আনিসুল হক বলছেন, যারা নতুন আইনটি পড়েননি, তারাই সমালোচনা করছেন।
Published : 08 Aug 2023, 02:55 PM
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বিচারের সময় নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কম সাজা দেওয়া যায় কি না, সেই চেষ্টা করার কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আগে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব। তার কারণ হচ্ছে আইনের অবস্থান হচ্ছে এটা যেসব অপরাধ পুরনো আইনে করা হয়েছে, সেই পুরনো আইনে যে শাস্তি সেই শাস্তি যে অপরাধ করেছে তাকে দিতে আদালত পারে।
“কিন্তু সেইখানে আমরা চিন্তাভাবনা করব, এই আইনের শাস্তির পরিমাণ যেহেতু অনেকাংশে কমানো হয়েছে এবং সেই কমানোটাই সরকারের এবং আইনসভার উদ্দেশ্য, সেই কমানোটা যাতে বাস্তবায়িত হয়ে সেই চেষ্টা করব।”
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করে নতুন একটি আইন করার প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়।
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নামটি বদলে তার বদলে নতুন নাম হবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধিকাংশ ধারা নতুন আইনেও থাকবে। তবে বিতর্কিত বিভিন্ন ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
যেসব ধারা নিয়ে বেশি বিতর্ক ছিল, কয়েকটি ক্ষেত্রে সেগুলোর সাজা কমিয়ে আনা হবে। ‘জামিন অযোগ্য’ কয়েকটি ধারাকে করা হয়েছে ‘জামিন যোগ্য’।
মানহানি মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে রাখা হবে শুধু জরিমানার বিধান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কমানো হবে সাজা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এর আগে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচার যে নতুন আইন পাসের পর ওই আইনের অধীনে চলবে, সে কথা সোমবারই জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ৭ হাজার ১টি বলে সম্প্রতি তিনি সংসদে জানিয়েছিলেন।
দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে।
আইনটি বাতিলের দাবিতে দেশে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হয়েছেন অধিকারকর্মীরা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারও এ আইনের ব্যবহার অবিলম্বে স্থগিত করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের শর্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মন্ত্রিসভায় আইনটি পরিবর্তনের প্রস্তাব পাস হওয়ার পর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস।
বৈঠকের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, “উনি বলেছেন, যে নতুন আইন (সাইবার নিরাপত্তা আইন) করা হয়েছে এটা এখনো সম্পূর্ণভাবে দেখেননি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছেন না। তবে যে পরিবর্তনের কথা শুনেছেন সেটা যদি হয়ে থাকে, তবে তিনি খুশি হবেন।”
সাইবার সিকিউরিট অ্যাক্টের একটি দফার মধ্যে আছে যে এ আইন প্রণয়নের পর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট রহিত হয়ে যাবে; বিষয়টি গোয়েন লুইসকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যে যেসব টেকনিক্যাল ধারাগুলো ছিল, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যেও সেই টেকনিক্যাল ধারাগুলো আছে। সেজন্য আমি সবসময় বলে আসছি এটা পরিবর্তন হয়েছে।
“ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন হয়নি আবার কেউ যদি বলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট রহিত করা হয়েছে সেটাও সম্পূর্ণভাবে ঠিক হবে না। পরিবর্তন হয়েছে এবং পরিবর্তনগুলো এতই বেশি ছিল যে তখন যদি আমরা ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্ট নামটা রাখতাম তাহলে নামটা হত ডিজিটাল সিকিউরিটি সংশোধিত আইন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কতটা বদলাচ্ছে?
“যখন ডিজিটাল আইন পড়তে হত তখন সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা সংশোধনী আইনটাও সঙ্গে রাখতে হত, এটা কনফিউজিং হত। সেজন্য এটাকে সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে নতুন এবং সাইবার নামটা রাখা হয়েছে এটা ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য, সেজন্য এটার নাম সাইবার নিরাপত্তা আইন দেওয়া হয়েছে।”
সাইবার নিরাপত্তা আইনও ‘জনগণের ভোগান্তির কারণ হবে’ বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, “উনারা (বিএনপি) জিনিসটা না পড়ে, যেহেতু উনারা পড়েন নাই, অবশ্যই উনারা বোঝেন নাই বলেই এই কমেন্টটা করেছেন। উনারাও দেখেন, আপনারও (গণমাধ্যমকর্মী) দেখেন, তারপরে যদি আলাপ করতে চান তখন করব।”
আইনজীবী শাহদীন মালিকসহ কয়েকজন আইনজীবী বলেছেন, নতুন আইনে মানুষের হয়রানি ‘কমবে না’ এবং এ আইনে পুলিশকে অবারিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আনিসুল হক বলেন, “উনারা আমাদের কোনো পদক্ষেপই ভালো মনে করেন না। কিন্তু দেশের ভালো হয় আমাদের পদক্ষেপে।”