সংঘাতের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে দূতাবাস, রাষ্ট্রদূতের বাসভবন; তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে দূতাবাস কর্মকর্তাদের।
Published : 26 Apr 2023, 07:09 PM
সুদানে সশস্ত্র সংঘর্ষের মধ্যে খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাসও আক্রান্ত হয়েছে। দূতাবাসের পাশাপাশি মিশন প্রধানের বাসভবনেও গুলি আঘাত হানে। তার মধ্যেই আফ্রিকার ওই দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের ফেরাতে কাজ করছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা।
সুদানের ক্ষমতার দখল নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল দুই বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়। তাতে এই পর্যন্ত কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছে। রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো এখন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
সংঘর্ষ শুরুর পরপরই ১৫ এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসভবনে মেশিনগানের গুলি এসে লাগে। এক সপ্তাহ পর ২২ এপ্রিল দূতাবাস ভবনও আক্রান্ত হয়।
খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসা।
শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তারেক বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংঘর্ষ শুরুর প্রথম দিনই তার বাসায় আঘাত হানে মেশিনগানের গুলি। তখন তিনি বাসাতেই ছিলেন।
গুলি কারও গায়ে না বিঁধলেও বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান তিনি। পরে বাসা থেকে সরে যান তিনিসহ অন্যরা।
২০ এপ্রিল খার্তুম ছেড়ে গেলেও কিছু কাজে দুদিন পর আবার দূতাবাসে ফিরে আসেন মিশন প্রধান তারেকসহ দূতাবাসের কর্মীরা। ফিরে দেখেন, দূতাবাস ভবনেও গুলির আঘাত।
তারেক বলেন, ভবনের তিন তলায় গুলিবর্ষণ হয়। নিরাপত্তাকর্মীরা নিচতলায় থাকার কারণে তাদের কারও গায়ে লাগেনি।
“দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় গুলির আঘাত লেগেছে। দেয়াল, জানালা প্রভৃতি ভেদ করে গুলি ভেতরেও ঢুকেছে।”
গুলিতে ভবনের জেনারেটর বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত। জেনারেটরের তেলের মজুদ ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় এবং অচল জেনারেটরের কারণে নিরাপত্তাকর্মীদের সেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তারেক।
উদ্ধার প্রচেষ্টা
দুটি ভবন আক্রান্ত হওয়ার পর দূতাবাসের কর্মকর্তারা ২৪০ কিলোমিটারে দূরে জাজিরা প্রদেশের মাদানি শহরে থেকে আটকে পড়াদের ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কয়েকটি দেশ মিশন বন্ধ করে দিলেও সুদানে বসবাসরত দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশির কথা বিবেচনা করে দেশটিতে মিশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। পরিস্থিতি দেখে এখন বাংলাদেশিদের ফেরানোর পরিকল্পনা হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক জানান, সুদানে থাকা দেড় হাজার বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচশ জনের মতো দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাদেরকে এই মাসের শেষে কিংবা আগামী মাসের শুরুতে উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলছে।
অন্য দেশের মতো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আটকে পড়াদের প্রথমে এক জায়গায় একত্রিত করে পোর্ট অব সুদানে নেওয়া হচ্ছে। তারপর সেখান থেকে জাহাজে যাচ্ছে সৌদি আরব।
“প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন সবচেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবহার করার জন্য। আমরা সেখানে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।”
বিরূপ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে জানিয়ে তারেক বলেন, “দূতাবাসে আমরা মাত্র দুজন কর্মকর্তা রয়েছি। দুজনকেই সব কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে কাজে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।
“এর মধ্যেও আমরা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ফিরতে ইচ্ছুক সবাই দেশে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে নেব।”