ভোটকে কেন্দ্র করে যেখানেই অনিয়ম হবে, সেখানেই নির্বাচন কমিশন ‘অ্যাকশনে’ যাবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন এ নির্বাচন কমিশনার।
Published : 03 Jan 2024, 04:16 PM
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে যে পরিস্থিতি দেশে হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি কমিশন চায় না।
এবার ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ’ তৈরি হয়েছে দাবি করে বুধবার নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনী মাঠে নেমেছে। ভোটের মাঠ এখন ইসির নিয়ন্ত্রণে। আশা করি ভোট সুন্দর, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হবে।”
প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনের নির্বাচন বাতিল হওয়ায় ৭ জানুয়ারি দেশে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ হবে। সেদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।
রাশেদা সুলতানা বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে যেখানেই অনিয়ম হবে সেখানেই নির্বাচন কমিশন ‘অ্যাকশনে’ যাবে, প্রয়োজনে সে কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে দেওয়া হবে।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এবার আন্তর্জাতিক অগ্নি পরীক্ষা ঠিক এই সেন্সে না। আসলে এই রকম একটা সেন্স। ইলেকশনটা যদি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় না যায়, ওই সময় নানা রকম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা ভোট হয়েছিল।... তারপরে সেই ইলেককশনটি কিন্তু দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। ইলেকশনটা গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে কিন্তু অল্প দিনে আবারও একটা ইলেকশন হয়ে গেছে।”
সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ভোট বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ বিরোধী দল। তারপরও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা ভোট করে সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি। বিতর্কিত সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি পায় ২৮৯টি আসন।
এরপর সরকার গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের নিয়ম সংবিধানে যুক্ত করে বিএনপি। এরপর ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেয় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১২ জুনের সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়।
আদালতের আদেশে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সে সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ওই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এবারও তারা একই দাবিতে ভোটে অংশ নিচ্ছে না।
বিএনপির বর্জনে ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জাতীয় ও আন্ততর্জাতিক মহলে আলোচনার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মত স্বল্প সময় স্থায়ী নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চায় না ইসি।
রাশেদা সুলতানা বলেন, “আমরা ওইরকম কোনো ইলেকশন করতে চাই না, যেটা নতুন করে দেশকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে। আমরা চাই একটা ইলেকশন হবে, যে সরকার ফর্ম করবে, সেই সরকার স্থায়ী রূপ নেবে। যখনই সরকার অস্থায়ী অবস্থায় চলে যায় দেশ তখন বিপর্যয়ের মধ্যে চলে যায়। এই সেন্সে থেকে হয়ত আমাদের মাথায় এসেছে, আমরা একটা ফেয়ার ইলেকশন করব। আন্তর্জাতিক চাপ বা অন্য কিছু না।”
সর্বমহলে স্বীকৃত হয়- এমন একটি নির্বাচন করার প্রত্যাশা জানিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “সবাইকেই দেখাতে চাই। আমাদের দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেখাতে চাই। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কথাটা আমাদের মাথায় রাখতেই হবে, কারণ আমরা গোটা বিশ্বের একটা অংশ। আমরা মনে করি আমাদের একটা নৈতিক দায়িত্ব একটা ভালো নির্বাচন করা।”