তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে আবেদন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 01 Nov 2023, 03:26 PM
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘ভুয়া উপদেষ্টা’ কাণ্ডে গ্রেপ্তার সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ।
তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে আবেদন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিন শুনানির পর আদালত সারওয়ার্দীর রিমান্ডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই শাহ আলম জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ‘উপদেষ্টা’ পরিচয় দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফী নামের এক মার্কিন নাগরিকের সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে সাভার মডেল টাউন থেকে সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
আরেফীর বিরুদ্ধে দুদিন আগে পল্টন থানায় যে মামলা করা হয়, সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সেই মামলার আসামি।
মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার করা থানার ওই মামলায় বলা হয়েছে, শনিবার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, শনিবার বিএনপি কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ দাবি করা আরাফী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে তার দিনে ১০-১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপরও ‘নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে’ বলে দাবি করেন আরেফী।
তাকে ‘মিথ্যা বক্তৃতা দিতে সহযোগিতা করে’ সারওয়ার্দী ও ইশরাক বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে উসকানি দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। এও বলা হয়েছে, আরেফীর বক্তব্য শুনে ও ভিডিও দেখে দেশের আইন-শৃখলায় ব্যাপক ‘অবনতি ঘটে’।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, আরেফী তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে আমেরিকা চলে যান। ১৯৮৬ সালে আবার দেশে আসেন। পরে ২০২২ সালে দেশে এসে খুলনার এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় মাস বারিধারায় তিনি বসবাস করেছেন।
“ওই সময় হাঁটাচলা করতে গিয়ে সারওয়ার্দীর সাথে পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।”
হারুন বলেন, “আরেফী আমেরিকা চলে গেলে সোহরাওয়ার্দী তাকে বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির একটি সমাবেশ আছে, আপনি একটু আগে আসেন। তিনি (আরেফী) এক মাস আগে বাংলাদেশে আসেন। আবার চলে যান এবং ২৬ অক্টোবর আবার দেশে আসেন।
তাকে বিএনপি'র বড় র্যালি আছে এটা বলে নিয়ে যায় পার্টি অফিসে।”
আরেফীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, “উনি বলেছেন, সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলাল ও ইশরাক উনাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, এটা সত্য না। তারা মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছেন।
এর আগে, আরেফীর সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে কারও যাওয়ার তথ্য পুরোপুরি ‘মিথ্যা’।
আর বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন, তার সম্পর্কে বিএনপির কাছে কোনো তথ্য নেই।
রোববার দুপুরের পর দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ আরেফীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
পরে ওই দিনই আরেফী, হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাসভঙ্গের’ মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার। সেই মামলাতেই সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।