Published : 05 Feb 2016, 06:52 PM
এসেছে ফেব্রুয়ারি। একুশে, প্রাণের একুশে সেও আসছে। বাঙালির সে এক রক্তমাখা অধিকারের অর্জন –
"আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি"।
একুশে এদেশের অবহেলিত বাঙালির প্রথম প্রতিবাদের ফসল। তরতাজা এদেশেরই তরুণ রক্তের দামে অর্জনের ঐতিহাসিক মহান ইতিহাস। যা আজ বিশ্বজয়ী বাংলা ভাষা। যা আজ বিশ্ব স্বীকৃত এক মহান ভাষা। ভাষার তরে বুকের রক্ত দেবার ইতিহাস জগতে আর কোথায় আছে? কোথায় আছে ভাষার আকাশে দারুণ এমন চন্দ্রবিন্দু? সে যেন বাংলা ভাষার চাঁদের অধিক সৌন্দর্য।
তো, এই ভাষা বাংলা মায়ের মুখের বুলি হতেই সাধুভাষা ও কথ্য ভাষার রূপান্তরিত আধুনিক চলিত ভাষায় আমরা লিখি। এবঙ পড়ি। পরিবেশনা করি অনেক শিল্পিত রূপে। তারপরেও কথা রয়েছে। এই বাংলা ভাষা বাংলা একাডেমীতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভাষা ইন্সটিটিউটে গবেষণা, চর্চা ছাড়িয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছে। তারপরেও বাংলা ভাষার বহুবিধ ব্যবহারের যথেচ্ছ নমুনা হাজারে-হাজার দেয়া যেতেই পারে। যাদের অন্যতম অপরাধটি অশুদ্ধ বানান। তারপর রয়েছে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ। সেটি অবৈধ না হলেও বিশ্বে জাহির করার মতেন / খুব হৃদয়গ্রাহী প্রশংসনীয় কাজ এমন বলা হয়তো সঠিক না। হ্যাঁ, আজকাল নাটকে এক জগাখিচুড়ি বাংলা ভাষার প্রচলন চলছে কিছু বছর ধরে। শুনতে মজা লাগতে পারে হয়তো। তাই অনেকেরই মুখে শোনাও যায়। তরুণ সমাজে বেড়েছে অই জগাখিচুড়ি ভাষার প্রয়োগ। তা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা প্রকাশিত। আদতে বাংলা ভাষার মার্জিত চলিত রূপটি হৃদয়গ্রাহী। তাকে জগাখিচুড়ি পাকানো শুভবোধের পরিচায়ক না বলেই আগামীর তরুণদের মাঝে অধিক হারে জগাখিচুড়ি ভাষা ছড়িয়ে পড়া ভাষার শ্লীলতাহানির মতোন বিষয় বলে হৃদয় সঙ্কুচিত আমার। বিষয়টি নিয়ে ভাবিত আমি। আমার এ লেখাটি বাংলা ভাষা মায়ের অবমাননা রোধের ক্ষুদ্র একটি ইচ্ছের প্রকাশ।
গত বছর বইমেলায় আমার "জীবনপুঁথি"-র প্রকাশ। বইটির একটি কবিতা শেয়ার করলাম এখানে।
জীবনপুঁথি।।
*************
কেন যে আমার হাত কেমন কুঁকড়ে যায়?
যা কিছু সহজসাধ্য ছিলো প্রিয় বাংলায় –
যা কিছু সহজ পথ জগতবাড়ির সোঁদামাটি –
কেন গো আমরা তার চারপাশে গর্ত খুঁড়ে রাখি?
দেখো না কেমন বেঁকে বিপর্যয়ের খাদের দিকে –
গড়িয়ে পড়ছে প্রিয় বাংলার রূপ রঙ ওঠা ফিকে !
অথচ আমরা কিন্তু পারতাম তাকে ছবিতে রাঙাতে
সুন্দরের জয়মাল্যে ভাঙা অভিমানও ভাঙাতে।
এইদেশে কেউকেটা নাক ফুলিয়ে ফুলিয়ে বুক –
কেউকেটারা বাংলা অশুদ্ধ বানানে লেখে হাসিমুখ।
হাই-হ্যালোয় ভাসিয়ে সামাজিক যোগাযোগ –
নিজ ঘরে সেই আদ্যিকালের যোগবিয়োগ।
ভাগ বলতে মায়ের সেই যা, ভাগ না, ভগ্নাংশ।
বুঝেছি ভাগের হিস্যা বণ্টনে যার যা অংশ –
সেইখানে কেউ কাউকেই ছাড় দিতে রাজী নয়।
সেইখানে কি অনড় আমরা ত্যাঁদড়ও কি নই?
তো, এই মনুষ্য চরিত্রের মানুষরা হেসেখেলে –
জীবন কাটাই আর অযাচিত মাথা গলাই সময় পেলে
খেয়ে না খেয়ে কেমন নাচি? যেমন নাচাও তেমনই
সব খেকো খোকাখুকু বয়স হলেও তেমনই।
বয়স হয়েছে বলা মানেই ছেলেমানুষি ছলেবলে।
সবখানেই ঢুঁ মারা নগদ নেওয়া জলেস্থলে।
মুফত কে পায় ভোট পেতেও নগদ চোরা কারবার।
বাণিজ্যে বসতি আহ জীবনানন্দেও নেই ছাড়।
কবে কি পেয়েছিলাম বিনামূল্যে কিছু পাতা …
হোক সে শুকনোপাতা উড়িয়ে ঠেকাই মাথা।
আহ মা কি আর তেমন মা বিশ্ব মায়ের আঁচলপাতা।
আহ মা কি আর তেমন মা বিশ্ব মায়ের আঁচলপাতা।
ফেব্রুয়ারী। ২০১৬ সাল।
ঢাকা। বাংলাদেশ।