এ বিষয়ক সব তথ্য ও তথ্যসূত্র সংস্থাটির কাছে আছে বলে দাবি সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের।
Published : 26 Dec 2023, 10:39 PM
সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত এক সদস্য ও তার স্ত্রীর বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার তথ্য দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, সেসব কোম্পানির মোট সম্পদ মূল্য দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।
তবে ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি টিআইবি। শুধু সরকার জানতে চাইলে তার নাম এবং এ বিষয়ক সব তথ্য ও তথ্যসূত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
নিজস্ব ‘নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের’ ভিত্তিতে টিআইবির দাবি, “মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও বিদেশে সক্রিয়ভাবে রিয়েল এষ্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছেন।”
রাতে আবারও ওই মন্ত্রীর পরিচয় জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস আছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা যদি আমাদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চায়, তাহলে আমরা তা দেব। প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ সেসব তথ্য শুধু তাদের কাছেই দিব।”
মঙ্গলবার ধানমণ্ডির টিআইবি সেন্টারে ‘নির্বাচনী হলফনামার তথ্যচিত্র: জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি। সেখানে এ বিষয়সহ এবারের নির্বাচনে হলফনামার ভিত্তিতে প্রার্থীদের বিভিন্ন আর্থিক তথ্য প্রকাশ করা হয়।
‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ‘নো ইউর ক্যান্ডিডেট’ ড্যাশবোর্ড উদ্বোধন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের শেষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ওই মন্ত্রীর বিদেশে কোম্পানি থাকার তথ্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর পরিচয় প্রকাশ করেননি।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে। তবে যে ব্যক্তি বা মন্ত্রীর কথা বলছি তা অপ্রকাশিত। তার নামকরণ করা বা প্রকাশ করাটা টিআইবির এখতিয়ারবহির্ভূত। যে কারণে তার নাম প্রকাশ করতে পারছি না আপনাদের কাছে।
“তবে গুরুত্বের সঙ্গে বলছি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ যদি ওই ব্যক্তির নাম জানতে চান তাহলে তা সম্পূর্ণ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব।“
বিদেশ সম্পদ থাকার এ তথ্য ওই মন্ত্রীর হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য পর্যাপ্ত কি-না বা সেগুলো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
“দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায়, টিআইবির প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী, সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই। মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও বিদেশে সক্রিয়ভাবে রিয়েল এষ্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যে সকল কোম্পানির মোট সম্পদ মূল্য প্রায় ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।”
পরে সংস্থাটি সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে বলা হয়, “হলফনামায় উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে মন্ত্রী ও এমপিদের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘হলফনামায় উঠে আসা সকল তথ্যই সঠিক কি-না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা যেভাবে সম্পদের হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে হলফনামায় সম্পদের হিসাব প্রকাশ এক ধরনের দায়সারা গোছের আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে।
“হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা, আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে যে সকল প্রতিষ্ঠানের এ সব বিষয় খতিয়ে দেখার কথা, তারাও এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে।”
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম, সহসমন্বয়ক ও ড্যাশবোর্ড প্রস্তুতকারী রিফাত রহমান এবং কে. এম. রফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি জানায়, প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া আয় ও সম্পদ এবং ঋণ ও দায় বিবরণী কতোটা সঠিক ও পর্যাপ্ত এবং আয় ও সম্পদ কতোটা বৈধ উপায়ে অর্জিত তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকলেও করা হয় না।
সংস্থাটি বলছে, হলফনামায় প্রার্থীরা নিজেদের অর্জিত সম্পদ কতটা দেখিয়েছেন, পুরোটা দেখিয়েছেন কি না কিংবা দেশে বা বিদেশে সম্পদ আহরণের তথ্য গোপন করেছেন কি না- তা যাচাই যেমন অনিবার্য, তেমনি যে আয় ও সম্পদ অর্জনের তথ্য হলফনামা বিশ্লেষণে পাওয়া যাচ্ছে তা বৈধ আয়ের সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ- এসব বিষয় যাচাই করে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কোনো উদ্যোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে টিআইবি উদ্বিগ্ন।
নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও আয়ের উৎস, মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের ও তার নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা এই আট ধরণের তথ্যকে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিআইবি।