গত বছর হিট স্ট্রোকে এক আইনজীবীর মৃত্যুর পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে কালো পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়।
Published : 04 Apr 2024, 09:30 PM
চৈত্রের শেষে তাপ প্রবাহ চলার মধ্যে আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন আলাদা ‘ড্রেস কোড‘ নির্ধারণের জন্য প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করেছেন একদল আইনজীবী।
‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট‘ এর পক্ষে বৃহস্পতিবার ই-মেইলে এ আবেদন পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সর্দার ও সোলায়মান তুষার।
গত বছর এক হিট স্ট্রোকে এক আইনজীবীর মৃত্যুর পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের কালো কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই দিয়েছিল। তবে শীত পড়ার পর ফের কালো গাউন ও কোট পরা শুরু হয়।
এপ্রিলের শুরু থেকে আবার তীব্র গরম পড়েছে একসপ্তাহ ধরে। এই অবস্থায় পোশাক নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে আবার অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির কাছে করা আবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। বছরের বেশিরভাগ সময় উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। আদালতে আইনজীবীদের পরিধানের জন্য সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ রুলস ১৯৭৩ এবং আপিল বিভাগের রুলস ১৯৮৮-তে শীত ও গ্রীষ্মকালে একই ধরনের পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে।
“বর্তমানে প্রচলিত আইনজীবীদের পোশাক মূলত ব্রিটিশ ভাবধারা এবং আবহাওয়া বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। সময়ের পরিবর্তনে এ অঞ্চলের আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হিসেবে পরিগণিত। কিন্তু আইনজীবীদের কল্যাণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবিবেচনায় পোশাকের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।”
আইনজীবী হুমায়ন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারাদেশে আইনজীবীরা প্রতি বছর মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উচ্চমাত্রার গরমে অসহনীয়, অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে নিম্ন এবং উচ্চ আদালতের বিচারকরা একই ধরনের পোশাক পরায় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছেন।“
তিনি বলেন, করোনা মহামারীর সময় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে ড্রেসকোড পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং তাতে আদালতের বিচারকার্য বা আইনজীবীদের পেশাগত কোনো অসুবিধা হয়নি।
“বিষয়টি সুবিবেচনায় নিয়ে আইনজীবী এবং বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ভিন্ন ড্রেসকোড নির্ধারণের আবেদন জানানো হয়।“
২০২১ সালে তালিকাভুক্ত এই আইনজীবীর মৃত্যুর পর পোশাকের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
গত বছরের ১১ মে হিট স্ট্রোকে ঢাকায় এক আইনজীবীর মৃত্যুর দুদিন পর গরমে কালো কোট-গাউনের ‘যন্ত্রণা’ থেকে মুক্তি মেলে আইনজীবীদের।
১৩ মে কালো পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের সব আদালতে পুরুষ বিচারক এবং আইনজীবীরা সাদা ফুল হাতা শার্টের সঙ্গে সাদা নেক ব্যান্ড ও কালো টাই পরবেন। আর নারী আইনজীবীরা সাদা শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ পরে আদালতে যাবেন।
গ্রীষ্ম আসার আগেই এবার তাপমাত্রা ৪০ এর আশেপাশে ঘোরাঘুরির সময় মানুষ যেখানে একটু সহনীয় পরিবেশে থাকার চেষ্টা করছে, তখন আইনজীবীদের জন্য আদালত হয়ে গেছে কঠিন এক জায়গা।
এই গরমে আইনজীবীদের কোট-গাউনে হাঁসফাঁস আর কতদিন?
গরমে কালো কোট-গাউনের ‘যন্ত্রণা’ থেকে রক্ষা আইনজীবীদের
ঢাকার আদালত চত্বরে ‘হিট স্ট্রোকে’ আইনজীবীর মৃত্যু
সেখানে কালো রঙের মোটা একটি কোট পরতে হয় আইনজীবীদের, তার উপর চাপাতে হয় লম্বা কালো গাউন।
বেশিরভাগ আদালতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। সেখানে ব্যাপক ভিড়ের মধ্যে ভারী পোশাকে গরম হয়ে ওঠে আরও অসহনীয়।
গরমের দিন এই কালো পোশাক পাল্টানো নিয়ে আইনজীবীদের এই দাবি নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই তারা গ্রীষ্মে কালো কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন।
পোশাক পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন জেলা আদালত ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণেও হাতে হাত ধরে মানববন্ধন করেন তারা। ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতীক’ এই পোশাক স্বাধীন দেশে চলতে পারে না, এমন যুক্তিও দেখাচ্ছিলেন কেউ কেউ।
ভারতের হাই কোর্ট তীব্র গরমে আইনজীবীদের কালো পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দিয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এক আদেশে আগামী জুন পর্যন্ত এই ছাড় দেওয়ার কথা জানানো হয়।