আদালতে পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের একটি মনিটরে অভিযুক্তদের নাম, ঠিকানা ও ছবি দেখানো হয়, যা নিয়ে নোটিসদাতা আইনজীবীর আপত্তি।
Published : 02 Feb 2024, 05:47 PM
মামলায় অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রকাশ করে দিয়ে সাংবধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ঢাকা মহনগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন একজন আইনজীবী।
পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডেপুটি কমিশনারকে বৃহস্পতিবার ওই নোটিস পাঠান সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী লাবাবুল বাসার।
সেখানে বলা হয়েছে, মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী পরিচালিত একটি সহায়ক অফিস পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ, যারা সময়ে সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে।
এ অফিসের বাইরে নিচ তলায় একটি মনিটর রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন থানা হাজত থেকে আসা অভিযুক্তদের নাম, ঠিকানা ও ছবি নিয়মিত সাধারণ মানুষকে দেখানো হচ্ছে। অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের জিআর শাখায় যোগাযোগ করলে জানানো হয়, অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে এবং সাধারণের সুবিধার জন্য তারা এসব তথ্য উন্মুক্ত করছে।
এ বিভাগের ডেপুটি কমিশনারকে পাঠানো ওই নোটিসে বলা হয়, “আপনার অফিসের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে জনসাধারণের জন্য অভিযুক্তদের সমস্ত তথ্য উন্মুক্ত করতে গিয়ে আপনার অফিস অভিযুক্তের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে চলেছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।
“উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা একটি মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধান ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করেছে। আপনার অফিস কর্তৃক জনসাধারণের জন্য তথ্যের উন্মুক্ততা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
নোটিসে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সংগতি রেখে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ পাস হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোনো তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করা যাবে না।
কিন্তু অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ নিয়মিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মামলার আসামিদের তথ্য ও ছবি প্রচার ও প্রকাশ করছে, যা ওই আইনের লঙ্ঘন বলে আইনজীবী লাবাবুল বাসারের দাবি।
নোটিসে তিনি লিখেছেন, “কোনো অভিযুক্তের তথ্য ও ছবি প্রচার ও প্রকাশ না করতে হাই কোর্ট বিভাগের নির্দেশনা থাকলেও আইন অনুযায়ী পরিচালিত আপনার অফিস নিয়মিত উক্ত নির্দেশনা ভঙ্গ করে চলেছে।”
লাবাবুল বাসার বলছেন, “অভিযুক্তের সমস্ত তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে বিচার হওয়ার আগেই ওই অভিযুক্তকে সাধারণ মানুষের মানসিক বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। এতে একজন অভিযুক্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে আইনের চোখে নিরপরাধ হলেও অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ সোশাল স্টিগমার কারণ ঘটাচ্ছে।”
“এমনকি বিচার প্রক্রিয়া শেষে আইনের চোখে একজন অপরাধীও তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য হকদার। আমাদের সংবিধান সে অধিকার নিশ্চিত করেছে। অথচ অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ সাংবিধানিক আইন, প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে নিয়মিত আইনের লঙ্ঘন করে চলেছে।”
এসব যুক্তি দিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে ওই মনিটর নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে নোটিসে। তা না হলে হাই কোর্টে রিট মামলা করা হবে বলে সতর্ক করেছেন নোটিসদাতা আইনজীবী।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন “এখনো নোটিস পাইনি, নোটিস হাতে এলে বক্তব্য জানাব।”