্তা-ঘাট বানানোর কাজ পেলেও বড় কিছুর ধান্ধা সফল হয়নি। এই রোহিঙ্গা ক্রাইসিসে ভারতের যাকিছু অবশিষ্ট ধান্দা ছিল তা ছেড়ে দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থের লোভে লাইন ধরেছে পশ্চিমাদের। ভারত এবং পশ্চিমাদের ধান্ধা এখন চীনের অনুগ্রহে চীনের সঙ্গে মিলেমিশে বর্মী সম্পদে ভাগ বসানো নয় বরং সামগ্রিক ভাবে চীনকে দূর্বল করা। সে কারণেই উত্তপ্ত হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগর, বাণিজ্য এবং উঃ কোরিয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিন-চীন রাজনীতি।
পশ্চিমা পাপেট সু চি'র কাঁধে বন্ধুক রেখে এবারে বর্মী সেনারা নির্যাতন চালিয়ে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা মুক্ত করার পণ করেছে। ইজ্জত গেছে সু চির, উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে বর্মী উগ্র জাতীয়তাবাদীদের। সু চিকে বলি দিয়ে, যৎসামান্য বর্মী প্রগতিশীলদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার সুখ অনেক অনেক দিনের জন্য দমিয়ে দিয়ে বর্মী সেনারা উগ্র বর্মী জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন বজায় রাখছে। আখেরে ক্ষতি হচ্ছে সু চি'র; প্রগতিশীলদের। সু চি এখন বর্মী সেনাদের মাইনকা চিপায়। সারা জাহানের গালি শুনেও এদিক ওদিক করার অবস্থায় নেই।
চীন পশ্চিমা পাপেট সু চি'র নয়, স্বার্থ দেখবে সেনাদের। তবে সেনাবাহিনীর স্বার্থ রক্ষার মধ্যেও বিশ্ব দরবারে মুখ রক্ষার্থে চীন কিছু ছাড় দেবে রোহিঙ্গাদের। এ কথার ভিত্তি হচ্ছে গতকালের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের। ৬ দশক ধরে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসলেও এই প্রথম নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিবৃতি দিতে পারল। চীন এবং রাশিয়া বাঁধা দিলে এই বিবৃতি দেয়া সম্ভব হত না। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে নিরাপত্তা পরিষদ এরকম উদ্যোগ নিলেও চীন ও রাশিয়ার বাধার মুখে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। চীন বর্মী সেনাদের সমর্থন দেবে সর্বোচ্চ। তবে তাদের বাড়াবাড়ির কিছুটা দমন এবার চীনকে করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ব রাজনীতির একটা বড়সড় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে, উঃ কোরিয়া নয়; মিয়ানমার।