“গতবারের বর্ষার মতো এবার যাতে পানি না জমে, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে।”
Published : 22 Apr 2025, 02:34 PM
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে সরকার কাজ করছে এবং এই লক্ষ্যে সেনাবাহিনী এ এলাকার তিন নদী খনন করবে বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইস গেট পরিদর্শন শেষে ভবদহ মহাবিদ্যালয় মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুকী আজম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তিন উপদেষ্টা সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে পৌঁছান। সেখান থেকে নওয়াপাড়া মাঠে ধান ক্ষেত পরিদর্শনে যান তারা।
যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ পরিচিত ভবদহ অঞ্চল হিসেবে। পুরো এ অঞ্চল জলাবদ্ধতায় ধুঁকছে অনেক বছর ধরে। এর সমাধানে বারবার নেওয়া ‘ভুল প্রকল্প’ শুধু রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকারই অপচয় করেনি; বাড়িয়েছে ভুক্তভোগীদের কষ্টের দিন।
যে কারণে একটু ভারি বৃষ্টি হলেই ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, পুকুর, খাল-বিল উপচে পানি উঠে যায় উঠানে, ঘরে, মসজিদে-মন্দিরে, স্কুলে-কলেজে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “কয়েকটা মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকায় এবার ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ সম্ভব হয়েছে। বাকি চার হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধ থেকে গেছে।
“গতবারের বর্ষার মতো এবার যাতে পানি না জমে, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচপাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এ এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
“এসব উদ্যোগের পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।” যোগ করেন রিজওয়ানা হাসান।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে টানা বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলে বিলের পর বিল, কয়েকশ গ্রাম-হাটবাজার তলিয়ে কাজকর্মহীন বসে থাকা ১৫ লাখের বেশি মানুষ জীবন-জীবিকার হুমকিতে পড়ে; পানিবাহিত রোগা-বালাই বেড়ে, দেখা দেয় খাদ্য সংকট। বছরের পর বছর ধরে পানির সঙ্গে তাদের এ যুদ্ধ করেই যেতে হচ্ছে।
এ ভোগান্তি নিরসনে এখনও নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর উদ্যোগ। পানি সরানোর একমাত্র সক্রিয় উপায় পাম্প দিয়ে সেচ- যার ওপর ভরসা করার আদৌ কোনো কারণ দেখছেন না দুর্ভোগ-ক্লান্ত ভবদহের মানুষ।
জলাবদ্ধ-উপদ্রুত মানুষদের মতে, টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বা জোয়ারাধার বাস্তবায়নের জনদাবি উপেক্ষা করে সেই অনেক বছর আগে থেকে বাঁধ দেওয়া, স্লুইট গেট, সেতু-কালভার্ট, পোল্ডার নির্মাণ করা; ‘ভাগবাটোয়ারা’র অপ্রয়োজনীয় সেচ পাম্প স্থাপন, খননের নামে নদীর মাটি কেটে নদীতে ফেলা; বাঁধ দিয়ে খালগুলো দখল করে নদীর সঙ্গে সংযোগ ছিন্ন করার মত প্রকল্পের জের টানতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যেই ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপারে মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা তিনজন উপদেষ্টা একসঙ্গে ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে এসেছি, যাতে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানে জাতীয় নীতি নির্ধারণী মহলে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সহজ হয়। অন্তত চিরস্থায়ী সমাধানের কাজ আমরা যাতে শুরু করে যেতে পারি, সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।”