ধূপখোলায় গ্যাসের আগুনে পুড়েছে তিন দোকান, দগ্ধ শিশুসহ ৯

“দোকানের সামনে গ্যাসের লাইনের পাশে ওয়াসা পানির লাইনের জন্য ড্রেন খুঁড়েছে, সেখানে কাজ চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়।"

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2023, 06:13 AM
Updated : 1 May 2023, 06:13 AM

ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলায় ওয়াসার লাইনের জন্য ড্রেন খোঁড়ার কাজের সময় গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিস্ফোরণ ও আগুন লেগে তিনটি মুদি দোকান পুড়ে গেছে।

রোববার সকালে এ ঘটনায় দুই বছরের এক শিশু এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, সোমবার সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে তাদের কাছে খবর আসে ধূপখোলা বাজার এলাকায় একটি দোতলা ভবনের নিচতলায় আগুন লেগেছে। ওই আগুন নেভাতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে।

“খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করা হয়।“

আগুনে তিনটি দোকান পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি একটি ভবনে ধোঁয়া দেখা গেলেও তা তাৎক্ষণিকভাবে নিভিয়ে ফেলা হয়।

দগ্ধ নয়জনের মধ্যে ৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এবং ৬ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন।

দগ্ধরা হলেন- মুদি দোকানি আব্দুর রহিম (৫০), তার মেয়ে মিম আক্তার (২১), মিমের দুই বছর বয়সী ছেলে মো. আলিফ, মেহেদী হাসান (২৫) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সোহেল (৪৮), আলী হোসেন (৫২), রাশেদ মিয়া (৩২) সাহারা বেগম (৬৫) এবং মিজানুর রহমান (৩২)।

তাদের মধ্যে কেবল আব্দুর রহিমেরই ৪৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে, বাকিদের পোড়া তুলনামূলক কম বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

হাসপাতালে ভর্তি মিম জানান, ধূপখোলা মাছের বাজারের কাছে তার বাবা রহিমের মুদি দোকান এবং সঙ্গে লাগোয়া বাসা। সকালে ছেলেকে নিয়ে বাসাতেই ছিলেন তিনি, আর তার বাবা ছিলেন দোকানে।

“দোকানের সামনে গ্যাসের লাইনের পাশে ওয়াসা পানির লাইনের জন্য ড্রেন খুঁড়েছে, সেখানে কাজ চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। তারপর আমাদের দোকান-ঘরে আগুন লেগে যায়।“

গেণ্ডারিয়া থানার ওসি আবু সাঈদ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ওই এলাকায় বেশ কয়েক দিন ধরে পানির লাইন বসানোর কাজ করছে ওয়াসা। রোববারও তারা কাজ করে।

“ওই কাজের সময় কোনো কারণে গ্যাসের লাইন লিকেজ হয়ে যায়। আজ ওয়াসার কোনো কাজ হচ্ছিল না। যে দোকানটি বেশি পুড়েছে, সেই দোকানের পাশ দিয়ে গ্যাস লাইন গেছে। আমরা ধারণা করছি, গতকালের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে গিয়েছিল ওই দোকানে। সকালে দোকান খোলার পর কোনো কারণে বিস্ফোরণের মত শব্দ করে আগুন ধরে যায়।”

পরে ফায়ার সার্ভিস এসে অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে জানিয়ে তিনি বলেন, “পাশের দুটি দোকানও আগুনে কিছুটা ক্ষতি হয়।”

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রকৌশলী শরীফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়াসার ঠিকাদার একটি বিশেষ ধরনের হাই্ড্রলিক ড্রিল মেশিন দিয়ে এক ম্যানহোল থেকে আরেক ম্যানহোলে পানির পাইপ বসানোর জন্য গর্ত করছিল্। এই কাজ করার সময় এক ইঞ্চি গ্যাস লাইনের পাইপ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।”

যে দোকানটি পুড়েছে, সেই দোকানের সামনে একটি ম্যানহল রয়েছে জানিয়ে শরীফ বলেন, “ছিন্ন অংশ দিয়ে গ্যাস বের হয়ে ম্যানহলে জমা হয়েছিল। দোকান খোলার পর সেখানে কেউ কোনো কারণে আগুন জ্বাললে একটা বিস্ফোরণ হয়ে দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।”

তিতাসের ম্যানেজার (দক্ষিণ) সাবিউল আইয়াল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেন।

ওই এলাকায় কিছু বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে জানিয়ে সাবিউল বলেন, “যাদের গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে তাদের পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। অভিযোগ করার পর আমাদের জানালে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে ওয়াসা বা তাদের ঠিকাদারের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।