মোবাইল সিমের হিসাব করলে এবারের ঈদে তুলনামূলক কম সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার থেকে তিন দিনে সাড়ে ৫৩ লাখের বেশি মোবাইল সিম ঢাকা ছেড়ে দেশের নানা প্রান্তে গেছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
শুক্রবার এক ফেইসবুক পোস্টে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ঢাকায় যাওয়া-আসা মানুষের তথ্য প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান, এই সময়ে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩২ টি সিম ঢাকা ছেড়ে গেছে। বিপরীতে ঢাকায় এসেছে ১৯ লাখ পাঁচ হাজার ৯০২টি।
গত বছর ঈদুল আজহার আগে দুই দিনেই চারটি মোবাইল কোম্পানির প্রায় ৬৬ লাখ সিম রাজধানী ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।
অবশ্য এই সিমের হিসাব করে মানুষের ঢাকা ছাড়ার প্রকৃত হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এটা কোনোভাবেই বাড়িফেরা মানুষের ‘প্রকৃত সংখ্যা’ নয়।
মোবাইল ফোনবিহীন শিশুরা এই হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে ১৪ বছরের কম বয়সীর সংখ্যা মোট নাগরিকের ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
আবার অনেকেই একাধিক সিম ব্যবহার করেন। ফলে ঠিক কত জন ঢাকা ছেড়েছেন এই হিসাবটা পাওয়া যায় না। তবে আগের বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে পার্থক্যটা স্পষ্ট বোঝা যায়।
মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের ঈদুল আযহার আগের কয়েক দিনে ১ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৩ সিমের ঢাকা ছাড়ার তথ্য জানিয়েছিলেন টোলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
ওই বছর ঈদুল ফিতরের আগে চার দিনে ৭৩ লাখেরও বেশি সিম ঢাকার বাইরে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।
এবার ঈদের ছুটির দুটি দিন সরকারি কর্মদিবস পড়লেও সব মিলিয়ে মানুষ ছুটি পেয়েছে পাঁচ দিন। কারণ, ২৭ রোজায় শবে কদরের পর ঈদের ছুটি শুরুর আগে যে কর্মদিবস থাকে, সেটিকে সরকার সাধারণ ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এ কারণে মানুষের ঢাকায় ছাড়ার স্রোত মঙ্গলবার থেকেই তৈরি হয়। আর সেদিন থেকেই মোবাইল সিমের হিসাবটা দিয়েছেন মন্ত্রী।
এবার ঈদযাত্রার মূল স্রোতটা দেখা দেয় বৃহস্পতিবার বিকেল ও রাতে। যাত্রীর চাপে উত্তরবঙ্গমুখী সড়কে দীর্ঘ যানজটও দেখা গেছে এদিন।
মন্ত্রী যে সিমের হিসাব দিয়েছেন, তাতেও এ বিষয়টি স্পষ্ট। সেদিন ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৯ জন সিম ঢাকা ছেড়েছে।
মঙ্গলবার ১২ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮ এবং বুধবার ১৬ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৫ টি সিম ঢাকা ছেড়ে যায়।
এবার সবচেয়ে বেশি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৭টি বাংলালিংকের সিম গেছে ঢাকার বাইরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৭২১টি সিম গেছে রাজধানীর বাইরে। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সিম সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৩০ হাজার ১১৭টি।
সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের সিম সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ১৩৭টি।
এবারের হিসাব দিয়ে আগের বছরের হিসাব অবশ্য টানেননি মন্ত্রী। ফলে কম সিমধারীর ঢাকা ছাড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্যও আসেনি।
এবার ঈদের আগে যে কেনাকাটা হয়েছে, তাতে ব্যবসায়ীরা খুব বেশি খুশি ছিলেন, এমন নয়। রমজান মাসের অর্ধেকটা সময় পর্যন্ত বিপণিবিতানগুলো অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে।
একেবারে শেষ দিকেও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার বেচাকেনা কম। অনলাইন পেজগুলো থেকেও একই তথ্য এসেছে। গয়না, জুতা আর দর্জির দোকানিরাও দিয়েছেন একই তথ্য।
এবার সিমধারীদের ঢাকায় ফেরার সংখ্যাটাও তুলনামূলক বেশি।
এর মধ্যে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৩ টি সিম রাজধানীতে এসেছে।
এরপর বুধবার ৬ লাখ ৩২ হাজার ৫২২ জন এবং বৃহস্পতিবার ৬ লাখ ৫ হাজার ৫৯৭ টি সিম ঢাকায় ঢুকেছে।
ঢাকা ছাড়ার মত ঢাকায় প্রবেশেও অন্য তিন মোবাইল অপারেটরকে ছাড়িয়ে বাংলালিংক। তিন দিনে এই অপারেটরের ১২ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৩ টি সিম ঢুকেছে রাজধানীতে।
গ্রামীণ ফোনের ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৩টি, রবির ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩২টি এবং টেলিটকের ৩০ হাজার ৭৬৪টি সিম ঢাকায় এসেছে এই তিন দিনে।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের হিসাবে, ঢাকার জনসংখ্যা এখন সোয়া দুই কোটির মত। এর মধ্যে কোটির বেশি মানুষ ঈদে অন্য কোনো জেলায় যান বলে ধারণা করা হত। তবে প্রকৃত সংখ্যাটি কখনও জানা যায় না।
আরও পড়ুন: