দুই প্রবাসীকে অপহরণ ও নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে রুহেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
Published : 03 Mar 2024, 12:28 PM
নিউ ইয়র্কে দুই প্রবাসীকে অপহরণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন এবং মুক্তিপণের জন্য হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িত এক বাংলাদেশি চক্রের সদস্য রুহেল চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই।
৩৪ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশিকে ধরিয়ে দিতে গত ১ মার্চ এফবিআই একটি পোস্টার প্রকাশ করেছে; যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও সে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
২০২৩ সালের ২৭ মার্চ ও ১১ মে অপহরণ-নির্যাতনের দুটো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রুহেল চৌধুরীকে খুঁজছে পুলিশ। ওই দুই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও সবাই বাংলাদেশি।
এর মধ্যে একটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হন জ্যামাইকার আবু চৌধুরী (৩৪), তার স্ত্রী ইফফাত লুবনা (২৪)। গ্রেপ্তারের পর তারা জামিন পেলেও তা বাতিলের আবেদন করেছেন প্রসিকিউটররা।
অন্য ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সুলতানা রাজিয়া, সৈয়দ রুবেল আহমেদ (৪৩), সাহেদ আলম (২৯) ও আঞ্জু খান (২৮)। ৫০ হাজার ডলার বন্ডে সুলতানা রাজিয়া, লাখ ডলার বন্ডে সৈয়দ রুবেল আহমেদ জামিনে মুক্তি পেলেও সাহেদ আলম এবং আঞ্জু খানকে আটক রাখা হয়েছে।
The #FBI is offering a reward of up to $20,000 for information leading to the arrest and conviction of Ruhel Choudhury, wanted for his alleged involvement in two kidnappings that occurred on March 27, 2023, and May 11, 2023, in Queens, New York: https://t.co/RpXqamaDpP pic.twitter.com/zjBz98mkIa
— FBI New York (@NewYorkFBI) March 1, 2024
এফবিআই বলছে, নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স এলাকায় অসহায় প্রবাসীদের অপহরণ, যৌন নিপীড়ন এবং মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অকথ্য নির্যাতনের ওই দুই ঘটনায় চক্রের অন্যদের গাড়ি সরবরাহের পাশাপাশি নিজেই তা চালাচ্ছিলেন রুহেল।
তিনি পুরনো গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দালাল হিসেবে কাজ করলেও অপহরণ, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির সঙ্গে অপরাধে জড়িত।
১৯৯০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া রুহেলের উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, ওজন ১৫০ পাউন্ড। কুইন্সের হোলিস, কুইন্স ভিলেজ আর জ্যামাইকা এলাকা তার বিচরণক্ষেত্র।
কেউ তাকে দেখলে নিকটস্থ এফবিআই অফিস অথবা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে এফবিআইয়ের পোস্টারে। সন্ধানদাতাকে ২০ হাজার ডলার পুরস্কারহি দেওযার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ২৭ মার্চ কুইন্সের জ্যামাইকা থেকে এক প্রবাসীকে অপহরণের পর প্রায় ১৪ ঘণ্টা অকথ্য নির্যাতন করে ওই চক্র।
জ্যামাইকার ১৮১ স্ট্রিট এবং হিলসাইড এভিনিউ এলাকার রাস্তা থেকে ওই ব্যক্তিকে জোর করে একটি হন্ডা এসইউভিতে তোলেন আবু চৌধুরী। গাড়িতে তোলার পর ওই প্রবাসীকে তিনি পেটাতে থাকেন। সে সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রুহেল।
এক পর্যায়ে সেই ব্যক্তিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার মধ্যে নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করে অপহরণকারীরা। আবু চৌধুরী তার ফোনে সেই দৃশ্যের ভিডিও করেন।
রুহেল চৌধুরী, সৈয়দ রুবেল আহমেদ, সাহেদ আলম, আঞ্জু খান ও সুলতানা রাজিয়াও এই নির্যাতনে অংশ নেন। চলন্ত গাড়ির ভেতর রাতভর ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন চলে। এক পর্যায়ে তিনি পানি চাইলে অপহরণকারীরা তাকে চেতনানাশক মেশানো পানি দেয়। তা পান করে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরদিন নিজেকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে দেখতে পান।
অপহরণের অন্য ঘটনাটি ঘটে গতবছরের ১১ মে কুইন্সেরই উডসাইড এলাকায়। উডসাইডে ৭২ স্ট্রিট এবং ব্রডওয়ে এলাকায় এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে ডেকে নিয়ে যান লুবনা। সেখানে ওঁৎ পেতে ছিলেন লুবনার স্বামী আবু চৌধুরী। তিনি ওই প্রবাসীকে জোর করে একটি মিনিভ্যানে তুলে মারধর শুরু করেন।
ওই মিনিভ্যানও চালাচ্ছিলেন রুহেল। তিনি গাড়ি চালিয়ে ওই প্রবাসীকে নিয়ে যান একটি হোটেলে। সেখানে ওই ব্যক্তিকে ধর্ষণ করেন আবু চৌধুরী।
পরে ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে ২০ হাজার ডলার মুক্তিপণ দাবি করেন আবু চৌধুরী। ফোন কল চলার মধ্যেই ভিকটিমকে পেটানো হয়, যাতে তার চিৎকার তার বাবা শুনতে পান। তার বাবাকে আবু চৌধুরী হুমকি দেন, এ ঘটনা পুলিশকে জানানো হলে তার ছেলেকে তো তারা পাবেনই না, তাকেও হত্যা করা হবে।
প্রসিকিউটররা আদালতকে বলেছেন, ওই প্রবাসীর বাবা মুক্তিপণের অর্থ দিতে অস্বীকার করেন। অপহরণের তিনদিন পর ভিকটিমের হাত ও চোখ বেঁধে জ্যামাইকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে যাওয়া হয়। ভিকটিম দাঁত দিয়ে দড়ি কেটে হাত মুক্ত করার পর জানালা ভেঙে পাশের বাসিন্দাদের ৯১১ এ কল করতে অনুরোধ করেন।
গতবছর জুলাই মাসে এ মামলায় আবু চৌধুরী ও লুবনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বাকিদের গ্রেপ্তার করে ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে হাজির করা হয় এ বছর ১১ জানুয়ারি। রুহেলকে গ্রেপ্তার করা গেলে তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে।