ঢাকার আদালত চত্বরে ‘হিট স্ট্রোকে’ আইনজীবীর মৃত্যু

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানি শেষ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রো বারের সামনে কালো কোট ও গাউন পরা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে যান সৈয়দ শফিউল ইসলাম আলাউদ্দিন।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2023, 11:54 AM
Updated : 11 May 2023, 11:54 AM

ঢাকায় আদালত এলাকায় তীব্র গরমের মধ্যে ‘হিট স্ট্রোকে’ এক আইনজীবীর মৃত্যুর তথ্য মিলেছে।

তার নাম সৈয়দ শফিউল ইসলাম আলাউদ্দিন। মধ্য তিরিশের শফিউল ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন।

তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। তিনি ২০২১ সালে আইজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানি শেষ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রো বারের সামনে কালো কোট ও গাউন পরা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে যান শফিউল। অন্য একজন আইনজীবী তাকে ধরে ফেলেন।

আইনজীবী মো. ওসমান গনি তখন তাকে রিকশায় তুলে ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিয়ে যান। এ সময় আরও একজন আইনজীবী তাপদাহের শিকার শফিউলকে মাথা ও মুখে পানি ছিটিয়ে দেন।

তাকে দেখে ক্লিনিকের চিকিৎসক বলেন, “এটা গরমের কারণে হয়েছে। এটা হিট স্ট্রোক।”

এরপর সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় পাশের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় এই তরুণ আইনজীবীর।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাক্তারের কাছ থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি শফিউল হিট স্ট্রেকে মারা গেছেন। মাদারীপুরের কালকিনিতে তার গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি।”

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর বর্ণনা

শফিউল আলমকে ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া ওসমান গনি বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মুখে ও মাথায় হালকা পানি দিলাম। এরপর অনেক কষ্টে রিকশায় উঠিয়ে ঢাকা বারের হসপিটালে আনলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, ‘হিট স্ট্রোক’ করেছেন।”

তিনি জানান, তাদের গায়ে কোট ও গাউন দেখে একজন চিকিৎসক বলেন, “আপনারা এই গরমেও এমন পোশাক পরেন!”

ঢাকা বারের হাসপাতালে কিছুক্ষণ সুশ্রুষার পর শফিউল সেদিনের মামলা নিয়ে কথা বলেন ওসমান গণির সঙ্গে।

বিডিনিউজকে ওসমান গণি বলেন, “উনি (শফিউল) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন উনার ফাইল গাউন কোট কোথায়? আমি বললাম, ‘সব আছে আপনি চিন্তা করবেন না।’

“উনি বললেন, আমি জামিন করিয়েছি বেইল বন্ড জমা দেওয়া হয়নি। আমি বললাম, ‘সমস্যা নাই, দিতে পারবেন’।”

এরপর অন্য একজন আইনজীবীকে স্যালাইন আনতে পাঠান ওসমান গনি। শফিউল তখন ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বললে অন্য এক আইনজীবীর সহায়তায় তাকে সেখানে নেওয়া হয়।

ওয়াশরুম থেকে ফেরার পর এই আইনজীবীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তখন তাকে পাশের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা। তার আগেই মারা যান শফিউল।

বিকাল ৪ টার দিকে মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এই আইনজীবীর জানাজা হয়।

আলোচনায় আইনজীবীদের কালো পোশাক

গত কয়েক দিন ধরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে তাপমাত্রায় জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তীব্র গরমের মধ্যেও আইনজীবীদের কালো কোট ও গাউন পরে আদালতে যেতে হয়।

বেশিরভাগ আদালতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। সেখানে ব্যাপক ভিড়ের কারণে আইনজীবীদের বেশ কষ্ট হয়। কিন্তু পোশাকের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি এখনও।

গরমে ড্রেস কোড পরিবর্তনের জন্য ঢাকা আইনজীবী সমিতি এবং দেশের বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লেখা হয়েছে। দুই বছর আগেও এ বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছিল। তবে কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি।

ভারতের হাই কোর্ট তীব্র গরমে আইনজীবীদের কালো পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এক আদেশে আগামী জুন পর্যন্ত এই ছাড় দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

শফিউলের মৃত্যুর পর ঢাকা বারের আইনজীবীরা আবার তাদের পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করেছেন তারা।